শুক্রবার (৩১ জুলাই) নীলফামারীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ০৪-এ হাজির করা হলে তিনি এ স্বীকারোক্তি দেন। পুলিশ জানায়, গত ২৭ জুলাই বিকেলে সংবাদ পেয়ে পুলিশ কিশোরগঞ্জ থানার কিশোরগঞ্জ ইউনিয়নের অন্তর্গত মধ্য রাজীব ব্রাহ্মণপাড়ায় মুশফিরাত জাহান নিঝুম (১৯) নামে এক তরুণীর মরদেহ উদ্ধার করে।
মরদেহের সুরতহাল প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমানের নির্দেশে সৈয়দপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পালের নেতৃত্বে কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আজিজ ওই মৃত্যুর ব্যাপারে আরও নিবিড়ভাবে অনুসন্ধান করে বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকে।
এরই মধ্যে মৃত ওই তরুণীর বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা দায়ের করলে কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ওই তরুণীর প্রাক্তন কথিত ‘প্রেমিক’ জুয়েল রানাকে বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটায় মধ্য রাজীব চেংমারী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতার জুয়েল জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ২০১৭-২০১৮ সালে তার সঙ্গে মুশফিরাত জাহান নিঝুমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাদের সম্পর্ক থাকা অবস্থায় নিঝুম তৌফিক নামে তার এক বন্ধুর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। বিষয়টি জুয়েল জানতে পারলে নিঝুম জুয়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে।
নিঝুম মোবাইল সিম পরিবর্তন করে নতুন সিম নিয়ে চলতি বছরের জুন মাসের দিকে পুনরায় জুয়েলের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করে। জুয়েল নিঝুমকে বলে যে, সে তাকে ভুলতে পারতেছে না। নিঝুমকে জুয়েল বলে কবিরাজের মাধ্যমে তুকতাকের করে তাদের সম্পর্ক ছিন্ন না করলে সে তাকে ভুলতে পারবে না।
নিঝুম জুয়েলের কথায় সরল মনে সায় দেয়। জুয়েল সাত মসজিদের পানি এবং তিনটি মন্দিরের মাটি জোগাড় করে নিঝুমকে দেয়। মাটিগুলো তাদের সুপারি বাগানের চারপাশে এবং পানি নিঝুমের শোবার ঘরের চার ওয়ালে ছিটিয়ে দিতে বলে। নিঝুম জুয়েলের কথামতো তাই করে।
এরপর জুয়েল তাকে দেখা করার পাঁয়তারা করে ফন্দি আঁটে যে, তাকে নিয়ে কবিরাজের সঙ্গে দেখা করতে হবে। তাদের দুজনের পরামর্শে গত ২৬ জুলাই রাতে দেখা করার কথা হয়। জুয়েল ওইদিন বিকেলে নিঝুমের বাড়ির পাশে গিয়ে ৬টি ঘুমের ট্যাবলেট দিয়ে আসে এবং সেগুলো তার বাড়ির সদস্যদের খাওয়াতে বলে যেন রাতে তাদের দেখা হওয়া সহজ হয়।
নিঝুম জুয়েলের কথা মতো ঘুমের ট্যাবলেটগুলো পরিবারের সদস্যদের খাইয়ে দিয়ে রাত দেড়টার দিকে তাদের বসতবাড়ির পূর্ব পাশের সুপারি বাগানে জুয়েলের সঙ্গে দেখা করতে যায়। নিঝুম কবিরাজের কথা জিজ্ঞেস করতেই জুয়েল তৌফিকের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করে এবং তৌফিকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বলে।
নিঝুম তার কথায় রাজি না হওয়ায় কৌশলে গলা চেপে ধরে নিঝুমকে হত্যা করে লাশ সুপারি বাগান সংলগ্ন পুকুরে ফেলে নিঃশব্দে চলে যায়। রটিয়ে দেওয়া হয় সে পানিতে ডুবে মারা গেছে।