সোমবার ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   সোমবার ১৩ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ



আধুনিকতায় হারিয়ে যাচ্ছে বাকেরগঞ্জের মৃৎশিল্প
প্রকাশ: ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:৪৬ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

আধুনিকতায় হারিয়ে যাচ্ছে বাকেরগঞ্জের মৃৎশিল্প

সংবাদদাতা, বাকেরগঞ্জ, বরিশাল

দেশের প্রাচীনতম শিল্পের মধ্যে মৃৎশিল্প একটি। তৎকালীন সময়ে মৃৎশিল্পের কারিগরেরা কুমার বা পাল নামে বংশ পরিচয় লাভ করেন। যুগ যুগ ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত কারিগররা তাদের গভীর ভালোবাসা আর মমতা দিয়ে সুনিপুন হাতের বিভিন্ন কারুকাজের মাধ্যমে মাটি দিয়ে তৈরি করেন নানা তৈজসপত্র। কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্পটি দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে।

আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে মাটির তৈরি এসব জিনিসের বদলে বাজার দখল করছে প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল ও সিরামিকসহ অন্য সব সামগ্রী। তাই আধুনিক প্রযুক্তির তৈজসপত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মাটির তৈরি অনেক পণ্যই হারিয়ে গেছে। কিন্তু মাটির তৈরি কিছু তৈজসপত্র এখনো পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। শহরবাসীর দালান-কোটা সাজাতে মাটির তৈরি নানা পট-পটারি, ফুলদানি ও বাহারি মাটির হাঁড়ির কদর রয়েছে এখনো।

জানা যায়, গেল ২৫ বছর আগেও বাকেরগঞ্জ উপজেলায় মৃৎশিল্পের দাপট ও কদর দুটোই ছিল। তখন উপজেলার কলসকাঠি ও নিয়ামতি ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার পরিবার মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে অত্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করত। ওই সময় উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাটির তৈরি এসব তৈজসপত্র সরবরাহ করা হত।

কিন্তু বর্তমানে এ উপজেলায় প্রায় পাঁচ শত পরিবার মৃৎশিল্পের কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। আগের মতো চাহিদা আর পারিশ্রমিকের ন্যায্যমূল্য না থাকায় এ পেশার লোকজন অত্যন্ত দুঃখ-দুর্দশা আর হতাশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এ পেশায় কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় অন্য পেশায় তেমন খাপ খাওয়াতে পারছেন না তারা। কম লাভ জেনেও শুধু পারিশ্রমিকের আসায় বাপ-দাদার পুরানো ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো মাটি দিয়ে তৈরি করছেন বিভিন্ন ধরনের হাঁড়ি, সরা, কলস, বাসন, মুড়ি ভাজার খোলা, কোলা, ভাটি, পিঠা তৈরির খাঁজ, জালের কাঠি, মাটির ব্যাংক ও জলকান্দা ইত্যাদি।

বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠী ও নিয়ামতি ইউনিয়নের মহেশপুর ৬ নং ওয়ার্ড,খাস মহেশপুর,ডাল মারা, রামনগর গ্রামগুলোর কুমারপল্লীতে ঢুকলেই চোখে পড়ে তাদের কষ্টের জীবনযাত্রা। গোটা পল্লীতেই যেন লেগে আছে শত কষ্ট আর অভাবের ছোঁয়া।

মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। মাটির সামগ্রীতে মানুষের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখের অনুভূতি, প্রেম-বিরহের নানা দৃশ্যপট, মনোমুগ্ধকর ছবি হাতের স্পর্শে ফুটিয়ে তুলতেন শিল্পীরা। অথচ আজ উপজেলা বিভিন্ন এলাকায় এখন পুঁজির অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে এখানকার মৃৎশিল্প। এই পেশায় এখন ভর করেছে অভাব-অনটন। মেলা-পার্বনেও তেমন চাহিদা নেই মাটির তৈজসপত্রের। তবে কিছু হোটেল-মিষ্টির দোকানে এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজায় এখনও প্রয়োজন হয় মাটির সামগ্রীর। পহেলা বৈশাখে মাটির সরাইয়ে (সানকি) তে পান্তাভাত খাওয়ার রীতিও চালু আছে।

একটা সময় ছিল বাংলা নববর্ষকে ঘিরে নির্ঘুম ব্যস্ত সময় পার করতেন বাকেরগঞ্জের মৃৎশিল্পীরা। পহেলা বৈশাখ বাঙালির নববর্ষ। নববর্ষ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে বসে বর্ষবরণ মেলা। সেই মেলায় চাহিদা থাকে নানা রকমের খেলনা, মাটির জিনিসপত্রের। মেলাকে দৃষ্টিনন্দন করতে মৃৎশিল্পীরা নিজের হাতে নিপুণ কারুকাজে মাটি দিয়ে তৈরি করতেন শিশুদের জন্য রকমারি পুতুল, ফুলদানি, রকমারি ফল, হাঁড়ি, কড়াই, ব্যাংক, বাসন, থালা, বাটি, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, টিয়া, ময়না, ময়ূর, মোরগ, খরগোশ, হাঁস, কলস, ঘটি, চুলা, ফুলের টবসহ মাটির বিভিন্ন তৈজসপত্র।

উপজেলার নিয়ামতি এলাকায় মৃৎশিল্পের সঙ্গে এখনো জড়িত রয়েছে প্রায় ৪ শত পরিবার। তারা বিভিন্ন উৎসবসহ মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এখনো। তাই এখানে পুরুষ মৃৎশিল্পীর পাশাপাশি নারীরাও সমানতালে কাজ করছেন।

নিয়ামতির মহেশপুরের মৃত রাধাশ্যাম পালের পুত্র বিমল পাল জানান, প্রায় দুইশত বছর আগে থেকে বাপ দাদার আমল হতেই মৃৎশিল্পীর কাজ চলে আসছে। বর্তমানে বাজারে চাহিদা কম পুঁজি সংকট মহাজনের কাছ থেকে চড়া মূল্যে লোন নিয়ে এখন আর আগের মত ব্যবসা থাকেনা। বছর শেষে মহাজনকে লোন দিয়ে নিজেদের সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

রামনগর গ্রামের শ্যামল পালের পুত্র মৃৎশিল্পী স্বপন পাল জানান, বর্ষা মৌসুমে আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়ি। কাঁচামাল রোদে শুকাতে হয়। বারবার বৃষ্টি আসাতে তেমন শুকানো যায় না। বাজারও থাকে খুব খারাপ তেমন বেচাকেনাও হয় না। অর্ধ হারে অনাহারে আমাদের জীবন চলে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো জানান, কুমোররা কীভাবে বেঁচে আছে, তারা কী তাদের পারিশ্রমিক অনুযায়ী ন্যায্যমূল্য পায় কিনা এ খোঁজখবর রাখার কেউ নেই। কেউ জানতেও চান না আমাদের সুখ-দুঃখ, সুবিধা-অসুবিধার কথা।

সরকার সংশ্লিষ্টরা যদি এ পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে এখনই যথাযথ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে একসময় মৃৎশিল্পটি বন্ধ হয়ে যাবে। মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী

ইমেইল: nomanibsl@gmail.com

মোবাইল: 01713799669 / 01712596354

 

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।

© বিডি ২৪ নিউজ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  টেইলার্সের কারখানা থেকে শ্রমিকের লাশ উদ্ধার   পটুয়াখালীতে র‍্যাবের গাড়ি ও বাসের সংঘর্ষে নিহত তিন   বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের হাজিপুর সেতুতে নির্ধারিত টোলের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়   মেহেন্দীগঞ্জে জেলেদের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ,নিখোঁজ জেলের লাশ উদ্ধার   বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছর পর বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্তে আনন্দে নগরবাসী   বরিশালের ৬টি আসনে হেভিওয়েটের ছড়াছড়ি, থাকছে বিদ্রোহীর শঙ্কা   বরগুনায় সমাজসেবা উপপরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ   বিএনপি নেতা লিটনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা   পটুয়াখালীতে ‎৩৫তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা   সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে ইলিশ শিকারের দায়ে ১১ জেলের কারাদণ্ড   ভোলা উপকূলে ‘মা’ ইলিশ রক্ষায় রেড অ্যালার্ট, জেলেদের ঋণের কিস্তি নেয়ায় নিষেধাজ্ঞা   বরিশালে ভুয়া জেলে কার্ডের ছড়াছড়ি,প্রকৃত জেলেরা দুর্দশায়   বরিশালে উচ্ছেদ হলো আদালতের ন্যায়কুঞ্জে গড়া হোটেল   আমতলীতে ১৬ শিক্ষক-কর্মচারীর মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ১৫   বরিশালে বিএনপি নেতাসহ দুই ভাইয়ের ধর্ষণে এক গৃহপরিচারিকা অন্ত:সত্ত্বা   ময়মনসিংহের তারাকান্দায় ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা   খুলনায় গুলি করে এক যুবককে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা   বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাত ধ্বংস করতে জাল নোট তৈরি, আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা ফাঁস!   খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারায় সহিংসতার ঘটনায় তিন মামলা   টেকনাফ থেকে নারী-শিশুসহ ২১ জনকে জীবিত উদ্ধার
Translate »