
বিডি ২৪ নিউজ অনলাইন: গণপূর্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ইএম) আশরাফুল হকের বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি ১১ জন কর্মকর্তার কাছ থেকে জনপ্রতি ২০ লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়ে প্রধান প্রকৌশলীর মাধ্যমে অবৈধভাবে সুপারিনটেনডিং ইঞ্জিনিয়ার পদে পদোন্নতির চেষ্টা করছেন। যাদের মধ্যে অনেকেই সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ নন, অথচ নিয়ম ভেঙে তাদের পদোন্নতির তদবির চলছে বলে জানা গেছে।
২০১৩ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আশরাফুল হক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বঙ্গভবনে দায়িত্বে ছিলেন। সে সময় থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। পরে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তিনি সংসদ ভবন এলাকায় নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সংসদে দায়িত্বকালীন সময়েও তিনি নানাবিধ অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগে পরবর্তীতে তাকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং তার স্থলাভিষিক্ত হন প্রকৌশলী সমীরণ মিস্ত্রি।
প্রতিবার কোনো ওয়ার্কিং ডিভিশনে দায়িত্ব পেলেই আশরাফুল হক নানাভাবে অর্থ লেনদেন ও লুটপাটে জড়িয়ে পড়েন বলে সহকর্মীরা অভিযোগ করেছেন। পিএন্ডডি বিভাগে দায়িত্ব পালনকালে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে গণপূর্তের তালিকাভুক্ত করার বিনিময়ে তিনি মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া তিনি নিয়মিত টেন্ডারে ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন আদায় করতেন বলে অভিযোগ আছে। টেন্ডার পাস করাতে ২ শতাংশ থেকে শুরু করে ভুল ধরার অজুহাতে ৫ শতাংশ পর্যন্ত ঘুষ গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই পদ্ধতিতে ঠিকাদারদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ সংগ্রহের এক ধরনের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন আশরাফুল হক।
দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে তিনি নাকি দুই ছেলেকে কানাডায় পাঠিয়েছেন এবং বিদেশে নিয়মিতভাবে অর্থ পাচার করছেন। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তিনি রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে নিজের অবস্থান শক্ত করেছেন। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিস্থলের বৈদ্যুতিক কাজের পরিকল্পনাও তিনি নিজে হাতে করেছিলেন, যেন উচ্চপর্যায়ে সুনজর পান।
দুদকে ঠিকাদারের অভিযোগ:
গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ কাজের মাধ্যমে নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ অর্জন করছেন বলে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ দায়ের করেছেন মো. খলিলুর ইসলাম নামে এক ঠিকাদার।ঠিকাদার খলিলুরের অভিযোগ, আশরাফুল আলম কারাগারে থাকা বিতর্কিত ঠিকাদার জি কে শামীম সিন্ডিকেটের সদস্য। জি কে শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল আলমের দুর্নীতির বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার পর তার দুর্নীতি ও অবৈধ কার্যকলাপ আরও বেড়েছে।
দুদক বরাবর লিখিত অভিযোগে ঠিকাদার খলিলুর ইসলাম বলেন, ‘আশরাফুল আলম প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার পর বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন মহলকে ম্যানেজ করে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবৈধ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে তার ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে করা তদন্ত ব্যহত হবে বলে আমি আশঙ্কা করছি। তাকে প্রধান প্রকৌশলী পদে বহাল রেখে তদন্ত করলে সুষ্ঠু তদন্ত না হওয়ারও আশঙ্কা করছি।
লিখিত অভিযোগে মো. খলিলুর ইসলাম আরও বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক প্রকোশলী থেকে পদোন্নতি পাওয়ার কিছুদিন আগে দরপত্র আহবানের মাধ্যমে বিভিন্ন ঠিকাদারকে প্রায় এক শ’ কোটি টাকার কাজ দিয়ে কমিশন তুলে নেন তিনি। ফান্ডে অর্থ না থাকায় সেই ঠিকাদাররা এখন পড়েছেন চরম বিপাকে।’ এছাড়া প্রতিটি প্রকল্পে ১৫ শতাংশ কমিশন নিতেন বলেও অভিযোগ ঠিকাদার খলিলুরের।
ঘুষ নিয়ে এবং ‘ঘনিষ্ঠ’ ঠিকাদারদের কাজ দেওয়ার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করার অভিযোগ আগেই উঠেছে মো. আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে, নামে-বেনামে দেশেই সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন, বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশেও পাচার করেছেন।
অভ্যন্তরীণভাবে অনেক কর্মকর্তা তার অনিয়ম সম্পর্কে জানেন, কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলে অসংখ্য অভিযোগ থাকলেও এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।