গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ব্যস্ত নিজের পদ রক্ষায়,হাত ছাড়া হচ্ছে প্রকল্প
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর, ২০২৫, ২:৫৫ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ
বিডি ২৪ অনলাইন নিউজ: চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের অবকাঠামো নির্মাণ ও আনুসঙ্গিক সুবিধাদী নিশ্চিত করন প্রকল্পের স্থাপনা, ইলেক্ট্রিক্যাল ও কাঠের যাবতীয় কাজ করতো গণপূর্ত অধিদপ্তর। তবে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় একাজ গণপূর্তকে বাদ দিয়ে কাজগুলো করানো হচ্ছে বন শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশনের মাধ্যমে। একই ভাবে সারা দেশে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র নির্মাণ কাজও গণপূর্তের হাত থেকে চলে যাচ্ছে। সাড়ে চার শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম, জয়পুরহাট ও কিশোরগঞ্জ শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র নির্মাণ কাজ ডিপিএম এর মাধ্যমে সেনা কল্যাণ সংস্থাকে দেওয়া হচ্ছে। ফলে গণপূর্তের ব্যর্থতার কারনে কোন দরপত্র ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির (ডিপিএম) মাধ্যমে কাজ দিলে সরকারের প্রায় ৪৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে বলে সংস্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
একাধিক কর্মকর্তা জানান, চলতি দায়িত্বে থাকা প্রধান প্রকৌশলী কথিত পীর মোহাম্মদ শামীম আখতারের বিরুদ্ধে জুলাই গণহত্যা মামলা এবং একাধিক তদন্তে দূর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার পর দুদক তদন্ত শুরু করায় তা ধামাচাপা দিতে তিনি ব্যস্ত থাকায় অধিদপ্তর থেকে একের পর এক কাজ চলে গেলেও তা ফেরাতে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন না। কারণ তিনি কোন মতে দুদক এর মামলা ও মন্ত্রনালয়ের বিভাগীয় মামলা থেকে নিজেকে রক্ষা করে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় টিকে থাকার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ডিসেম্বরে তিনি অবসরে চলে যাবেন। তাই অবসরের আগে যাতে মন্ত্রনালয় বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন না করে তিনি সেই তদ্বির নিয়েই বেশি ব্যস্ত রয়েছেন বলে একাধিক প্রকৌশলী অভিযোগ করেছেন। তাছাড়া তিনি তার ব্যাচে মেধা তালিকায় ৭ম স্থানে থাকার কারনে চলতি দায়িত্ব থেকে প্রধান প্রকৌশলীও হতে পারবেন না বিধায় তার উপরে থাকা কেউ যাতে এই চেয়ারে বসতে না পারে সেজন্য মন্ত্রনালয়কে নানাভাবে ম্যানেজ করেছেন এই মুজিববাদী প্রকৌশলী।
সুত্র জানায়, শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র নির্মান প্রকল্প বাস্তবায়ন করতো গণপূর্ত অধিদপ্তর। গত ২৯ মে সেনা কল্যান সংস্থা থেকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয়ের কাছে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আবেদন জানানো হলে উপদেষ্টা এবং সচিব দ্রত পদক্ষেপ গ্রহনের নির্দেশ দেন। ফলে তিন জেলার এই প্রকল্পের ৪৫০ কোটি টাকার কাজ সরাসরি কার্যাদেশ দেওয়া হবে। কোন দরপত্র আহবান না করায় সরকার রাজস্ব হারাবে। পিপিআর অনুযায়ী উম্মুক্ত দরপত্র আহবান করা হলে ১০ শতাংশ লেসে কার্যাদেশ দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ গণপূর্তের ব্যর্থতার কারনে সরকারকে এই কাজ ৪৫ কোটি টাকায় বেশি দরে করতে হবে।
একই ভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রায় ১২ শ’ কোটি টাকার প্রকল্প হাত ছাড়া হয়েছে গণপূর্তের। সরকারি একের পর এক সংস্থা গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে তাদের নির্মাণ ও রক্ষনাবেক্ষন কাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন প্রধান প্রকৌশলী এসব কাজ রক্ষার চেয়ে নিজের চেয়ার রক্ষার তদবির নিয়েই দীর্ঘ দিন ধরে ব্যস্ত রয়েছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বিসিএস এর মেধা তালিকায় থাকা আশরাফুল আলমকে প্রধান প্রকৌশলী বানালেও তার বাড়ি বগুড়ায় হওয়ায় কিছু দিন পর তাকে সরিয়ে তালিকার ৭ নম্বরে থাকা শামীম আখতারকে প্রধান প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়। এর নেপথ্যের মূল কারিগর ছিলেন তৎকালীন সচিব ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধি শহীদুল্লাহ্ খন্দকার। কথিত পীর শামীম আখতার হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) মহাপরিচালক থাকাকালে সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের মুর্তি স্থাপন করে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের সুদৃষ্টিতে আসেন।
একাধিক তদন্তে এই কথিত পীর শামীম আখতারের দূর্নীতির অভিযোগ প্রমানিত হওয়ার পরও তা ধামাচাপা দিয়ে বহাল তবিয়তে থাকা প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতারের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়। অন্যদিকে শামীম আখতারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন।
গত ১৭ মে দুদক হাউজিং এন্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সটিটিউটকে শামীম আখতারের দুর্নীতির সুষ্ট তদন্তের স্বার্থে সকল তথ্য ও রেকর্ডপত্র চেয়ে একটি চিঠি ইস্যু করে।
এছাড়া ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রামপুরায় সোহান শাহ নামে এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে ২১ অক্টোবর ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরবিয়া খানমের আদালতে মামলা দায়ের করেন নিহতের মা সুফিয়া বেগম। শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগকারীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন এবং রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এজাহার হিসেবে নথিবদ্ধ করতে বলেন। আদালতের আদেশে ঢাকা মহানগরীর রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। মামলা নং ১৮, তারিখ-১৯ অক্টোবর ২০২৪ইং। ওই মামলার এজাহারভুক্ত ৫৪ নং আসামী গণপূর্তের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী মো: শামীম আখতার। হত্যা মামলার আসামী হওয়ার পরও তিনি বহাল তবিয়তে দায়িত্বে রয়েছেন। প্রধান প্রকৌশলী তদবিরের মাধ্যমে বিষয়গুলো ধামা চাপা দিতে সক্ষম হয়েছেন।
নিজের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার। সম্প্রতি জুলাই জাদুঘরের নির্মাণ প্রকল্পের চারশ’ কোটি টাকার ক্রয় প্রক্রিয়াকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে অনুমোদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। যাতে সরকারের বিপুল অর্থের অপচয় হচ্ছে। যা নিয়ে ইতিমধ্যে টান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।