বুধবার ১২ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ২৭শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   বুধবার ১২ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ


গণপূর্ত ই-এম বিভাগ-৩ : প্রকৌশলী আবদুল খালেক ১০ লাখ টাকা ঘুষে কাজ দিচ্ছেন
প্রকাশ: ২১ অক্টোবর, ২০২৫, ৩:৩৮ পূর্বাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

গণপূর্ত ই-এম বিভাগ-৩ : প্রকৌশলী আবদুল খালেক ১০ লাখ টাকা ঘুষে কাজ দিচ্ছেন

বিডি ২৪ অনলাইন নিউজ: গণপূর্ত অধিদপ্তরের ইলেকট্রিক্যাল-মেকানিক্যাল (ই-এম) বিভাগ-৩ এ সম্প্রতি প্রকাশিত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আবদুল খালেক আকন নগদ ১০ লাখ টাকা গ্রহণ করছেন। ভিডিওতে একজন ঠিকাদার স্পষ্টভাবে বলেন, “দ্যার, আপনি ১০ লাখ চেয়েছিলেন, ১০ লাখই দিয়েছি স্যার। এখানেতো আহামরি কোনো টাকার মাল নাই স্যার। মালটা আপনি পৌছে দিয়েন। আপনি তো আপনারটা বুঝে পেয়েছেন।” ঘটনার তদন্তে জানা গেছে, খালেক আকন দীর্ঘদিন ধরে দ্বৈরাচারের দোসর হিসেবে পরিচিত। তার কাছ থেকে ঘুষ না দিলে ঠিকাদাররা কোন কাজ পেতে পারে না। এই অনিয়মের ফলে প্রকল্প অনুমোদন, বিল স্বীকার ও মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘুষ বাণিজ্য চলে। অনেক সময় ঠিকাদাররা কাজ না করেও বিল উত্তলনের অভিযোগও পাওয়া যায়। এই ধরনের কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র একজন কর্মকর্তার নয়, বরং পুরো দপ্তরের নীতি ও স্বচ্ছতার ওপর প্রশ্ন তোলে। ঠিকাদারদের একটি অংশ দাবি করেছেন, নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম. ময়নুল হক ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী খালেক আকনকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তারা দুর্নীতি দমন কমিশনায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযুক্ত খালেক আকন সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আমি যা করি, তা নির্বাহী প্রকৌশলী স্যারের নির্দেশে করি। স্যার যা বলেছে, ঠিকাদার মনসের সঙ্গে সেইভাবে কথা হয়েছে। এর বাইরে কিছু নয়। এটা ঘুষের টাকা নয়, পুরনো মালামাল ক্রয়ের টাকা। সরকারি টাকা চালান রশিদের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা দিতে হয়। হাতে নিলাম কেন? নগদ টাকা না নিলে ব্যাংকে জমা দিবো কিভাবে।” তিনি আরও বলেন, যে ঠিকাদার কাজ পেয়েছেন, সে বর্তমানে দেশে নেই, বিদেশে আছেন। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে গনপূর্তের ই-এম বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী এস. এম. ময়নুল হকের ফোন রিসিভ করা হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হুমায়রও ফোনে বা ক্ষুদে বার্তায় যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এমন ঘটনা শুধু এক বা দুই কর্মকর্তা নয়, বরং পুরো প্রশাসনিক ব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রশ্ন উত্থাপন করে। তাদের মতে, প্রকল্প অনুমোদন ও বিল উত্তোলনের সময় যথাযথ তদারকি না থাকলে রাষ্ট্রীয় সম্পদের অনিয়ম বৃদ্ধি পায়। ঠিকাদাররা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না। তারা আরও জানান, ঠিকাদারদের মধ্যে এ ধরনের অনিয়মের কারণে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি ক্রমেই তীব্র হচ্ছে। “আমরা চাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের দুর্নীতি করতে সাহস না পায়,” একজন ঠিকাদার সংবাদমাধ্যমকে জানান। ঘটনার ভিডিও ফুটেজটি, যা ঠিকাদারের এক প্রতিনিধি গোপনভাবে ধারণ করেছেন, তা প্রমাণ হিসেবে দৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে, খালেক আকন কেবল নগদ টাকা গ্রহণ করছেন না, বরং ঠিকাদারদের কাজ পাওয়ার শর্ত নির্ধারণেও সরাসরি অংশ নিচ্ছেন। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমন ধরনের কর্মকাণ্ড রাষ্ট্রীয় নীতি, তদারকি ও স্বচ্ছতা ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানায়। দেশের নাগরিক ও ঠিকাদারদের জন্য এটি একটি সতর্কবার্তা, যে প্রশাসনিক দুর্নীতি প্রেক্ষাপটে প্রকল্পের কার্যকারিতা ও সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চয়তা পায় না। প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে ঠিকাদাররা আইনগত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের লিখিত অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, নির্বাহী ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিযোগে উল্লেখ আছে, “দূর্নীতির ফলে প্রকল্প বিল উত্তোলন, অনুমোদন ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নেই। এর জন্য সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি অপরিহার্য।” উল্লেখযোগ্যভাবে, খালেক আকন বলেন, “আপনি ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বললে জানতে পারবেন, যে টাকা দিয়েছেন তার নাম মনস। আমার সঙ্গে সরাসরি কোনো বিষয় নেই। তবে সংবাদমাধ্যমে সবাই আমার নাম উল্লেখ করছে।” এই ঘটনাটি পুনরায় প্রমাণ করছে, গণপূর্তের ই-এম বিভাগে ঘুষ ও দুর্নীতির প্রবণতা কতটা প্রগাঢ়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশাসনিক তদারকি ও স্বচ্ছতার অভাব এই ধরনের অনিয়মকে উৎসাহিত করে। ঘটনার পর, অনেক ঠিকাদার দাবি করেছেন যে, ভবিষ্যতে এই ধরনের কর্মকাণ্ড রোধ করতে দপ্তরভিত্তিক এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। তাদের মতে, শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের শাস্তি নয়, পুরো ব্যবস্থার রিফর্ম প্রয়োজন। একজন সাবেক উচ্চপদস্থ প্রকৌশলী বলেন, “যতদিন পর্যন্ত প্রশাসনিক তদারকি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে না, ততদিন এই ধরনের অনিয়ম বন্ধ হবে না। দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়া প্রকল্প এবং বিল প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয় না।” এই প্রশ্নটি রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় ও দুর্নীতির শৃঙ্খলাপূর্ণ প্রমাণ। ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা আরও জানিয়েছেন, শুধুমাত্র ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করলেই কাজ হবে না, প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। গণপূর্তের এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে সামাজিক ও নাগরিক সচেতনতার অভাবও ধরা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এমন পরিস্থিতিতে দুর্নীতি দমন কমিশনা ও সংশ্লিষ্ট তদারকির দায়িত্ব আরো জোরদার করা জরুরি। শেষ পর্যন্ত, ভিডিও ফুটেজ এবং সংশ্লিষ্টদের বক্তব্যের আলোকে দেখা যাচ্ছে, ই-এম বিভাগ-৩ তে প্রশাসনিক দুর্নীতি একটি নিয়মিত ঘটনা। এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও প্রকল্প কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।




এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী

ইমেইল: nomanibsl@gmail.com

মোবাইল: 01713799669 / 01712596354

 

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।

© বিডি ২৪ নিউজ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  বরিশালে বিসিক উদ্যোক্তা মেলায় স্টল বরাদ্দে অনিয়ম   বরিশাল কর অফিসের রতন মোল্লার হাতে আলাদিনের চেরাগ,একই কর্মস্থলে ১০ বছর   বরিশালের ১৬টি আসনে বিএনপির প্রার্থী যারা   বরিশালে অপসাংবাদিকতা বন্ধে ঐক্যবদ্ধ ৩৫ সংগঠন   আটকে আছে ১৭শ কিলোমিটার সড়ক মেরামত ও উন্নয়ন কাজ   বরিশালের রাঙামাটি নদী থেকে হাত-পা বাঁধা যুবকের লাশ উদ্ধার   সারদা পুলিশ একাডেমি থেকে লাপাত্তা ডিআইজি এহসানউল্লাহ   বরিশালের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকের বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা ঘুস নিয়ে বদলীর অভিযোগ   বরিশালে ফরচুন মিজানের ভাই রবিউল আটক   দালাইলামা মডেলে হাসিনাকে নিয়ে নানা পরিকল্পনা দিল্লির   শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর বরিশালে বাস্তবায়ন করছে ৭শ’ কোটি টাকার প্রকল্প   বরিশালের আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আব্দুল কাদেরের বিরুদ্ধে বদলী বাণিজ্যের অভিযোগ   চলন্ত বিআরটিসি বাসে অগ্নিকাণ্ড,সব যাত্রী নিরাপদে   কাজ ফেলে পালিয়েছে মাফিয়া আমু’র ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার   জেলের স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে হিজলা মৎস্য কর্মকর্তার ঘুষ গ্রহণ   বরগুনার কৃষি কর্মকর্তার অফিসই বাসা!   বরিশালে ভাই-ভাই দ্বন্দ্বে বড়ভাইকে মারধর   বাগেরহাটে বিএনপি নেতা ওয়াহিদুজ্জামান দিপুর নেতিবাচক কর্মকাণ্ড   অর্থ কেলেঙ্কারীতে আটক হওয়া সাইদুর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে   বাসের ধাক্কায় বিএনপি নেতা নাসিম আকন নিহত
Translate »