
বিডি ২৪ নিউজ অনলাইন: ফরিদপুর গণপর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুজ্জামান সবুজের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম -দুর্নীতির অভিযোগ। পিরোজপুর, এবং পূর্বে মুন্সিগঞ্জ ও নরসিংদীতে থাকা অবস্থায় তিনি বেছে বেছে আ’লীগ ছাত্রলীগ যুবলীগ ঠিকাদার গণকেই কাজ পাইয়ে দিতেন এবং দিচ্ছেন। এমনকি জুলাই আন্দোলনের পরে পিরোজপুরে অসংখ্য আওয়ামী ঠিকাদারকে কাজ পাইযে দিয়ে তাদেরকে আর্থিকভাবে পূনঃ বাসন করার পাশাপাশি নিজেও ১০% ক্ষেত্রবিশেষ আরো বেশী পার্সেন্টেজ আদায় করে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের অর্থ। তথ্য সংশ্লিস্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি ফরিদপুরে বদলী হয়ে আসার পূর্বে চলতি অর্থবছরেও স্বৈরাচার ঠিকাদারদের বেশ কয়েকটি কাজ পাইয়ে দিয়ে এসেছেন মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোঃ ইকবাল জমাদ্দারের অনুকূলে ২,৩৫,৯১,৫৯২/-টাকা চুক্তিমূল্যে পিরোজপুর পুলিশ লাইনের পুরুষ ব্যরাকের রেক্টোফিটিং কাজ; ৫৮,২৮,৫১১/- টাকা চুক্তিমূল্যে মেসার্স আরিন এন্টারপ্রাইজকে জেলা প্রশাসকের রেকর্ডরুমের মেরামত এবং নবায়ন কাজ; ৬৬,৮৬,৬৩৮/- টাকা চুক্তিমূল্যে জেলা আনসার ও ভিডিপি অফিসের অস্ত্রাগার ভবনের ২য় তলা নির্মাণ কাজটি মেসার্স মাহফুজ ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠানকে; ৪১,৮৭,৯০৭/- টাকা চুক্তিমূল্যে জেলা প্রশাসকের দপ্তরের রেকর্ডরুমের বাহিরের বিদ্যুতায়ন কাজটি ঢাকার ফায়ার ট্রেড নামক ঠিকাদারকে পাইয়ে দিযেছেন প্রকৌশলী খায়রুজ্জামান সবুজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দু’জন স্থানীয় ঠিকাদার জানায়, জেলা প্রশাসকের রেকর্ডরুমের ১ কোটি ৮ লক্ষ ৭৪ হাজার ৫শ’ ৪৫ টাকা চুক্তিমূল্যের মেরামত রক্ষণাবেক্ষণ কাজ দুটো খায়রুজ্জামান নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে করিয়েছেন উল্লেখিত দুই প্রতিষ্ঠানের নামে টেন্ডার করিয়ে মোটা অংকের টাকা দুই ঠিকাদারের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন।
এছাড়াও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পিরোজপুর গণপূর্ত বিভাগে ২১,৯৫,০১৭/- টাকা বরাদ্দে জেলা প্রশাসকের দপ্তরের সামনের দিকে বাহিরের পুরাতন প্লাস্টার ফেলে দিয়ে নতুনভাবে প্লাষ্টারসহ সকল ধরণের সিভিল ও স্যানিটারী কাজ: ২৩,৫০,৬০১/- টাকা চুক্তিমূল্যে জেলা কারাগারে ১৫০ কেভি ট্রান্সফরমার স্থাপনসহ ডুয়েলসোর্স লাইন সাবমারজিবল পাম্প স্থাপন সহকারে সকল ধরণের সাধারণ বৈদ্যুতিক মেরামত কাজটি এস এ এন্টারপ্রাইজকে দেন। ২৪,১৩,৮৬৮/- টাকা চুক্তিমূল্যে মঠবাড়িয়া উপজেলা কোর্ট বিল্ডীংয়ের ইমারজেন্সি সিভিল স্যানিটারী মেরামত কাজ; ২৩,১৫, ৬৯৯/- টাকা চুক্তিমূল্যে জেলা প্রশাসকের বাসভবন পুকুরের প্যালিসাইডিং কাজ; ১৯,৩০,০৪৬/- টাকা চুক্তিমূল্যে গণপূর্ত বিভাগীয় অফিস প্রাঙ্গনে নবায়ন কাজসহ অভ্যন্তরীণ ড্রেন নির্মাণ কাজ; ১৭,৯৬,৪৪৫/-টাকা চুক্তিমূল্যে এসপি অফিসে পুলিশ সাবস্টেশন নির্মাণ কাজটি বাবর এসোসিয়েটসকে পাইয়ে দেওয়াসহ এ রকম অসংখ্য কাজ আ’লীগের ঠিকাদারদের পাইয়ে দিয়ে তিনি মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। সেখানে থাকতে সদর মঠবাড়িয়াসহ ৪টি মডেল মসজিদের টেন্ডারে ঘাপলা করে ৬০ কোটি টাকার ওয়ার্ক অর্ডার দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিভিশনটির একজন মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলী জানিয়েছেন।
অপরদিকে মুন্সিগঞ্জে থাকতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭৭,৩৫, ২৩০/ টাকা চুক্তিমূল্যে বাউন্ডারীওয়াল অভ্যন্তরীণ সড়ক ও পার্কিং নির্মাণ কাজটি মেসার্স মুমু এন্টারপ্রাইজ, ১,৯৪,২৫,৬৬৪/- টাকা চুক্তিমূল্যে টংগীবাড়ি মডেল মসজিদের বাউন্ডারীওয়াল অবশিষ্ট সাজ-সজ্জার কাজ আরবরিকালচার রেইনওয়াটার হার্ভেস্টিংসহ আনুসাঙ্গিক কাজ রত্না এন্টারপ্রাইজকে দেওয়া হয় এর পরও একই প্রতিষ্ঠানকে ১,৪৮,৫৬,৬৬৫/- টাকা চুক্তিমূল্যে জেলা আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ে ২তলা ভিতসহ ১তলা ভবন নির্মাণ কাজ দেন। ৩২,৪০,০০৭/- টাকা চুক্তিমূল্যে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালের ডক্টরস্ চেম্বারে টাইলস্ স্যানিটারী ফিটিংস এ্যালুমিনিয়াম ফলস্ সিলিং প্রতিস্থাপনসহ মেরামত ও আধুনিকায়ন কাজটি মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্স নামক প্রতিষ্ঠানকে; ২০২২-২৩ অর্থবছরে গজারিয়া উপজেলায় কোস্টগার্ড অফিস নির্মাণ প্রকল্পে বাউন্ডারীওয়াল ও মাস্টার ড্রেনের অবশিস্ট নির্মাণ কাজটি রফিক কনস্ট্রাকশন কোং লিঃ’কে; একই প্রকল্পে ৩,৮২,৭৯,৪৯৬/- টাকা চুক্তিমূল্যে আরসিসি ক্যাবল ট্রেন্স নির্মাণ কাজটি মেসার্স রত্না এন্টারপ্রাইজ ও মুমু এন্টারপ্রাইজ জেভিকে; একই অর্থবছরে ৪৭,৩২,৩৫০/ টাকা চুক্তিমূল্যে জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রঙ্গনে ন্যায়কুঞ্জ স্থাপণ কাজটি মুমু এন্টারপ্রাইজকে; ৯৮,২১,৪৭৯/- চুক্তিমূল্যে কোভিড ১৯ প্রকল্পে মুন্সিগঞ্জ সদর হাসপাতালে পিসিআর ল্যাব স্থাপন কাজটি পাপ্পু এন্টারপ্রাইজকে পাইয়ে দেওয়া হয় মোটা অংকের পার্সেন্টেজের বিনিময়ে। এছাড়াও গজারিয়ায় কোস্টগার্ড সেন্টার স্থাপণ প্রকল্প, ভবেরচর হাইওয়ে থানার ভার্টিকেল এক্সটেনশন, জেলা এনএসআই ভবন, মুন্সিগঞ্জ টিটিসিসহ বিভিন্ন স্থাপনার নির্মাণ কাজে প্রকৌশলগত ব্যাপক জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে প্রায় কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ রয়েছে প্রকৌশলী খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, মুন্সিগঞ্জ ও নরসিংদীতে থাকতে এলটিএম জালিয়াতি করে বেশীরভাগ টেন্ডার আইডিতে ১/২টি সিডিউল ফেলা হতো আবার কোন ক্ষেত্রে ১০/১২/২০ জনের মধ্যে মাত্র ১/২জনকে রেসপন্স করে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন এই প্রকৌশলী।
দুর্নীতির মহা নায়ক এই প্রকৌশলী ফ্যাসিস্ট আ’লীগের নিবেদিত কর্মীর মত আ’লীগের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে ১৭ সেপ্টেম্বর’২৪ তারিখে মুন্সীগঞ্জ গণপূর্ত থেকে পিরোজপুরে বদলী করা হয় তাকে। আ’লীগের একনিষ্ঠ কর্মকর্তা হওয়ায় সব সময়ই ছিলেন গুরুত্ব পুর্ণ জেলায়। মুন্সীগঞ্জের পূর্বে ছিলেন নরসিংদী গণপূর্তে। ৫-আগষ্টের পটপরিবর্তের পর খায়রুজ্জামান নিজেকে বিএনপিপন্থী হিসেবে প্রকাশের ব্যর্থ চেস্টা চালান। এদিকে পিরোজপুর থেকে ফরিদপুরে খায়রুজ্জামানের বদলীর খবরে নিরীহ ঠিকাদারগণ খুশি হয়েছেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিন সরকারের সময়ে গণপূর্তের দাপুটে প্রকৌশলীদের অন্যতম এই প্রকৌশলী খায়রুজ্জামান। ফ্যাসিবাদের দোসর এই কর্মকর্তাকে বদলি করা হলেও তার বিরুদ্ধে আইনী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। নেয়া হয়নি তার পাহাড়সম সম্পদের হিসাব। পতিত সরকারের সময়ে এই প্রকৌশলী নিজ অফিসে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ এবং তার পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে কমিশন বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। একাধিক ঠিকাদারগণ জানিয়েছেন,তাকে শুধুমাত্র এক জায়গা থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। দুর্নীতি অনিয়মের মাস্টারমাইন্ড হয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বিলাশবহুল এপার্টমেন্টসহ নামে-বেনামে অগাধ ধন-সম্পদের মালিক হয়েছেন এই পূর্ত প্রকৌশলী।