
বিডি ২৪ নিউজ অনলাইন: অবশেষে পদন্নোতি পেলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের আস্থাভাজন গণপূর্ত অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কায়কোবাদ। গত ২১ অক্টোবর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এই কর্মকর্তাকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থেকে ইএম বিভাগের চলতি দায়িত্বে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে পদন্নোতি দেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কায়কোবাদ ইএম বিভাগে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী থাকা অবস্থায় সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন। বিগত সবকারের মন্ত্রী এমপিদের আস্থাভাজন কর্মকর্তা হিসেবে তার যথেষ্ট পরিচিতি রয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী ও সচিবের সাথে ছিল তার গভীর সখ্য সম্পর্ক। তাদের সহায়তা নিয়ে তিনি দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ টাকার মালিক হয়েছেন। নিজের ও শ্মশুরবাড়ি এলাকায় এবং ঢাকায় রয়েছে তার নামে-বেনামে একাধিক প্লট ও ফ্ল্যাট। এই কর্মকর্তার দেশের বাইরেও রয়েছে সেকেন্ড হোম। সংশ্লিষ্ট একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, অধিদপতরের প্রধান প্রকৌশলী শামিম আকতারের ঘণিষ্টজন তিনি। আগে থেকেই তিনি শামিম আকতারের মুরিদ হওয়ার সুবাদে ঘনিষ্টতার কারণ হিসেবেও সূত্রটি নিশ্চিত করেছে। শামিম আকতারের মুরিদ হলে অধিপ্তরের যে কেউ আলাদাভাবে সুবিধা ভোগ করতে পারেন। সূত্রটি আরো জানায়, অধিদপ্তরে একটি কথার প্রচলন রয়েছে যে, প্রধান প্রকৌশলী ঘুষ, দুর্নীতি পছন্দ করেন না। কিন্তু আসলে তা নয়, তিনি সপ্তাহে দুদিন তার নারায়নগঞ্জের দরবার শরীফে বসে মুরিদ ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের সাথে কমিশন ভাগ-বাটোয়ারা করেন। যেটাকে উনি দান হিসেবে ধরে নেন বলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। শামিমের এরকমই একজন ঘনিষ্ঠজন কায়কোবাদ। যিনি সবসময় প্রধান প্রকৌশলীকে খুশি রেখেছেন তার একনিষ্ঠ মুরিদ সেজে। তার এই পদন্নোতির পেছনে শামিম আকতারের অনেক বড় অবদান রয়েছে বলেও এাধকিক সূত্রে জানা গেছে। পদন্নোতির ক্ষেত্রে ৪ জনের নামের তালিকা দিয়ে অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর নিয়ম থাকলেও প্রধান প্রকৌশলী শামিম আকতার শুুধু কায়কোবাদের একার নামে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। একই ব্যাচের অপর কর্মকর্তা ইএম সার্কেল-৩ এর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মাহাবুবুল হক চৌধুরীর নামও পাঠানো হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটা শুধু নিয়ম লঙ্ঘণই নয় বলা যেতে পারে একধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। মন্ত্রণালয়ের সচিব তার পদন্নোতি বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনিও উপরি চাপে বাধ্য হয়ে তাকে পদন্নোতি দিয়েছেন। ফ্যাসিবাদের সহযোগী ও কুয়েট ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। ৫ আগস্টের পরে তিনি নিজেকে জামায়াত ঘরানার হিসেবে প্রচার করেন।
উপদেষ্টাদের কেউই জানেন না কায়কোবাদের অতীত ইতিহাস। ফলে তারা সহজেই ম্যানেজ হয়ে গেছেন। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর প্রশাসক থেকে সর্বত্র নানা পরিবর্তন হলেও গণপূর্ত অধিদপ্তরে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফ্যাসিবাদের দোসর শামীম যেভাবে বহাল তবিয়তে রয়েছেন, ঠিক তেমনি কায়কোবাদকেও পদোন্নতির জন্য জোর তৎপরতা চালিয়েছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী মো. কায়কোবাদ পদোন্নতি পেতে গত দুই মাস ধরে নানা চেষ্টা ও তদ্বির করে আসছেন। যার ফলে তিনি ঠিকমত অফিসও করেননি। সূত্র আরো জানিয়েছে, গণপূর্তের প্রকৌশলী কায়কোবাদ ঘুষ, দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের পসরা খুলে বসেছিলেন তার দপ্তরে। ফ্যাসিবাদের শাসনামলের সুবিধাভোগী ও দুর্নীতিলব্দ টাকা বিনিয়োগ করেছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার জন্য।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের ই-এম সার্কেল-২ এর এই প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর নাম ভাঙ্গিয়ে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। নিয়োগ-বদলী ও পদোন্নতি ছাড়াও অনিয়ম এবং দুর্নীতির খবর যাতে ফাঁস না হয়, সেজন্য তার নেতৃত্বে একটি নিদিষ্ট সিন্ডিকেট নির্বাহী প্রকৌশলীদের নিকট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। অনিয়ম ও দুর্নীতির কারনে হঠাৎই আশরাফুল আলমকে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। সিন্ডিকেটের কোটি কোটি টাকা রয়ে যায় কায়কোবাদের কাছে। এর মধ্যে একজন জুনিয়র প্রকৌশলীরও ৮০ লাখ টাকা ছিল বলে তিনি দাবি করেছেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীরা সর্বোচ্চ গ্রেড-৩ ভুক্ত কর্মকর্তা। সে হিসেবে বর্তমানে বাংলাদেশে কার্যকর থাকা সরকারি বেতন কাঠামো (জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫) অনুযায়ী, গ্রেড-৩ এর মূল বেতন ৫৬ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত হয়। তবে, প্রস্তাবিত নতুন জাতীয় বেতন স্কেলে গ্রেড-৩ এর বেতন ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অর্থাৎ তিনি সর্বোচ্চ ৭৪ হাজার ৪শ’ টাকা পেয়ে থাকেন। যা দিয়ে বর্তমান বাজারে চলা মুশকিল হলেও আলাদীনের চেরাগের মতো এই কর্মকর্তার রয়েছে বিপুল বিত্ত-বৈভব। যা একজন কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা ব্যাক্তির সম্পদের সঙ্গে কোনভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
দুর্নীতি দমন কমিশন তার ঘরের পাশের এই দুর্নীতির বিষয়ে মোটেই আগ্রহী নয়। জানা গেছে, সেখান থেকে ছাড়পত্র আনতেও না-কি অর্ধকোটি টাকা খরচ করেছেন তিনি। প্রশ্ন থেকেই যায়, টাকার বিনিময়েই কী তিনি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হয়ে যাচ্ছেন না-কি পদটি তার কাছে বিক্রি করা হচ্ছে? বিক্রির এই ভাগ-বাটোয়ারায় গণপূর্ত উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর নাম বার বার সামনে চলে আসছে। মানবাধিকারকর্মীর আড়ালে তার গণপূর্ত ব্যবসা বেশ রমরমাই বলা চলে।
মো. কায়কোবাদের বিরুদ্ধে দেশে বিদেশে তার ও পরিবারের সদস্যদের নামে বেনামে বিপুল পরিমান সম্পদ অর্জনের গুঞ্জন রয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের বিলাস বহুল ফ্ল্যাটের যে দাম তা তার সারাজীবনের বেতনের চেয়ে বেশি। ঢাকার ধামরাইতে তার একটি ১০ তলা ফাউন্ডেশন ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। তার গ্রামের বাড়ী শেরপুরে রয়েছে নামে বেনামে অঢেল সম্পদ। পরিবারের ব্যবহারের জন্য রয়েছে লেটেস্ট মডেলের গাড়ী। তার সার্কেলের সকল কাজের উপর ৪ থেকে ৫ শতাংশ হারে টাকা কমিশন নিয়ে প্রাক্কলন পাসের অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য গণপূর্ত অধিদপ্তরে এই হারকে স্বাভাবিকই মনে করা হয়।