|
ফ্যাসিস্ট ফরহাদ আহম্মেদের নিয়ন্ত্রণে বিসিকের গুরুত্বপূর্ণ সব পদ
|
|
![]() বিডি ২৪ নিউজ অনলাইন: আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে অদৃশ্য ক্ষমতা বলে ‘বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন‘ (বিসিক) এ সরাসরি ৪র্থ গ্রেডে নিয়োগ পান ড. মোঃ ফরহাদ আহম্মেদ। ফ্যাসিবাদীর মদদপুষ্ট এই কর্মকর্তা একাধারে বিসিকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব, আবার তিনি বিভাগীয় নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটি (ডিপিসি-০১) এর সদস্য, আবার তিনি বিসিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ, আবার বিসিকের পরিকল্পনা বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার, আবার এই কর্মকর্তাই বিসিকের লেদার সেল-এর প্রধান, আবার তিনি সিরোটসি ট্রাস্টের এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর। একাই বিসিকের সব পদের অধিকারী তিনি। যোগ্যবান অন্য কর্মকর্তা থাকলেও বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন বিসিকের অলিখিত চেয়ারম্যান হয়ে দাঁড়িয়েছে ড. মোঃ ফরহাদ আহম্মেদ। অদৃশ্য ক্ষমতা বলে ড. ফরহাদ বিসিক প্রধান কার্যালয়ে আসেন আর এক এক করে বিসিকের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট-এর পরবর্তী সময়েও আগের ন্যায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিসিক সূত্রে জানা গেছে, বিসিকের পরিকল্পনা বিভাগের দায়িত্ব নেয়ার পর হতে এ পর্যন্ত বিসিকের প্রায় নতুন কোনো প্রকল্প পাশ হয়নি। পরিকল্পনা বিভাগের দায়িত্ব নেয়ার পর হতে শুধু কোটি কোটি টাকার ফিজিবিলিটি স্টাডি করা হয়। কিন্তু কোনো প্রকল্প পাশ হয় না। এসব ফিজিবিলিটি স্টাডির নামে সে বিসিকের ও সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাটে অভিযোগ উঠেছে। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি মোঃ ফরহাদ আহম্মেদ, বিসিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে প্রধান অনুষদ সদস্য (গ্রেড ০৪) পদে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি বিসিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রধান অর্থাৎ, অধ্যক্ষ (গ্রেড ০৩) পদ সহ বিসিকের পরিকল্পনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (গ্রেড ০৩) পদ দুইটিকে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। ড. মোঃ ফরহাদ আহম্মেদ-এর মূল পদ মহাব্যবস্থাপক/সমমানের না হওয়া সত্ত্বেও তিনি বিভাগীয় নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটি (ডিপিসি-০১) এর সদস্য পদে রয়েছে। বিসিক আইনের ১০.১ (ছ) ধারায় উল্লেখ রয়েছে যে, চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত কর্পোরেশনের একজন কর্মকর্তা, যিনি পরিচালনা পর্ষদের সদস্য-সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। অদৃশ্য ক্ষমতাবলে ড. মোঃ ফরহাদ আহম্মেদ এই বিসিকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিবের দায়িত্বও পেয়েছেন। কুটির শিল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ দুস্থ মহিলাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে গঠিত একটি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হলো সিরোটসি ট্রাস্ট। বিসিকের মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা সিরোটসি ট্রাস্টের এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর হয়ে থাকেন। কিন্তু এই সিরোটসি ট্রাস্টের এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর এর পদও ড. মোঃ ফরহাদ আহম্মেদ-এর দখলে থেকে গডফাদারের খ্যাতি অর্জন করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সূত্র জানায়, বিসিকের নিয়োগের সময় লিখিত পরীক্ষায় ফেল করেছিলেন ড. মোঃ ফরহাদ আহম্মেদ। পরে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষের মাধ্যমে সরাসরি ৪র্থ গ্রেডে নিয়োগ পেয়েছিলেন। এই ডক্টর ফরহাদ বিসিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে নিয়োগ পেয়েছিলেন প্রধান অনুষদ সদস্য পদে। বিসিক ট্রেনিং ইনস্টিটিউট একটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। সেখানে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাই প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্যই সেখানে কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখান থেকে বিসিক প্রধান কার্যালয় বা অন্য কার্যালয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ না থাকলেও ফ্যাসিবাদী সরকারের ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই ড. ফরহাদ বিসিক প্রধান কার্যালয়ে আসেন। এরপর এক এক করে বিসিকের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে নেয়। ড. ফরহাদ আহমেদ আর বিসিকের পরিচালক প্রশাসন মো: খায়রুজ্জামানকে ব্যবহার করে বিসিকে বদলি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, পদোন্নতি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য, আউটসোর্সিং শ্রমিক নিয়োগ বাণিজ্য, দৈনিকভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ বাণিজ্য, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বাণিজ্য, ফিজিবিলিটি স্টাডি বাণিজ্য, শিল্পনগরী থেকে চাঁদা ও কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ব্ল্যাকমেইল করে চাঁদা আদায়সহ আরও নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আর এসব কর্মকাণ্ডকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বিসিক কর্তৃপক্ষ। প্রশাসন ক্যাডারের অতিরিক্ত সচিব বিসিকের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকলেও তিনি যেন এই ড. ফরহাদ এর হাতের পুতুল। নিয়মানুযায়ী, ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ড. মোঃ ফরহাদ আহম্মেদ প্রধান অনুষদ সদস্য (গ্রেড ০৪) যোগদান করায় বিসিক প্রবিধান মোতাবেক ২০২৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তিনি ৩য় গ্রেডে পদোন্নতির জন্য যোগ্য হবেন। বিধি মোতাবেক, বিভাগীয় নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটি (ডিপিসি-০১) এর সুপারিশক্রমে বিসিক পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে বিসিকের সকল কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী ২০২৬ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি ড. মোঃ ফরহাদ আহম্মেদ-এর পদোন্নতিও হবে ডিপিসি-০১ এর সুপারিশ ও পর্ষদের অনুমোদনক্রমে। কিন্তু প্রহসনের বিষয় হলো ড. মোঃ ফরহাদ আহম্মেদ নিজে একদিকে ডিপিসি-০১ এর সদস্য, অন্যদিকে তিনিই বিসিক পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব। অর্থাৎ ড. মোঃ ফরহাদ আহম্মেদ নিজেই ডিপিসি-০১ এর সদস্য হিসেবে নিজের পদোন্নতির জন্য নিজেকে সুপারিশ করবেন, আর বিসিক পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব হিসেবে নিজের পদোন্নতির সুপারিশ নিজেই অনুমোদন করবেন। বিষয়টিতে অনেকেই বলছেন, ফ্যাসিজম। ফ্যসিষ্ট আওয়ামী সরকারের দোসর এই ফ্যসিষ্ট কর্মকর্তার কাছে বিসিক কর্তৃপক্ষ যেন এখনও অসহায়। যেন বিসিককে ধ্বংসের তাণ্ডবলীলায় মেতেছেন এই ড. ফরহাদ, আর সেই লীলা খেলায় নেচে চলেছেন বিসিক কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে বিসিকে প্রায় ১৮০ জন আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগ, ১৫০ জন দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ ও রাজস্ব খাতের প্রায় ৫০০ কর্মকর্তা/কর্মচারীর নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান। এই নিয়োগকে কেন্দ্র করে কোটি টাকার বাণিজ্য করার পায়তারায় আছেন বিসিকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সচিব ও বিভাগীয় নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটি (ডিপিসি-০১) এর সদস্য এই ডক্টর ফরহাদ। ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়েও দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এই কর্মকর্তা। তার বাড়ি বগুড়া হওয়ায় প্রকাশ্যে অনিয়ম দুর্নীতি করেও পার পেয়ে যাচ্ছেন ফ্যসিষ্ট আওয়ামী সরকারের দোসর এই কর্মকর্তা। উপরোক্ত বিষয়ে ড. মোঃ ফরহাদ আহম্মেদের মুঠোফোনে কল দিলে রিসিভ করেন তার স্ত্রী। জানতে চাইলে বলেন, তার স্বামী অফিসিয়াল নিয়ম মেনে বর্তমানে চায়না দেশে রয়েছেন এবং আগামী ২৮ তারিখ দেশে ফিরবেন। বিসিকের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিসিকের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব পদই ফ্যাসিস্ট ফরহাদ আহম্মেদের নিয়ন্ত্রণে এটা সবাই জানে। এমনকি যে কেউ খোঁজ নিলেও এর প্রমাণ মিলবে। |