ঢাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার চললেও এরইমধ্যে প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে বরিশালের ২১ আসনে বিএনপির প্রার্থী। তবে এখনই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হচ্ছে না কিছুই। কেননা তফশিল ঘোষণার পরও বদলে যেতে পারে মনোনয়নের এই সিদ্ধান্ত। যে কারণে মনোনয়ন দাখিলের ঠিক আগ মুহূর্তে ঘোষণা হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা। এভাবে আগেভাগে প্রার্থী চূড়ান্ত করার কারণ হিসাবে ভোটের মাঠে জামায়াতে ইসলামীর তৎপরতার কথা বলছেন অনেকে। একক প্রার্থী ঘোষণা করে বহু আগে থেকেই প্রচারণায় আছে জামায়াত। অন্যদিকে মনোনয়ন দ্বন্দ্বে ক্ষত-বিক্ষত অবস্থা বিএনপির। প্রার্থী চূড়ান্ত না হলে ঐক্য ফিরবে না-এমন ভাবনা থেকেই তালিকা চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত।
বরিশাল অঞ্চলের ৬ জেলার ২১ আসনে এবার বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন প্রায় সাড়ে ৩শ নেতা। তবে চাইলেই যে ডাক পাওয়া যায় না তার প্রমাণ ঢাকায় মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার। ৮-১০ জন করে মনোনয়ন চাইলেও আসনপ্রতি ২-৩ জনের বেশি নেতাকে ডাকেনি গুলশান অফিস। অবশ্য ডাক পাওয়া না পাওয়া এবার আর গুরুত্বপূর্ণ নয় বিএনপির মনোনয়নে। স্থানীয় রাজনীতিতে অবদান আর আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা দেখেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দলটি। এক্ষেত্রে সবার আগে দেখা হচ্ছে মনোনয়ন প্রার্থীদের পূর্ব ইতিহাস, নির্বাচনি এলাকায় পরিচিত এবং জনপ্রিয়তার বিষয়টি। দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি নানা মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে তথ্য। সেসব তথ্যের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত হচ্ছে মনোনয়ন।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে মোটামুটি চূড়ান্ত জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সরফুদ্দিন সান্টু। তবে স্বাস্থ্যগত কিংবা দুর্নীতির মামলার কারণে তাকে নিয়ে জটিলতা হলে কপাল খুলতে পারে কাজী দুলাল হোসেন, রওনাকুল ইসলাম টিপু, লায়ন আকতার সেন্টু অথবা সাইফ মাহমুদ জুয়েলের। বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে চূড়ান্ত হিসাবে নাম শোনা যাচ্ছে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. জয়নুল আবেদীনের। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমানও আছেন লড়াইয়ে। বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান রয়েছেন আলোচনার শীর্ষে। এছাড়া গুলশান অফিসে সাক্ষাৎকার দিয়ে এসেছেন সাবেক এমপি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ। বরিশাল-৫ (সদর) আসনে সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ৫ বারের সাবেক এমপি অ্যাড. মজিবর রহমান ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমতউল্লাহ। এছাড়া গুলশান অফিসে সাক্ষাৎকার দিয়ে এসেছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সদস্য সচিব আবুল কালাম শাহিন ও মহানগর বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা নাসরিন। বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে মোটামুটি চূড়ান্ত সাবেক এমপি জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হোসেন। এখানে কেন্দ্রের ডাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ডা. শহিদ হাসান ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম রাজন।
ঝালকাঠী-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে মাঠে আছেন দলের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল , নিউইয়র্ক বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আজম সৈকতসহ কয়েকজন। ঝালকাঠী-২ (নলছিটি-ঝালকাঠী) আসনে দলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু ও সাবেক এমপি ইলেন ভুট্টোর নাম আলোচনায় আছে।
পিরোজপুর-১ (জিয়ানগর-সদর-নাজিরপুর) আসনে মনোনয়নের আলোচনায় শীর্ষে আছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম খান। এছাড়া কেন্দ্রের ডাকে গুলশান অফিসে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এলিজা জামান, জেলার সদস্য সচিব সাইদুল ইসলাম কিসমত ও সদ্য সাবেক আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন। তবে জোট প্রশ্নে আসনটি জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দারকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-স্বরূপকাঠী) আসনে মাহমুদ হোসাইন ভিপি মাহমুদ অথবা ফকরুল আলম পাবেন মনোনয়ন। এছাড়া মনোনয়ন চাইছেন লাভলু গাজী, সুমন মঞ্জুর, আলবিরুনী সৈকত। পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে মোটামুটি চূড়ান্ত রুহুল আমিন দুলাল। বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে তালিকার শীর্ষে আছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম মোল্লা। এছাড়া ঢাকায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন যুগ্ম আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির শাহিন, কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ উজ জামান মামুন। বরগুনা-২ (বামনা-বেতাগী-পাথরঘাটা) আসনে চূড়ান্ত প্রার্থী সাবেক এমপি দলের ভাইস চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মনি।
পটুয়াখালী-১ (সদর-দুমকি-মীর্জাগঞ্জ) আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি স্নেহাংশু সরকার কুট্টি অথবা সাবেক মন্ত্রী দলের ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী পাচ্ছেন মনোনয়ন। এখানে মনোনয়নের লাইনে থাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মজিবর রহমান টোটন ও সাবেক পৌর মেয়র মুস্তাক আহম্মেদ পিনু গুলশান অফিসে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে দলের কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন অথবা সাবেক এমপি শহিদুল আলম তালুকদার পাচ্ছেন মনোনয়ন। মাঠে আছেন ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদারসহ কয়েকজন। পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনে মোটামুটি চূড়ান্ত জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনের মনোনয়ন। তবে জোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি প্রশ্নে এই আসনটি গণঅধিকার পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক নুরুল হক নুরকে দেওয়া হতে পারে। পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনে মোটামুটি চূড়ান্ত দলের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন। ভোলা-১ (সদর) আসনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম নবী আলমগীর অথবা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হায়দার আলী লেনিন পেতে পারেন মনোনয়ন। এছাড়া আলোচনায় আছেন জেলা সদস্য সচিব রাইসুল আলম। ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) ও ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদিন) আসনে মোটামুটি চূড়ান্ত জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি হাফিজ ইব্রাহিম ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ। ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনে যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম নয়ন অথবা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি নাজিমউদ্দিন আলম পাচ্ছেন মনোনয়ন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, দলীয় মনোনয়ন প্রশ্নে ৫ আগস্টের পর সক্রিয় হওয়া নেতাদের আমলে নিচ্ছে না দল। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রিয়তা আর ক্লিন ইমেজের প্রতি। বরিশালের ২১ আসনের মধ্যে ১৮টির মনোনয়ন মোটামুটি চূড়ান্ত হলেও ৩টি আসনের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি হাইকমান্ড। এরমধ্যে পটুয়াখালী-১ ও পটুয়াখালী-৩সহ বরিশালের একটি আসন রয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের যাচাই বাছাই চলছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী কেন্দ্র থেকে সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে। সব চূড়ান্ত হয়ে গেছে এটা বলা যাবে না। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তবে এটুকু বলতে পারি, তফশিল ঘোষণার পর মনোনয়ন প্রত্যাহারের পূর্ব এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া।