কিছুদিন পর পর মানুষের মনে একটা ক্ষোভ উথলে উঠে যে, চিকিৎসকের কাছ থেকে রোগ নির্ণয়ের জন্য যে ইনভেস্টিগেশন দেওয়া হয়েছে সেটা আবার দেখানোর জন্য ভিজিট দেওয়া লাগবে কেন?
প্রশ্ন হলো—ইনভেস্টিগেশন কেন দেয়া হয়?
রোগীর নানান রকমের উপসর্গ থেকে প্রথমে চার-পাঁচটা রোগের একটা ছোট্ট তালিকা তৈরি করা হয়। সেটা থেকে একটা রোগকে বেছে নেওয়ার জন্য ইনভেস্টিগেশন।
আবার হাজার হাজার ইনভেস্টিগেশনের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় ইনভেস্টিগেশনের যে ছোট্ট তালিকা তৈরি করা হয়, সেটাতেও ডাক্তারদের একটা জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন পড়ে।
ইনভেস্টিগেশনের ফলাফলের উপর নির্ভর করে রোগ নির্ণয় করা হবে এবং ঠিক মতো ওষুধ দেওয়া হবে।
সার্জারির ক্ষেত্রে রিপোর্ট দেখার পরে একাধিক রকমের বিকল্প থেকে একটা নির্দিষ্ট সার্জারিকে বেছে নেয়া হয়। অর্থাৎ এটাই দাঁড়ালো যে, রিপোর্ট দেখা মানে শুধু রিপোর্টের উপর হাত বুলানো নয়, চোখ বুলানোও নয়। বরং ইনভেস্টিগেশন থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে রোগীকে পরিপূর্ণ চিকিৎসা দেয়ার একটা ধাপ মাত্র।
যদি রিপোর্টে চোখ বুলানোটাই সার ছিল তাহলে তো ইনভেস্টিগেশন দেখারই দরকার পড়তো না। ওগুলো করার পর রোগীর হাতে দিলেই রোগীর রোগ ভালো হয়ে যেত। এবং সে ক্ষেত্রে টাকা দেয়ার কথা নাও ভাবা যেতে পারত। কিন্তু পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, ব্যাপারটা তা নয়।
যদি কোন ডাক্তার টাকা না নেন, তাহলে সেটা তাঁর ব্যাপার। কিন্তু তিনি যদি ইনভেস্টিগেশন দেখার জন্য টাকা নেন, তাহলে ওটাকে কোনমতেই দোষ দেয়া যায় না।
যুক্তরাজ্যে আমরা কি প্র্যাকটিস করি, সেটা একটু বলি। এখানে জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় (এনএইচএস) যা করা হয়, সবই ফ্রি। কিন্তু প্রাইভেট ক্লিনিকে যখনই রোগী দেখা হয়, তখন ডাক্তাররা নিজেদের ফি নিজেরা নির্ধারণ করে নেন। কোন কোন ক্ষেত্রে ইনভেস্টিগেশন দেয়ার পরে যে কনসালটেশন হয় সেখানে রোগীকে অল্প সময়ের জন্য বরং তুলনামূলকভাবে আরো বেশি ফি দিতে হয়।
আমার নিজের প্র্যাকটিসে আমি রোগীর ফলাফল দেখে নির্দিষ্ট চিকিৎসা নির্ধারণ করার জন্য ফলোআপ ক্লিনিকে মিনিট হিসাব করলে, প্রথম কনসালটেশনের তুলনায় দেড়গুণ ফি নিই।
এখানে ইন্সুরেন্সের একটা ব্যাপার আছে। সবাই জানে যে, পৃথিবীর সব রকমের ইনসিওরেন্স খুবই চাপাচাপি করে তারপর ফি নির্ধারণ করে থাকে। তারাও ফলোআপ কনসালটেশনের জন্য সময় হিসাব করলে তুলনামূলকভাবে বেশি ফি নির্ধারণ করে থাকে।
সুতরাং বাংলাদেশে কয়েকদিন পর পর এই হুজুগ তোলার কোনো অর্থ হয় না। বরং ডাক্তাররা নিজেরাই যৌক্তিক ফি নির্ধারণ করে এবং রোগীরা সেই ফি প্রদান করে পারস্পরিক সম্পর্ক মধুর (কমপক্ষে সহনীয়) রাখার চেষ্টা করা যেতে পারে।