|
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ : আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্প
সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন নকল,কর্মকর্তারা ফ্ল্যাট পেয়েছেন কোটায়
|
|
![]() বিডি ২৪ নিউজ অনলাইন: জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মিরপুর-২ ও ৩-এ আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন নকল বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিবেদনে যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সই ও সিল ব্যবহার করা হয়েছে, তাও নকল বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এই প্রকল্পে ১৮১টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করার কথা। এ জন্য ব্যয় ধরা হয় ২৫৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়ন করার কথা। গৃহায়ন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মিরপুর-২-এ কর্মচারীদের জন্য ‘গৃহায়ন কৃষ্ণচূড়া’ প্রকল্পে এক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সই ও সিল নকল করে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। একইভাবে মিরপুরের সেকশন-৩-এ আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন নকল। গত ১৮ মে প্রকল্প যাচাই কমিটির সভায় এ অনিয়ম ধরা পড়ে। গত ২৪ জুন গৃহায়ন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাজমুল আলমকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিজের টাকায় নিজের জমিতে এই ফ্ল্যাট করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। ফলে নিজের মতো ফ্ল্যাটের কাজ ও ভাগ করতে নকল সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, গত ১৭ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে এ অনিয়মের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত, তা চিহ্নিত করা যায়নি। কারণ, প্রকল্প দুটির সমীক্ষা প্রতিবেদন দেখানো হয়েছে ২০২৩ সালের জুনে। তিনি বলেন, প্রতিবেদনে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে ২০২৩ সালের নথিপত্র দেখে অনিয়মে জড়িত কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি সুপারিশ করা হয়েছে, এখন থেকে গৃহায়নের যে কোনো প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদনের সঙ্গে চেয়ারম্যানকে একটি অঙ্গীকারনামা দিতে হবে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেন, এ বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত হয়েছে। আরও তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরুল বাসির বলেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে কীভাবে সমীক্ষা প্রতিবেদন হলো, সেটা তদন্ত করে দেখছি। তবে গৃহায়নের কর্মচারীরা বলেছেন, সব দপ্তরে বিশেষ সুবিধা আছে, আমরা কেন পাব না? ফলে তাদের জন্য এই ফ্ল্যাট প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালে এভাবে আরও একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছিল। তিনি বলেন, এখন কর্মচারীদের জন্য ফ্ল্যাট প্রকল্প না করে কোয়ার্টার প্রকল্প করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া মিরপুর সেকশন-৩-এ প্রকল্পটি নতুনভাবে সমীক্ষা করা হবে। নকল সমীক্ষা প্রতিবেদনে অভিযুক্ত যারা অভিযুক্তরা জানান, তারা এ বিষয়ে কিছু জানেন না। হারিজুর রহমান বর্তমানে ঢাকা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা ডিভিশন-১ থেকে কিছু না পাঠালে আমরা কিছু করতে পারি না।’ পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সুনাম নষ্ট হবে– এ কারণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের নাম বলব না।’ তবে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ঢাকা ডিভিশন-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে সাইখ বলেন, ডিভিশন-১ থেকে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন পাঠানো হয়নি।তদন্ত কর্মকর্তা নাজমুল আলম বলেন, নামকরা এক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সই ও সিল নকল করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট হবে, এ জন্য তদন্ত প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটির নাম উল্লেখ করা হয়নি।পরিকল্পনা ও নকশা উইংয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আবু হোরায়রা বলেন, ২০২৩ সালের সমীক্ষা প্রতিবেদন তারা এবার পাঠিয়েছিলেন। সব কর্মকর্তা কোটায় ফ্ল্যাট পেয়েছেন গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি এ কে এম সামসুদ্দোহা পাটোয়ারী বলেন, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রায় সব কর্মকর্তা বিভিন্ন কোটায় ফ্ল্যাট পেয়েছেন। কিন্তু কর্মচারীদের ফ্ল্যাট প্রকল্প কৌশলে আটকে দেওয়া হয়েছে। ১৭ ভাগ ফ্ল্যাট পেয়েছেন গণপূর্তমন্ত্রী নজিরবিহীনভাবে দেওয়া হয় ‘সচিব কোটা’ ও ‘চেয়ারম্যান কোটা’। গণপূর্তমন্ত্রীর জন্য বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১৭ ভাগ কোটা সংরক্ষণ করা হয়। একইভাবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অনেক কর্মকর্তা নিয়ম ভেঙে পেয়েছেন একাধিক ফ্ল্যাট। প্রভাবশালী কর্মকর্তারা আত্মীয়স্বজনের নামেও নিয়েছেন ফ্ল্যাট। এজন্য কর্মচারীরা ব্যক্তিগত ফ্ল্যাটের দাবি করেন। অডিট আপত্তি ৮৩ হাজার ৭৪ কোটি টাকা অডিট-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে এত টাকার অডিট আপত্তি অবিশ্বাস্য ঘটনা। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে এই অডিট আপত্তি দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্লট-ফ্ল্যাট হস্তান্তর বা বরাদ্দসহ আয়-ব্যয়ের হিসাব-সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রমের নিরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। গত ১২ মে নিরীক্ষা করার এ নির্দেশ দিয়ে অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা পরিদপ্তরের পরিচালককে চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বাজেট ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব (প্লট/ফ্ল্যাট হস্তান্তর/বরাদ্দ ইত্যাদিসহ) নিরীক্ষা করতে হবে। তিন মাসের মধ্যে এ নিরীক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে বলা হয়েছে। এ কার্যক্রম চলমান। কোটার ফ্ল্যাট বাতিল দাবি |