রবিবার ১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ ২৭শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ই-পেপার   রবিবার ১২ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ



‘হার্ট অ্যাটাক’ বাড়ছে কেন?
প্রকাশ: ২০ আগস্ট, ২০২২, ১:২৩ অপরাহ্ণ |
অনলাইন সংস্করণ

‘হার্ট অ্যাটাক’ বাড়ছে কেন?

মাহফুজ সাদি

হঠাৎ করেই দেশে হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগে আক্রান্তের ঘটনা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। এর পেছনে কারণগুলোও আঁতকে ওঠার মতো। যার মূলে রয়েছে, মনো-দৈহিক এবং শারীরিক নানান দিক।

ইদানীং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই কাছের মানুষদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্তের তথ্যসংবলিত পোস্ট দিচ্ছেন। হরহামেশাই এমনটি হচ্ছে এবং তা কম-বেশি সবার চোখে পড়ছে। এমনকি তুলনামূলক কম বয়সের ক্ষেত্রেও হার্ট অ্যাটাকের মতো ঘটনা ঘটছে। এমনটা বছর পাঁচেক আগেও দেখা যায়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হার্ট অ্যাটাক বাড়ার পেছনে হার্টের রক্তনালীর সমস্যা ও খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি মনো-দৈহিক অনেকগুলো ফ্যাক্টর কাজ করে।

এ বিষয়ে গ্রুমিং ফ্রেক্সের ডিপ্রেশন ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ এবং সাইকোলজিক্যাল কাউন্সিলর সামিয়া আলমের সঙ্গে কথা বাংলা ট্রিবিউনের। তিনি হার্ট অ্যাটাকের মনো-দৈহিক বেশ কিছু কারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন, যার প্রধান অংশগুলো এখানে তুলে ধরা হলো-

মনো-দৈহিক দিক দিয়ে মূলত কর্টিসোল হরমোনের আধিক্য এবং স্ট্রেস হরমোন হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি স্ট্রেসে থাকছে মানুষ। এর পেছনে রয়েছে- কাজের চাপ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, ভালো থাকার আকাঙ্খা, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি, আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া।

আগে আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের সাথে বাসায় বেড়াতে যাওয়ার প্রতি মানুষের ঝোঁক ছিল, আড্ডা হতো। কাছের মানুষদের সঙ্গে ভালো-মন্দ শেয়ার করতে পারায় মানুষের মন উৎফুল্ল থাকতো। এখন সেই জায়গাটি দখল করছে রেস্টুরেন্ট ব্যবস্থা, অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যম। এ জন্য রেস্টুরেন্টের সংখ্যা বাড়ছে, অনলাইন ব্যবহারের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। তাতে আগের অবস্থার ঠিক উল্টোটা হচ্ছে।

সামিয়া-আলমসামিয়া আলম

মানুষ এখন প্রকৃতির কাছাকাছি থেকে দিনকে দিন দূরে চলে যাচ্ছে। পার্কে ঘুরতে যাচ্ছে না, সিনেমা হলে যাচ্ছে না। অন্যদিকে হোটেলে তৈরি খাবার খাচ্ছে, ছবি তুলছে আর তা সামাজিকমাধ্যমে পোস্ট করছে। এতে করে ‘কোয়ালিটি টাইম’ স্পেন্ড হচ্ছে না। ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ছে। এ থেকে বাঁচতে হলে প্রকৃতির কাছে যেতে হবে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় কম সময় দিতে হবে।

সামাজিক মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর ফলে ব্যক্তিগত আইডি বা পেজে ছবি অথবা পোস্ট দিলে তাতে লাইক-শেয়ার বা রিঅ্যাক্টের দিকে নজর যাচ্ছে বারবার। এটি আসক্তির পর্যায়ে চলে যায় অনেকের ক্ষেত্রে। এতে ঘুমের পরিমাণ কমে যাচ্ছে, ডিভাইসে দীর্ঘ সময় থাকা হচ্ছে। এতে শরীরের মেলাটোনিন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ব্লাড প্রেসার হাই হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ছে।

যান্ত্রিকতার কারণে কাছের মানুষদের সঙ্গে আলাপ কম হচ্ছে। এমনকি স্বামী-স্ত্রী-সন্তানদের মধ্যেও মুক্ত আলাপ অনেকটাই কমে গেছে পরিবারগুলোতে। কে কী করছে, সেসব আলোচনা হয় খাবার টেবিলে, যা এখন কমে আসছে। মাত্রাতিরিক্ত ডিভাইসনির্ভরতায় দিন শেষে সম্পর্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে রিলেশনের হারমনি নষ্ট হচ্ছে, যা মানসিক চাপ তৈরি করছে। এটিও হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে অনেক সময়।

শারীরিক স্পর্শে সেরোটোনিন হরমোন নিঃসরণ হয়ে থাকে। হ্যাপি হরমোনের কারণে হাতে স্পর্শ লাগলেও মানুষের ভেতরে আনন্দ অনুভব হয়ে থাকে, ভালো লাগা কাজ করে। কিন্তু এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বামী-স্ত্রী, সন্তান সবাই ব্যস্ত থাকায় সেই বন্ডিং তৈরি তো হচ্ছেই না, বরং স্ট্রেস তৈরি হচ্ছে। যার ফলে সামান্য বিষয় নিয়েও সংসারে অশান্তি, স্বামী-স্ত্রী কলহ দেখা দিচ্ছে। এই অবস্থা দীর্ঘ দিন চলতে থাকলে সেখান থেকে উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা তৈরি হয় যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।

অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তা, সন্তানকে ভালো স্কুলে পড়াশোনা করানো নিয়ে অনিশ্চয়তা, নিজেদের সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করা নিয়ে মানসিক চাপ দেখা দিচ্ছে অনেকের মধ্যেই।

চাকরিপ্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা, অফিসে কাজের প্রতিযোগিতা এবং সামাজিক সাপোর্ট না থাকার বিষয়টিও মানুষের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে। এর ফলে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা, ট্রমা, অবসাদ দেখা দিচ্ছে। এই অবস্থা দীর্ঘ সময় (৩০ দিনের বেশি) স্থায়ী হলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এছাড়া চলতি পথে বড় দুর্ঘটনা, স্বজনদের দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া, মারামারি-হাঙ্গামা, ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া, পরিবারে ভেতরে বা বাইরে মানসিক বা শারীরিক নির্যাতন অথবা বুলিংয়ের শিকার হলে সেই সব স্মৃতি মানুষ সহজে ভুলতে পারে না। এমন কোনও স্মৃতি হঠাৎ করে মনে পড়লে কিছু সময়ের জন্য ব্লাড সার্কুলেশন কমে যায়, আঁতকে ওঠে মানুষ। এটি এক পর্যায়ে ট্রমার দিকে গেলে তা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।

এসব প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কারণে ভুক্তভোগীদের কখনও কখনও মাইনর হার্ট অ্যাটাক হতে পারে, কখনও ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক। আবার অনেক সময় মাইনর হলেও বোঝা না গেলে তা ম্যাসিভের দিকে ধাবিত করে। এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঝুঁকি বেড়ে যায়।




সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী

ইমেইল: nomanibsl@gmail.com

মোবাইল: 01713799669 / 01712596354

 

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি।

© বিডি ২৪ নিউজ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

  টেইলার্সের কারখানা থেকে শ্রমিকের লাশ উদ্ধার   পটুয়াখালীতে র‍্যাবের গাড়ি ও বাসের সংঘর্ষে নিহত তিন   বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের হাজিপুর সেতুতে নির্ধারিত টোলের চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায়   মেহেন্দীগঞ্জে জেলেদের দুই গ্রুপে সংঘর্ষ,নিখোঁজ জেলের লাশ উদ্ধার   বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছর পর বরিশাল উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্তে আনন্দে নগরবাসী   বরিশালের ৬টি আসনে হেভিওয়েটের ছড়াছড়ি, থাকছে বিদ্রোহীর শঙ্কা   বরগুনায় সমাজসেবা উপপরিচালকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ   বিএনপি নেতা লিটনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা   পটুয়াখালীতে ‎৩৫তম আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা   সুগন্ধা ও বিষখালী নদীতে ইলিশ শিকারের দায়ে ১১ জেলের কারাদণ্ড   ভোলা উপকূলে ‘মা’ ইলিশ রক্ষায় রেড অ্যালার্ট, জেলেদের ঋণের কিস্তি নেয়ায় নিষেধাজ্ঞা   বরিশালে ভুয়া জেলে কার্ডের ছড়াছড়ি,প্রকৃত জেলেরা দুর্দশায়   বরিশালে উচ্ছেদ হলো আদালতের ন্যায়কুঞ্জে গড়া হোটেল   আমতলীতে ১৬ শিক্ষক-কর্মচারীর মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ১৫   বরিশালে বিএনপি নেতাসহ দুই ভাইয়ের ধর্ষণে এক গৃহপরিচারিকা অন্ত:সত্ত্বা   ময়মনসিংহের তারাকান্দায় ইউপি সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা   খুলনায় গুলি করে এক যুবককে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা   বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাত ধ্বংস করতে জাল নোট তৈরি, আ.লীগের নতুন পরিকল্পনা ফাঁস!   খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারায় সহিংসতার ঘটনায় তিন মামলা   টেকনাফ থেকে নারী-শিশুসহ ২১ জনকে জীবিত উদ্ধার
Translate »