করোনার চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি নিয়ে গবেষণা চলছে বিশ্বজুড়েই। এর মধ্যেই মার্কিন বিজ্ঞানীরা হার্ট সেল থেরাপির ট্রায়াল শুরু করলেন সিনাই মেডিক্যাল সেন্টারে। প্লাজমা থেরাপিতে যেমন কভিড সংক্রমণ সারিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠাদের প্লাজমা বা রক্তরস আক্রান্তদের শরীরে প্রয়োগ করতে হয়। হার্ট সেল থেরাপি তেমনটা নয়। এটা অনেক জটিল পদ্ধতি। হৃদপিণ্ডের কোষ ল্যাবরেটরিতে বিশেষ উপায় তৈরি করে রোগীর শরীরে ট্রান্সপ্লান্ট করার প্রয়োজন হয়।
মার্কিন গবেষকদের দাবি, হার্ট সেল থেরাপির প্রয়োগে হাসপাতালের ছ’জন সঙ্কটাপন্ন কভিড রোগী প্রায় সেরে ওঠার পথে। এই থেরাপি কতটা নিরাপদ বা এর প্রয়োগ সার্বিকভাবে সম্ভব কি-না সেটা এখনও প্রমাণিত নয়। তবে গবেষকরা বলছেন, এই থেরাপিতে রোগীর শরীরে অধিক উত্তেজনা ও প্রদাহ অনেকটাই কমিয়ে দেওয়া সম্ভব।
কভিড সংক্রমণে রোগীর হার্টও আক্রান্ত হচ্ছে নানাভাবে। কখনো রক্ত জমাট বেঁধে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাধা পাচ্ছে, আবার কখনো হৃদপেশীতেই সংক্রমণ ছড়াচ্ছে ভাইরাস। যার কারণে আচমকাই হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে অনেক রোগীরই। ল্যাবরেটরিতে বিশেষ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তৈরি হার্টের কোষ রোগীর শরীরে প্রয়োগ করতে পারলে সংক্রমিত কোষগুলোর মোকাবেলা করতে পারবে এই কৃত্রিমভাবে তৈরি কোষ। মনে করা হচ্ছে এই পদ্ধতিতে সারা শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া কিছুটা হলেও আটকানো যাবে।
সিনাই মেডিক্যাল ইউনিটের হার্ট স্পেশালিস্ট এডুয়ার্ডো মারবান বলেছেন, এই হার্ট সেল থেরাপি সব কভিড
রোগীর জন্যই প্রযোজ্য কি-না সেটা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ২০৯ জন রোগীর শরীরে এই পদ্ধতির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়েছে। ৬ জন সঙ্কটাপন্ন রোগী এই থেরাপিতে সেরে ওঠার পথে।
ডাক্তার এডুয়ার্ডো বলেছেন, কার্ডিওস্ফিয়ার-ডিরাইভড সেল নিয়ে এই থেরাপি করা হচ্ছে। এটা জটিল পদ্ধতি। ল্যাবরেটরিতে বিশেষভাবে এই কোষ তৈরি করতে হয়। তারপর ইনজেক্ট করা হয় রোগীর শরীরে। হৃদরোগের চিকিৎসায় এই থেরাপির ব্যবহার হয়। এবার কভিড রোগীদের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ বলছেন, কভিড সংক্রমণে শরীরে যে সাইটোকাইন প্রোটিনের অধিক ক্ষরণ হয় তাকেও আটকানো সম্ভব এই থেরাপিতে। সাইটোকাইন প্রোটিনের ক্ষরণ বেশি হলে শরীরে অধিক প্রদাহ তৈরি হয় যাকে বলে ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’
এই প্রোটিনের কাজ হল বাইরে থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা ভাইরাস বা প্যাথোজেনের খোঁজ পেলে কোষে কোষে সেই বিপদ সঙ্কেত পৌঁছে দেওয়া। এই প্রোটিনের ক্ষরণ কম বা বেশি হলে তার প্রভাব পড়ে শরীরে।
এদিকে আবার এই সার্স-কভ-২ ভাইরাস শরীরে ঢুকলেই সাইটোকাইনের ক্ষরণ অস্বাভাবিক বেড়ে যাচ্ছে, যার কারণে ক্ষতি হচ্ছে দেহকোষেরই। গবেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে কভিড সংক্রমণে ৫ শতাংশ রোগী আক্রান্ত হচ্ছে তীব্র শ্বাসকষ্টে, ১৫ শতাংশ নিউমোনিয়ায় ও বাকি বেশিরভাগটাই অধিক প্রদাহজনিত রোগে। এই থেরাপি সেক্ষেত্রে কতটা উপযোগী হতে পারে সেটাই পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
‘বেসিক রিসার্চ ইন কার্ডিওলজি’ মেডিক্যাল জার্নালে এই গবেষণার রিপোর্ট সামনে আনেন সিনাই মেডিক্যাল সেন্টারের বিশেষজ্ঞরা। এডুয়ার্ডো বলেছেন, মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফডিএ) অনুমোদনেই এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। রোগীদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। ট্রায়াল শেষ বলেই গবেষণার বিস্তারিত ফল জানানো হবে।
সূত্র: দ্য ওয়াল।