ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোজা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের প্রতিটি ইবাদতের ন্যায় রোজার মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা বিদ্যমান রয়েছে। তাই রোজার শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে ইহকালে শান্তি পরকালে মুক্তির সন্ধান করা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য।রোজার শিক্ষাগুলো নিন্মরুপঃ ১। তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি সৃষ্টি করে: মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন :হে ইমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হযেছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীগনের উপর ফরজ করা হযেছিল। সম্ভবত তোমরা আল্লাহভীতি অর্জন করতে সক্ষম হবে। সুরা-বাকারা-আয়াত-১৮৩এই আয়াতের মর্মার্থ হল, জীবনের সকল দিক ও বিভাগে সার্বক্ষনিক এবাদত অর্থাৎ আল্লাহ তা,য়ালার যাবতীয় হুকুম আহকাম মেনে চলার যোগ্যতা ও অভ্যাস গড়ে তোলা। বিশেষ করে :সুবেহ সাদিক হইতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার হুকুম মত হালাল খাবার, পানীয় ও অন্যান্য কামনা বাসনা পরিহার করার মাঝে এ শিক্ষাই পাওয়া যায় যেন আমরা রোজা ব্যাতীত স্বাভাবিক জীবনেও আল্লাহ তায়ালার নিষেধ করা যাবতীয় হারাম কাজকর্ম , আয় উপার্জন লেনদেন, চাকুরী, ব্যাবসা বানিজ্য, খাদ্য পানীয় আদত অভ্যাস, রীতিনীতি থেকে বিরত থাকি। ইহাই রোজার মৌলিক শিক্ষা। এই শিক্ষা অর্জনে যদি আমরা ব্যার্থ হই তাহলে আমাদের রোজার সকল মেহনত ব্যর্থ হয়ে যাবে। তাই এ কথা বলা যায় যে, রোজা হচ্ছে তাকওয়া বা আল্লাহভীতির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ২। ইন্দ্রিয়সমুহকে শরীয়তের বিধান পালনে বাধ্য করে :রোজা আমাদের চক্ষু কর্ণ , জিহবা ইত্যাদি ইন্দ্রিয়সমুহকে শরীয়তের বিধান পালনে বাধ্য করে এবং মনের গভীরে রোজার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে।এ বিষয়ে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ( রা:) বলেন: যখন তুমি রোজা রাখবে তখন তোমার চোখ, কান , জবানও যেন রোজা রাখে, মিথ্যা ও শরীয়ত বিরোধী কাজকর্ম থেকে। দৃঢ়তা স্থিরতা ও আত্মপ্রশান্তি যেন তোমাকে আবৃত করে রাখে। রোজা রাখার দিনকে তুমি রোজা না রাখার দিনের সাথে একাকার করে নিও না। সতর্ক থাকবে যেন তোমার দ্বারা কোন মিথ্যা গীবত শেকায়েত অশ্লীলতা গালমন্দ ঝগড়াঝাটি বা অপরের কোন ক্ষতি সাধিত না হয়। (মিশকাত)অর্থাৎ সতর্ক থাকতে হবে যেন রোজা অবস্থায় যেভাবে হারাম থেকে বিরত থাকছ,রোজার পরেও যেন মিথ্যা হারাম কাজকর্ম থেকে ইন্দ্রিয়সমুহকে বিরত রাখা যায়।এ ব্যপারে রাসুল (স:) এরশাদ করেন: পানাহার থেকে বিরত থাকার নামই রোজা নয় বরং অর্থহীন অশালীন কথা ও কাজকর্ম হতে বিরত থাকার স্বার্থক নামই হচ্ছে রোজা। (বায়হাকী)। অতএব বলা যায় যে, রোজা আমাদের ইন্দ্রিয়সমুহকে শরীয়তের বিধান পালনে বাধ্য করে।৩। মিথ্যা ও খারাপ কাজ ছাড়তে বাধ্য করে : রোজা মানুষকে মিথ্যা ও সকল প্রকার খারাপ কাজ ছাড়তে সাহায্য করে । এ ব্যপারে রাসুল (স:) এরশাদ করেন: যে ব্যাক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করতে পারলনা তার পানাহার থেকে বিরত থাকা আল্লাহ তায়ালার কোন প্রয়োজন নেই। (বুখারী)অন্য একটি হাদীসে রাসুল (স:) এরশাদ করেন: অনেক রোজাদার রয়েছে যারা রোজা হতে ক্ষুধা পিপাসার জ্বালাই লাভ করে। আবার অনেক রাতজাগা নামাজীও রয়েছে যারা নামাজ হতে রাত্রী জাগরণ ছাড়া আর কিছুই লাভ করেনা। (দারেমী )অর্থাৎ রোজা আর নামাজের শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে না পারলেই মানবজীবন ব্যার্থতায় পর্যবসিত হবে। তাই নামাজ রোজার শিক্ষাকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারলেই মিথ্যা ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকা যাবে। ৪। ধৈর্য ও সংযমশীলতা অর্জন করে:এ বিষয়ে বিশ্ব নবী (স:) এরশাদ করেন : রোজার দিনে তোমাদের কেউ যেন ফাহেশা কথা , গালাগালি ঝগড়া বিবাদ না করে। অপর কেউ যদি তাকে গালিদেয় অথবা তার সাথে যুদ্ধ বাঁধতে আসে তবে সে যেন বলে দেয় যে আমি একজন রোজাদার।(বুখারী, মুসলিম) এ হাদীসের মর্মার্থ হল, রোজাদার ব্যাক্তি করো সাথে খারাপ কথা বলবেনা, কারো সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হবেনা, কাউকে গালি দিবেনা। কেউ তার সাথে এহেন কাজ করলে সে নিজেকে রোজাদার বলে জানিয়ে দিয়ে ধৈর্য ও সংযমশীলতার পরিচয় দিবে। অতএব, বলা যায় রোজা মানুষকে ধৈর্য ও সংযমশীলতা শেখায়।৫। জৈবিক চাহিদা বা কামনা বাসনা নিয়ন্ত্রন করে:রোজা অবস্থায় আল্লাাহ তায়ালার হুকুম হল , আপন স্ত্রীর সাথেও জৈবিক চাহিদা বা কামনা বাসনা মেটানো নিষেধ। ইহা পরিহার করার তাৎপর্য হলো: রোজা ছাড়া অন্যান্য সময় যে কাজ হালাল ছিল সেটা রোজা অবস্থায় হারামের মাধ্যমে মানুষকে জৈবিক চাহিদা বা কামনা বাসনা নিয়ন্ত্রনে অভ্যস্ত করে গড়ে তোলা।এ বিষয়ে বিশ্বনবী (স:)এরশাদ করেন: হে তরুনের দল ! তোমাদের মধ্যে যাদের বিযে করার সামর্থ আছে তাদের বিযে করা উচিত। কেননা ইহা তোমাদের যৌন দৃষ্টিকে অধিকতর নিয়ন্ত্রন করে ও লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। আর যাদের বিয়ে করার সামর্থ নেই তাদের রোজা রাখা উচিৎ। কেননা ইহাই তাদের জৈবিক চাহিদা নিয়ন্ত্রনের উত্তম পন্থা। (বুখারী, মুসলিম) অন্য একটি হাদীসে বিশ্বনবী (স:)এরশাদ করেন: রোজাই আমার উম্মতের জন্য যৌনকর্তন অর্থাৎ যৌনকর্তনে যেমন যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রন হয়, তেমনি রোজাও যৌন উত্তেজনাকে দমন ও নিয়ন্ত্রন করে।অতএব রোজা জৈবিক চাহিদা বা কামনা বাসনা নিয়ন্ত্রনের অন্যতম মাধ্যম। ৬। পারস্পরিক সম্প্রীতি ও বিপদগ্রস্থের প্রতি সহানুভূতি: এ বিষয়ে বিশ্ব নবী (স:) এরশাদ করেন : রাসুল (স:) এর অভ্যাস ছিল , যখন রমজান মাসের আগমন হতো তিনি সকল কয়েদীকে মুক্তি দিয়ে দিতেন এবং সকল প্রার্থনাকারীর প্রার্থনা পূরন করতেন এবং বলতেন যে রমজান মাসের দানই সর্বোত্তম দান। (তিরমিজি)অত্র হাদীসে প্রমানিত হয় যে, রোজা পারস্পরিক সম্প্রীতি ও বিপদগ্রস্থের প্রতি সহানুভূতি সৃষ্টিতে অনন্য ভুমিকা পালন করে।
লেখক: মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, চরসুবুদ্ধি উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রায়পুরা ,নরসিংদী।