রংপুর:
জেলার পীরগঞ্জে ও বদরগঞ্জে ঈদ উদযাপনে নেশা জাতীয় বিষাক্ত স্পিরিট পানে তিন দিনে ১০ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও অসুস্থ হয়ে হাসপাতাল ও বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন কমপক্ষে ১৫ জন। ঈদ উদযাপন করতে গিয়ে মৃত্যুর এ ঘটনা পীরগঞ্জের শানেরহাট নামক এলাকার ও অপর ঘটনাটি বদরগঞ্জের শ্যামপুরে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৬ মে) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পীরগঞ্জের শানেরহাট ইউনিয়নে বেশ কয়েকজনের মৃত্যুর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। তবে এ বিষয়ে কেউ মুখ না খুললেও নেশা জাতীয় স্পিরিট পানে এমনটা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক শরিফুল ইসলাম প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
অপর ঘটনায় বদরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুরে বিষাক্ত রেকটিফায়েড স্পিরিট পান করে ঈদ পালন করতে গিয়ে তিনজনের মৃত্যুর হয়েছে। মৃতরা হলো, বদরগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের নুর ইসলাম (৩০) এবং রংপুর সদর উপজেলার চন্দনপাট ইউনিয়নের সরোয়ার হোসেন (৩১) ও মোস্তফা কামাল (৩০)। এদের মধ্যে মঙ্গলবার সকালে সরোয়ার ও মোস্তফা কামাল এবং আজ বুধবার (২৭ মে) সকালে নুর ইসলাম মারা যান। তিনজনই রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
পীরগঞ্জের শানেরহাট ইউপির চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মন্টু জানান, মঙ্গলবার সকালে শানেরহাট খোলাহাটি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক (৪৫), পাহাড়পুরের জাইদুল হক (৩৫) ও পার্শ্ববর্তী মিঠাপুকুর উপজেলার বাজিতপুর গ্রামের চন্দন কুমারের (৩০) মৃত্যু হয়। এর আগের দিন সোমবার (২৫ মে) রাতে রায়তি সাদুল্ল্যাপুরের দুলা মিয়া (৫২) এবং হরিরাম সাহাপুরের লাল মিয়া (৩০),মাদক ব্যবসায়ী নওশা (৫০) ও শানেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সেলিম সরকার মারা গেছেন। ওই ব্যক্তিরাসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ সংঘবদ্ধভাবে শানেরহাট বন্দরে সোমবার রাতে স্পিরিট পান করে ঈদ উদযাপন করছিল। এতে ওই দিন রাত থেকেই অন্তত ১৫ জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়াও পীরগঞ্জের ধল্লাকান্দির খালেক (৫০), আকবর (৪৫) ও মিলন মাস্টার (৫২), কাজীর পাড়ার খোড়া শাহিন (৪২) ও খোলাহাটির ডিস মতিসহ (৩৬) কমপক্ষে ১৫ জন অসুস্থ অবস্থায় বাড়ি ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসী জানান, এরা সংঘবদ্ধ একটি দল। প্রতিনিয়ত শানেরহাট বন্দরে এরা স্পিরিট জাতীয় নেশাদ্রব্য পান করে থাকে। ওই নেশায় তাদের মৃত্যু ও অসুস্থতার ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে শানেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মন্টু বলেন, সবার মুখে মুখে তো স্পিরিট পানে ওই লোকেদের মৃত্যু হয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই নিয়মিত মাদক সেবন করত বলে অভিযোগ রয়েছে।
পীরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরেস চন্দ্র জানান, মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছেন। ওই ঘটনার অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা উদঘাটিত হবে।
রংপুর সদর কোতয়ালী থানার ওসি সাজেদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘নেশাজাতীয় অ্যালকোহল পান করে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মদের উৎস এবং সরবরাহকারীকে খুঁজে বের করতে পুলিশ অনুসন্ধান শুরু করেছে।’
রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব সরকার জানান, জেলা পুলিশের কয়েকটি বিশেষ টিম ঘটনাটি নিবিড় তদন্ত করছেন। যেকোন সময় মৃত্যুর আসল রহস্য পুলিশ উদঘাটন করবে। জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
দিনাজপুর:
জেলার বিরামপুরে বিষাক্ত স্পিরিট পানে স্বামী-স্ত্রীসহ ৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এ ঘটনায় আরো ৪ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
পারিবারিক সূত্রের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বিরামপুর পৌর এলাকার মাহমুদপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনের পুত্র আ. মতিন (২২), সুলতান আলীর পুত্র মহসীন আলী (২৭) ও তোজাম্মেলের পুত্র আজিজুলসহ (৩০) আরো বেশ কয়েকজন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নেশা হিসেবে স্পিরিট পান করে। এরপরই তারা অসুস্থ বোধ করলে আজ বুধবার (২৭ মে) ভোর রাতে একে একে তিন জনের মৃত্যু ঘটে। এরপর দুপুরে স্বামী শফিকুল ইসলাম (৫৫) ও তার স্ত্রী মঞ্জুয়ারা (৩৫) এবং অমিত রায় (৩০) নামে আরো ৩ জন মারা যান।
বিরামপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান ৬ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করে জানান, তবে কি ধরনের নেশা তারা পান করেছিল তা পরীক্ষার জন্য তাদের লাশ দিনাজপুর মর্গে পাঠানো হয়েছে।
মৃত মহসীনের পিতা সুলতান আলী জানান, নিহতরা আগে থেকে মাদকাসক্ত ছিল। স্পিরিট পানে তারা অসুস্থ হয়ে মারা গেছে।
এদিকে বুধবার সকালে খবর পেয়ে বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৌহিদুর রহমান, পৌর মেয়র লিয়াকত আলী সরকার টুটুল, সার্কেল এএসপি মিথুন সরকার ও বিরামপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
সূত্রঃ দৈনিক ইত্তিফাক