ফজলুল করিম ফারাজী, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
কুড়িগ্রামে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের উঠতি বোরো ধান। জমির আধা-পাকা ধান পানিতে তলিয়ে থাকায় তা ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষকরা। দ্রুত পানি নেমে না গেলে তলিয়ে থাকা এসব ধান সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
কুড়িগ্রাম জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের অববাহিকার প্রায় ২ শতাধিক চরে বোরোর আবাদ করেছেন চরাঞ্চলের কৃষকরা। এসব এলাকায় দেরিতে ২৯ জাতের বোরো ধান চাষ করায় তা এখনও ঘরে তুলতে পারেননি বেশিরভাগ চাষি।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সদর উপেজলার পোড়ার চর, মাঝিয়ালির চর, বড়য়া, রলাকাটা, ভগবতীপুর, পার্বতীপুর, ঝুনকার চর, নাগেশ্বরীর নারায়রণপুর, কালার চর, অষ্টআশির চর, উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা, জাহাজের আলগা, দই খাওয়া, আইরমারীসহ রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী উপজেলার প্রায় ২ শতাধিকচরসহ নিম্নঞ্চলগুলোতে আবাদকৃত বোরো ধানের বেশির ভাগই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় কৃষকরা পানির নিচ থেকে কিছু ধান ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন।
সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পার্বতীপুর চরের খোকা মন্ডল বলেন, চরের ৫ বিঘা জমিতে ২৯ জাতের বোরো ধান চাষ করেছি। হঠাৎ করেই নদীতে পানি বাড়ায় তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে ১ বিঘা জমির ধান সামান্য জেগে আছে সেই ১ বিঘা জমির ধান লোকজন নিয়ে কাটছি। বাকিগুলো এখনও পানির নিচে পড়ে আছে।
কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে তলিয়ে গেছে বোরো ধানের ক্ষেতসদরের ভগবতীপুর চরের আয়নাল হক বলেন, দেনা করে আবাদ করা এই ধান দিয়েই আমাদের সারা বছর চলে যায়। কিন্তু এবার অর্ধেক ধানও ঘরে তুলতে পানি নাই। সব শেষ হয়ে গেল!যাত্রাপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য শাহা জামাল জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের চরাঞ্চলের সমস্ত ২৯ জাতের বোরো ধান পানির নিচে তলিয়ে আছে।
কয়েকদিন ধরে এসব ধান পানির নিচে থাকায় তা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এসব এলাকার কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।যাত্রাপুর ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আইযুব আলী সরকার বলেন, চরাঞ্চলগুলোর কৃষকরা যে বোরো আবাদ করেছেন পানি আসার আগে তার অর্ধেকও ঘরে তুলতে পারেননি। এখন দ্রুত পানি নেমে না গেলে তলিয়ে থাকা ধান নষ্ট হয়ে যাবে। কৃষকদের এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
বোরো ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন যাত্রাপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল হক।কী পরিমাণ ধানের ক্ষেতে তলিয়ে গেছে জানতে চাইলে হিসাব দিতে পারেননি কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজার রহমান প্রধান। তিনি বলেন, যেসব ধান দেরিতে লাগানো হয়েছে শুধু সেইসব ধান ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে কাজ চলছে।