মুহা. ইসমাঈল হোসাইন রাসেল
পবিত্র কুরআনুল কারীমের আয়াত দ্বারা শুরু করতে চাই সূরা নাবা ১৪ থেকে ১৬ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন ‘আমি জলধর মেঘমালা থেকে প্রচুর বৃষ্টিপাত করি, যাতে তা দ্বারা উৎপন্ন করি শস্য, উদ্ভিদ ও পাতাঘন উদ্যান।’ বৃষ্টিতে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাস হতেই পারে।
মানুষ হিসেবে আমি বা আপনি বৃষ্টির মত মজাদার উপভোগ্য বিষয় উপভোগ করতেই পারি। কিন্তু আমি বা আপনি একবারও কি ভেবে দেখেছি এই বৃষ্টি কোথা হতে আসে? বর্ষা প্রেমিক মানুষগুলো বৃষ্টির সময় নানাভাবে বৃষ্টিকে উপভোগ করে। সচরাচর ছাতা নিয়ে বের হতে দেখা যায় অনেকেই ।
অনেককেই দেখা যায় শহরের বাড়ি ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ শোনার জন্য কিছু সময় বের করেন। অনেকে তার প্রিয়তমার হাত ধরে এক মুঠো কদম ফুল সংগ্রহের আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। অনেকেই আবার কদম ফুল সংগ্রহ করে প্রিয়তম হাতে তুলে দিয়ে বৃষ্টিকে উপভোগ করেন।
বর্ষা কিছু ফুলের কথা না হলেই নয়।কদম, বকুল, স্পাইডার লিলি, দোলনচাঁপা, সুখদর্শন, ঘাসফুল, শাপলা, সন্ধ্যামালতি, কামিনী, গুলনার্গিস, দোপাটি ও অলকানন্দ প্রভৃতি। অনেকে আবার বৃষ্টি নিয়ে লেখালেখি করেন ফেসবুক ,টুইটার ,ইনস্টাগ্রাম সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
এই উপভোগ্য বিষয়টি আমার জন্য উপকার বয়ে আনে নাকি ক্ষতি বয়ে আনে সেই বিষয়টি আমাদের অনেকেরই অজানা। আসুন বৃষ্টির উৎপত্তি সম্পর্কে একটি হাদিসের মাধ্যমে জেনে নেয়া যাক সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: সালাতুল ইস্তিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার সালাত।
হাদিস নং ৮৯৮ প্রখ্যাত সাহাবী আনাস রা. বলেন, أَصَابَنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَطَرٌ، قَالَ: فَحَسَرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَوْبَهُ، حَتَّى أَصَابَهُ مِنَ الْمَطَرِ، فَقُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ لِمَ صَنَعْتَ هَذَا؟ قَالَ: «لِأَنَّهُ حَدِيثُ عَهْدٍ بِرَبِّهِ تَعَالَى» “আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে থাকাকালে একবার বৃষ্টি নামল।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর কাপড়ের কিয়দংশ উন্মোচন করলেন যেন শরীরে বৃষ্টির পানির স্পর্শ লাগে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বললেন, কারণ তা তার মহান রবের কাছ থেকে মাত্রই এসেছে”। হাদীসটি পর্যবেক্ষণ করলে একথা প্রতীয়মান হয়েছে বর্ষা (বৃষ্টি) আল্লাহ তাআলার একটি নেয়ামত যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর ভাষ্যমতে মহান আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি এবং আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে আসে ।
বর্ষা মানেই সবুজ আর শীতলের একটি মিশ্র অনুভূতি। যা অন্য রীতিতে মেলা খুবই দুঃসাধ্য। গরমে ব্যবসা বাতাসে গাছপালা, মানবকুল ,প্রাণিজগৎ যখন হাঁপিয়ে উঠে তখনই প্রয়োজন পড়ে শীতল এবং মুক্ত বাতাসের। আর সেই বাতাসের আঞ্জাম দেয় বর্ষা। বর্ষায় পরিবেশ নতুন রূপে সাজে বৃষ্টির পানিতে গাছপালার ধুলোবালি ধুয়ে নতুন রঙে সাজে সবুজের ছোঁয়া চারপাশের মুহুমুহু করে।
এই সবুজ অনুভূতি, এই সবুজ সৃষ্টি মহান আল্লাহ তালার দান। বর্ষা মানেই কদম ফুলের রাজত্ব। কদমের সুন্দর গ্রামে মুখরিত হয় আমাদের চারপাশ। কদম গাছের শাখায় শাখায় নতুন নতুন ডাল ফালায় ফোটে অগণিত অসংখ্য কদমফুল । বৃষ্টির পানি স্পর্শ পেলেই যেন নতুন যোগ নেই কদমের এই প্রাকৃতিক যত্নে আমাদের পরিবেশ হয়ে উঠে আকর্ষণীয়।কবি বলেছেন, শ্রাবণবেলা বাদল ঝরা/যৃথিবনের গন্ধে ভরা।
ঘন সবুজ পাতার ভিড়ে থোকা থোকা ছোট জুঁই বা যূথী ফুলের সৌরভ হতে পারে বাদল দিনের পরম উপহার। বাদল বাতাস মাতে মালতির গন্ধে তাই বর্ষাযাপনে মালতিকে বাদ দিলে চলে কী করে? ‘এসেছে বরষা, এসেছে নবীনা বরষা, /গগন ভরিয়া এসেছে ভুবন-ভরসা-ঋতু বৈচিত্র্যের বর্ষায় প্রকৃতিতে লাগে নতুনের ছোঁয়া। আসে নতুনত্ব।
খাল-বিল পুকুর-ডোবা পানিতে টইটম্বুর করে। রাতের অন্ধকারে ব্যঙ্গের দলের গ্যং গ্যং মিছিলে মুখরিত হয় রাতের পরিবেশ। নদীর পাড়ে পানির তেজস্বী ঝাপটানোর শব্দ সময় পার করেন নবীনের দলেরা। প্রকৃতির রাণী বর্ষা আশ্চর্য পরিবেশ নিয়ে হাজির হয় আমাদের সম্মুখে । কি অপরূপ বৈচিত্র ,গ্রীস্মের নির্মমতার পরিসমাপ্তি ঘটে শুরু হয় বর্ষার কোমল বর্ষণ।
বাংলার পরিবেশ সুসজ্জিত হয় নয়নাভিরাম শ্যামলী ছোঁয়ায়। বসে জীবন আমাদের কতিপয় মানুষের জন্য উপকারী ও উপভোগ্য ঠিক তেমনি বিপরীত দিকে অনেক মানুষের জন্যই এটি কাল হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নিম্নভূমির মানুষ এই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যার পানিতে ভেসে যায় ঘরবাড়ি রাস্তাঘাট।
বিপন্ন হয় মানব জীবন সভ্যতার সংকট। এজন্য আমরা যারা উপভোগ করি তাদের উচিত সে সমস্ত মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ান। মনুষ্যত্ব, মানবতা, উদারতা, প্রীতি ,ভালোবাসা, আত্মার গুণগুলি নিজেদের মধ্যে জাগ্রত করা। এই বন্যায় ভেসে যাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের মানবতাবোধের পরিচয় দিয়।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে বলেন “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।” [সূরা আহজাব : ২১] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরনের মধ্যে একজন মুমিনের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তি মিলবে শান্তি মিলিবে।
আসুন একটু জেনে নেয়া যাক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ষার সময় কি কি আমল করতেন। কোন কোন কাজগুলো আমাদের জন্য সুন্নাত আমি চেষ্টা করব সেই সুন্নাত গুলো আদায় করার জন্য। বৃষ্টির দোয়া পড়া : রহমতের বৃষ্টি দেখে দোয়া পড়া সুন্নত। [বোখারি : ১০৩২] বৃষ্টির পানি স্পর্শ করা : বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা হয়ে নামে রহমতের ধারা।
তাই সুন্নত হলো বৃষ্টির ছোঁয়া পেতে বস্ত্রাংশ মেলে ধরা। [মুসলিম : ৮৯৮] বৃষ্টি চলাকালে দোয়া করা : বৃষ্টি চলমান সময়ে দোয়া কবুল হয়। তাই এ সময় দোয়ার জন্য লুফে নেয়া সুন্নত। [আবু দাউদ : ২৫৪০] অতি বৃষ্টি বন্ধে দোয়া পড়া : ধনসম্পদ সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, পানিতে পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে, আল্লাহ তায়ালার কাছে বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার প্রার্থনা করুন।[বোখারি : ১০১৩; মুসলিম : ৮৯৭]