খাদ্য শস্য ও অর্থকরী ফসলের পাশাপাশি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার কৃষকরা
নানা ধরণের সবজির আবাদ করে থাকেন। ভুট্টা ও ধানের পরেই উপজেলায়
সবজির অবস্থান। ভুট্টা ও আমন ধানের মাঝামাঝি এই উপজেলার প্রান্তিক
কৃষকরা অধিক মুনাফার আশায় মুখী কচুর আবাদ করে থাকেন।
সরেজমিনে জানা গেছে, তিন মাস বা সাড়ে তিন মাসের ব্যবধানে মুখীকচুর আবাদ
করে অল্প পরিশ্রমে লাভবান হচ্ছেন উপজেলার প্রান্তিক কৃষকরা। সাধারণত
উঁচু জমিতে এই ফসলের ফলন ভাল হয়।
অসময়ে বাজার ভাল পেয়ে লাভবান হওয়ায় উপজেলার প্রান্তিক কৃষক ঝুঁকছেন এই ফসলে। মাধবপুর উপজেলা কৃষি
স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর উপজেলার কৃষকরা ৫৪০
হেক্টর জমিতে মুখীকচুর আবাদ করেছিলেন। কচু উৎপাদন হয়েছিল ৫ হাজার
২৫০ মেট্রিক টন। গত বছর ভালো মুনাফা পাওয়ায় চলতি বছর ১১০ হেক্টর
বেশি জমিতে মুখী কচুর আবাদ হয়েছে।
চলতি মৌসুমে এ আবাদের
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন। কৃষি অফিস
সূত্রে জানা যায়, ধর্মঘর, চৌমুহনী, বহরা, শাহজাহানপুর, শাহপুর,
নোয়াপাড়া, বাঘাসুরা, জগদীশপুর এলাকায় এই ফসলের আবাদ হয়ে থাকে।
উপজেলার শাহজাহানপুর গ্রামের মানিক মিয়া বলেন, সে চলতি মৌসুমে
এক বিঘা জমিতে মুখী কচুর আবাদ করেছে।
ফাল্ধসঢ়;গুন মাসে সাধারনত এ
ক্ষেত রোপন করা করা হয়। আষাঢ় মাসে ওঠানো হয়। এক বিঘায় তিন থেকে ৪
মন বীজ লাগে। নিজের স্যালো মেশিন না থাকলে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা
খরচ হয়। থাকলে খরচ একটু কম হয়।
বিঘা প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা
লাভ হয়। একই গ্রামের জালাল উদ্দিন বলেন, সে ভুট্টা কাটার পর চৈত্র মাসে ৫
কানি জমিতে কচুর আবাদ করেছিলাম। ভালো হলে কানি প্রতি ৮ থেকে ১০
মণ পর্যন্ত হয়ে থাকে। বর্তমান ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে খুচরা বাজারে
কেজি প্রতি কচু বিক্রি হচ্ছে।
কচুতে লোকসান নেই বললেই চলে। আবার
ওই জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়। উপজেলা জালুয়াবাদ গ্রামের কৃষক
শামসুর মিয়া জানান, এক কানি জমিতে সে কচুর আবাদ করেছে। এ বছর
বাজার ভালো। এক কানি জমিতে ১০ মনের নীচে নয়। উপরে ১৫ মন পর্যন্ত হয়ে
থাকে। এখন ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা দামে মণ প্রতি কচু বিক্রি হচ্ছে।
এমন বাজার থাকলে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা কচু বিক্রি করে মুনাফা
থাকবে। কানি প্রতি কচু লাগাতে ৪ টি লেবার লাগে। ওঠানোর সময় লাগে
৪০ থেকে ৫০ টি লেবার। তিনি জানান, এ বছর কচুর বাজার মুল্য ভাল হওয়ায়
কৃষকরা ২৫ থেকে ২৮ হাজার টাকায় কানি প্রতি পাইকারী দরে বিক্রি করতে
পারবে।
বর্তমান বাজার মূল্যে কৃষকরা বেশ খুশি। স্থানীয় ব্যবসায়িকরা
ছোট্টু মিয়া, নান্টু মিয়া, জান্নাত মিয়া কচু ক্রয় করে ট্রাক যোগে
দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়ে থাকে।
করোনার কারণে অনেক
ব্যবসায়ী দুশ্চিন্তায় আছে। মুকাম কচুর বাজার কেমন যাবে ? উপজেলা
কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, ক্লান্তি হ্রাস করে কচুর মুখি
এনার্জি ধরে রাখতে ও ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে। ওজন কমানোর জন্য
বেশ কার্যকর। কারণ এর ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম।
হজম সহায়ক এই
সবজিতে প্রচুর ফাইবার থাকে বলে পরিপাক প্রক্রিয়ার জন্য খুবই উপকারী।
এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। পাকস্থলী পরিষ্কার করে ফাইবার
সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে পরিপাক প্রক্রিয়ায় সাহায্য করার পাশাপাশি পাক¯’লীর
বর্জ্য পদার্থ নিস্কাশনেও সাহায্য করে কচুর মুখি।
এছাড়াও তিনি আরো
বলেন, সাধারনত কৃষকরা ফাল্ধসঢ়;গুন বা চৈত্র মাসে অধিক মুনাফার আশায়
মুখী কচুর আবাদ করে থাকে। এই ফসল সাধারনত উঁচু জমিতে ভাল হয়। তিন
বা সাড়ে তিন মাসে অল্প খরচে কৃষকরা ভাল ফলন পেয়ে থাকে। বর্তমানে মন
প্রতি ১২০০ টাকা থেকে ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার কৃষকরা
৫৪০ হেক্টর জমিতে মুখীকচুর আবাদ করেছে। কচু উৎপাদন হয়েছিল ৫ হাজার
২৫০ মেট্রিক টন।
গত বছর ভালো মুনাফা পাওয়ায় চলতি বছর ১১০ হেক্টর
বেশি জমিতে মুখী কচুর আবাদ হয়েছে।
চলতি মৌসুমে এ আবাদের
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৯৬০ মেট্রিক টন এবং কচু বিক্রি
করে উপজেলার অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারবে।