এক শতাব্দীরও অধিক সময় ধরে আকাশের সূর্যের ন্যায় মানব হৃদয়ের আকাশকে আলোকিত করে রেখেছে আরও একটি সূর্য, নাম তার ‘নোবেল প্রাইজ।’
এ কৃত্রিম সূর্যটির স্থপতি একজন মানুষ- আলফ্রেড নোবেল।নোবেল প্রাইজের মুকুট সেসব বিদগ্ধ ব্যক্তিত্বেরই মাথাশোভিত করে,যাঁরা পৃথিবীর একেকটি শ্রেষ্ঠ প্রতিভা, সূর্যের ন্যায় প্রতিভাত হন।
দুরন্ত শৈশবের আমার মনের আকাশেও একটি প্রশ্নের উদ্রেক হতো, নোবেল প্রাইজ আসলে কি? আবার নোবেল কে, কী, কেন, এ নিয়েও প্রশ্ন উঁকিঝুঁকি দিতো। কে দিবে সদুত্তর? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন-সেটা শৈশবেই জ্ঞাত হয়েছি। এও বুঝেছি রবীন্দ্রনাথের নামের শুরুতে বিশ্বকবি’র অভিধাটাও সে-তো নোবেল প্রাইজের সুবাদেই।
১৯০৬ সালে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে লেখা রবীন্দ্রনাথের “আমার সোনার বাংলা” সঙ্গীতটি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে দুই বাংলা এক হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বকবি যখন মহাপ্রয়াণে তখন ১৯৪৭ সালে আবার সোনার বাংলার অঙ্গচ্ছেদ হল।
তারপরও বড় গৌরবোজ্জ্বল সত্য এই যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু নন, আরও দুই বাঙালি নোবেল প্রাইজ লাভ করেছেন। অর্থনীতিতে অমর্ত্য সেন এবং শান্তিতে ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস। বাংলা অবিভক্ত থাকলে এ ত্রিরত্নের গৌরব হতো বাঙালিদেরই। কিন্তু বাস্তবতা রবীন্দ্রনাথ ও অমর্ত্য সেন পশ্চিম বাংলারও। মানে ভারতেরও। বাংলা এক রাষ্ট্র হলে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত কী রবীন্দ্রনাথের “জনগণমন” সঙ্গীতটি হতো?
যাহোক ফিরছি নোবেল প্রসঙ্গে। এ প্রাইজ “মরণোত্তর”দেয়ার বিধান নেই। জীবিতদের থেকে শ্রেষ্ঠ প্রতিভাগুলো নির্বাচিত হয়। যে কারণে অহিংসবাদের প্রবক্তা মহাত্মা গান্ধী শান্তিতে নোবেল প্রাইজের জন্য মনোনীত হয়েও তা পাননি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ওই বছর ১৯৪৮ সালে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী হত্যার শিকার হন। নোবেল কমিটি গান্ধীজীর প্রতি সম্মানপ্রদর্শনপূর্বক সেই বছর কাউকেই শান্তিতে নোবেল প্রাইজ দেয়নি।
বলাবাহুল্য মরণোত্তর প্রাইজ লাভের সুযোগ থাকলে হয়তো স্যার জগদীশ চন্দ্র, অতীশ দীপঙ্করের মতো জগদ্বিখ্যাত অনেক বাঙালিই নোবেল প্রাইজে ভূষিত হতেন।
“ইচ্ছাপত্র”
নোবেলের মৃত্যুর পর তাঁর লিখিত একটি ‘ইচ্ছাপত্র’ নিয়ে দু’তরুণ আবির্ভূত হন। কিন্তু নোবেলের আত্মীয়রা মানতে রাজী নয়। অঢেল পরিমাণ অর্থ! ভাগ থেকে বঞ্চিত হওয়া তো বেদনাকেই হজম করা।
তা ছাড়া ‘ইচ্ছাপত্র’টি তৈরিতে আইনজীবীর সাহায্য নেয়া হয়নি। অতএব এটা বৈধ নয়। এমন এক পরিস্থিতিতে সুইডেনের রাজাকে এগিয়ে আসতে হয় হস্তক্ষেপ করতে। নোবেলের অন্তিম ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ইচ্ছাপত্রটির কার্যকারিতার জন্য রুডলফ লিলিকিস্ট ও রগনার সোলমান গড়লেন “নোবেল ফাউন্ডেশন।”
১৮৯৮ সালের ৫ জুন এর আত্মপ্রকাশ ঘটলো। নোবেলের আত্মীয়রাও মানতে বাধ্য হলো। তবে আত্মীয়রা একটিমাত্র শর্ত দিল। পুরস্কার দেওয়ার জন্য নিয়মবিধি ঠিক রাখতে আলফ্রেড নোবেলের ভাই রবার্ট নোবেলের পরিবারের মনোনীত একজন প্রতিনিধির সঙ্গে যেন পরামর্শ করে নেয়ার। সুইডেনের মহামান্য রাজার কাছে ইচ্ছাপত্রটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলো। রাজা ১৯০০ সালের ২৯ জুন, নোবেল ফাউন্ডেশনের নিয়মবিধিও অনুমোদন করলেন।
নোবেলের সমস্ত সম্পত্তির হিসাব করে সেগুলো বিক্রি ও বিক্রির টাকাকে মূলধন হিসাবে লাভজনক ব্যবসায় লগ্নি করে, সেই টাকার ওপর আয় থেকে পুরস্কার দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো।
নোবেলের নির্দেশ মতে পাঁচটি প্রাইজ দেয়া হবে শ্রেষ্ঠ অবদানের জন্য। পুরস্কার বিতরণের দিন ঘোষিত হল ১০ ডিসেম্বর। যে তারিখে আলফ্রেড নোবেল মৃত্যুবরণ করেন। এরপর ১৯০১ সাল থেকেই দেয়া হচ্ছে নোবেল প্রাইজ।
এই পাঁচটি প্রাইজ হল, এক.পদার্থবিদ্যা দুই. রসায়নবিদ্যা তিন. চিকিৎসাবিদ্যা চার. সাহিত্য এবং পাঁচ শান্তি।
১৯৬৮ সালে নোবেলের ইচ্ছাপত্রের বাইরে অর্থবিজ্ঞানে আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতিতে ব্যাংক অফ সুইডেন পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। (Bank oF Sweden Prize in Economic Scinces in Memory of Alfred Nobel)
নোবেল প্রাইজও বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। যদিও এটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাইজ। সুইডেন ও নরওয়েতে বসে এ প্রাইজ অর্জনকারীদের নির্বাচন করা হয়।
প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন ছাড়া প্রতিবছর নোবেল প্রাইজ দেয়া হচ্ছে।
“নোবেলেও বিতর্ক”
নোবেল প্রাইজও বৈদগ্ধ্যের জগতে একটা বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে বলে মনে করেন অনেকে। প্রতিহিংসা, স্বজনপোষণ,স্বার্থপরতার অভিযোগও রয়েছে নোবেল ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে।
মূল কাজ হলো টাকার যোগান দেওয়া। এজন্য কোন লাভজনক ব্যবসায় মূলধন খাটিয়ে বেশি উপার্জন করা যায়, সেদিকে থাকে দৃষ্টি। প্রাইজ প্রাপকদের বিশাল ব্যয় মেটানো হয় মূলধনের ওপর অর্জিত আয় থেকে। প্রাইজের জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর এবং প্রাইজ বিতরণের আগে যদি কোন বিজয়ীর মৃত্যু হয়, তাহলে প্রাইজটি দেওয়া হয়। কোন অবদানই প্রাইজের জন্য বিবেচিত হয় না, যদি নির্বাচকমণ্ডলী মনে করে যে যে অবদানটি “নোবেলের ইচ্ছাপত্র” অনুযায়ী যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নয়।
যদি কোন অবদান বা কাজই প্রাইজের জন্য নির্বাচিত না হয়, তাহলে প্রাইজের অর্থমূল্য পরের বছরের জন্য তোলা থাকে। যদি পরের বছরও প্রাইজটি না দেওয়া যায় তবে সেই পরিমাণ অর্থ মূলধনের সঙ্গে যোগ হয়। কোন ব্যক্তিই প্রাইজের জন্য বিবেচিত হন না, যদি মনোনীতকরণের অধিকার দেওয়া আছে এমন কেউ তাঁকে লিখিতভাবে মনোনীত না করেন। প্রাইজের জন্য কারো ব্যক্তিগত আবেদন বিবেচনা করা যায় না। প্রাইজের জন্য মনোনয়ন পাঠানোর অধিকার কাদের দেওয়া হবে, সে বিষয়ে প্রাইজ প্রদানকারী সংস্থা নোবেল ফাউন্ডেশনই সিদ্ধান্ত দেয়।
১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সে বছরের প্রাইজের জন্য মনোনয়ন পৌঁছতে হবে কর্তৃপক্ষের কাছে। যদি কোন কোন বিজয়ী প্রাইজ নিতে অস্বীকৃতি জানান অথবা প্রাইজের চেকটি ভাঙ্গিয়ে পরের বছর ১ অক্টোবরের মধ্যে অর্থ না তুলে নেন, তবে সেই প্রাইজের অর্থ মূলধনের সঙ্গে যুক্ত হবে।যদি সম্ভব হয় ১০ ডিসেম্বরের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে ৬ মাসের মধ্যে প্রত্যেক নোবেল লরিয়েটকে তাঁর অবদানের ওপর একটি বক্তৃতা দিতে হয়।
শান্তি প্রাইজের জন্য অসলোতে ও বাকীগুলোর জন্য স্টকহোমে…..বক্তৃতার আয়োজন করা হয়। প্রাইজ বিজয়ীদের নির্বাচনের বিষয়ে সংস্থার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং এর বিরুদ্ধে কোনরকম আপীল গ্রাহ্য করা হয় না। বিজয়ীদের নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্রও গোপন রাখা হয়। তবে নোবেল ফাউন্ডেশন যদি মনে করে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন ঐতিহাসিক গবেষণার প্রয়োজনে গবেষককে এসব নথিপত্র দেখার অনুমতি দিতে পারেন তবে প্রাইজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর অন্ততপক্ষে ৫০ বছর অতিক্রম হতে হবে। ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধিত্ব করে একটি বোর্ড, যা অবস্থিত হবে স্টকহোমে।
সমস্ত সম্পত্তির পরিচালকও বোর্ড। নোবেলের উইল মতে পূর্ববর্তী বছরের কাজ বা অবদান বলতে ধরা হবে সাম্প্রতিক অথবা পুরানো কাজ কিন্তু যার গুরুত্ব ইদানীং বোঝা গেছে। শ্রেষ্ঠ হিসাবে যদি দুটি কাজকে বেছে নেয়া হয় তবে প্রাইজের অর্থ সমানভাগে ভাগ করে দেয়া হয়। যে কাজটি দুজন বা তিনজন মিলে করেছেন সেই কাজের জন্য তাঁরা সবাই যৌথভাবে প্রাইজ পাবেন। কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই একটি প্রাইজ তিনজনের বেশি ব্যক্তিকে দেয়া হয় না।
আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে ১০ ডিসেম্বর উদযাপন করা হয় “নোবেল সপ্তাহ।”
সুইডেনের প্রাইজ বিতরণী অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয় স্টকহোমের বিশাল কনসার্ট হলে। শান্তি প্রাইজটি অসলো টাউন হলে। স্টকহোমের অনুষ্ঠানে সুইডেনের রাজার হাত থেকে প্রাইজের ডিপ্লোমা ও স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন বিজয়ীরা। অনুষ্ঠানের শেষে স্টকহোমের সিটি হলে এক ব্যাংকোয়েটের আয়োজন করা হয়। যেখানে সপরিবারে প্রাইজ বিজয়ীরা ছাড়াও অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তির সঙ্গে উপস্থিত থাকেন সুইডেনের রাজা, রানী ও রাজপরিবার ও পার্লামেন্ট সদস্যরা। অসলোতে শান্তি প্রাইজটি প্রদান করেন নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান।
১৯০১ থেকে নোবেল প্রাইজ দেয়া হচ্ছে। সুইডেনের ভাস্কর এরিক লিন্ডবার্গ ও নরওয়ের ভাস্কর গুস্তাফ ভিগল্যান্ড যে চারটি পদকের বা প্রাইজের ডিজাইন করেন তা আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতিটি পদকের ওজন প্রায় দুশো গ্রাম ও ব্যাস ছেষট্টি মিলিমিটার। ১৯৮১ সাল থেকে পদকগুলো তৈরি হয় ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণের ওপর ২৪ ক্যারেটের প্লেটিং করে। সুইডেন থেকে দেওয়া চারটি পদকের সামনের পিঠটা একইরকম।
মুক্তিযোদ্ধের চেতনায় সত্য প্রকাশে স্বাধীন
নোবেলের আবক্ষ প্রতিকৃতির সঙ্গে তাঁর সংক্ষিপ্ত নাম ALFR. NOBEL ও ল্যাটিনে NAT -MDCCXXXIIIO B-MDCCCXCVI, (অর্থাৎ জন্ম – 1833 মৃত্য- 1896) খোদাই করা থাকে। নরওয়ে থেকে দেওয়া শান্তি প্রাইজে নোবেলের প্রতিকৃতি আবক্ষ নয়, গলা পর্যন্ত। সুইডিশ পদকগুলোর পেছনে প্রাইজ দেওয়ার বছর, যে সংস্থা দিচ্ছে সেই সংস্থার প্রতীক ও তার নীচে লেখা থাকে প্রাইজ বিজয়ীর নাম ও পরিধি বরাবর বৃত্তাকারে লেখা থাকে “INVENTAS VITAN JUVAT EXCOLUISSEPER ARTES” ইংরেজি এর অর্থ হলো Inventions enhance life which is beautified through art”
প
দার্থ ও রসায়নের পদকে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সের সংক্ষিপ্ত নাম খোদাই করা থাকে এভাবে – REG,ACAD, SCIENT, SUEC. চিকিৎসা বিদ্যার পদকে কারোলিনসকা ইনস্টিটিউটের নামঃ REG, UNIVERSITAS,MED, CHIR, CAROL এবং সাহিত্য পদকে সুইডিশ একাডেমির নামঃ ACAD.
শান্তিপদকে নোবেলের মুখের প্রতিকৃতির উল্টোপিঠে খোদাই করা থাকে, মৈত্রীর প্রতীক হিসাবে তিনজন নগ্ন মানুষের প্রতিকৃতি। যারা হাত ধরাধরি করে একটা বন্ধনীর সৃষ্টি করেছে। এতে লেখা থাকেঃ PRO PACEET FRATERNITATE GENTIUM অর্থাৎ For peace and brotherhood of men
প্রায় ৩ মিলিমিটার পুরু এই পরিধি বরাবর অংশটিতে লেখা থাকেঃ PRIX NOBEL DE LA PAIX (শান্তির জন্য নোবেল প্রাইজ) এবংপুরস্কার দেওয়ার বছর ও বিজয়ীর নাম। শান্তি প্রাইজের জন্য নরওয়ে পার্লামেন্ট যে কমিটি নির্বাচন করে তার নাম রাখা হয়েছে নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটি। নোবেল ফাউন্ডেশন প্রেস রিলিজের মাধ্যমে বিজয়ীদের নাম সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দেয়।
নোবেলের জীবনের গল্প
স্কুল কলেজে অধ্যয়ন না করায় আলফ্রেড নোবেলের কোন প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছিল না।
সে কালে ই-মেইল দূরে থাক টেলিফোন, ফ্যাক্ম, টেলেক্স কম্পিউটার কোন কিছুরই অস্তিত্ব ছিল না। অথচ নোবেল সেই যুগে ২১টি দেশে বিভিন্ন শিল্পকলকারখানার মালিক ছিলেন।
ফরাসী মনীষী ভিওর যুগো নোবেলকে ইউরোপের সবচেয়ে ধনী বাউন্ডুলে বলেছিলেন। শিল্পপতি,প্রযুক্তিবিদ, উদ্ভাবক, বিস্ফোরক ও অস্ত্রনির্মাণ কারখানার মালিক। নোবেল কবি নাট্যকার ঔপন্যাসিকও।
বিস্ফোরক ও অস্ত্রনির্মাণ কারখানার মালিক, আবার বিশ্বশান্তির জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাইজেরও প্রবর্তক!
নোবেল ঈশ্বর সম্পর্কে বলেন, ‘এটা বোঝা যায় না মানুষ ঈশ্বরের ধারণাটি কেন তৈরি করেছে।’
বার্নার্ড শ নোবেল প্রাইজ নিবেন না বলেও অবশেষে নেন। কিন্তু বলেন, আলফ্রেড নোবেলকে আমি ডিনামাইট উদ্ভাবনের জন্য ক্ষমা করতে পারি কিন্তু মনুষ্যরূপী একজন শয়তানই নোবেল প্রাইজ উদ্ভাবন করতে পারে।
শিল্পসাম্রাজ্যের অধিপতি হয়েও নোবেল ছিলেন নিঃসঙ্গ। একাকীত্বের মুক্তির জন্য সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিলেন। ‘উচ্চশিক্ষিত পরিণতবয়স্কা বহুভাষী একজন মহিলা সেক্রেটারি চাই – যিনি আলফ্রেড নোবেলের দেখভাল করতে পারবেন।’
সত্যিই অস্ট্রিয়ার বার্থা কিনস্কী নামক এক মহিলা জুটে গেলো। সেক্রেটারি হিসেবে তাকে নিয়োগ দিলেন।
‘Lay Down Your Arms’ শীর্ষক বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থের লেখিকাই এই বার্থা। যুদ্ধ বিরোধী সংগ্রামে বার্থার প্রভাব এতটাই ছিল যে নোবেলকে বিশ্বশান্তির জন্য ‘শান্তি পদক’ প্রবর্তন করতে হয়। ১৯০৫ সালে বার্থাকে শান্তিপদকও প্রদান করা হয়। নোবেলের সাহিত্যে পদক প্রবর্তনও বার্থারই মনের প্রতিফলন।
‘মৃত্যুর সওদাগর’ শীর্ষক নোবেলের কবিতায় ফুটে ওঠে রোমাঞ্চকর আদর্শ।
ইংরেজিতে লেখা তাঁর কবিতার শিরোনাম ‘You say I am a riddle it may be for all of us are riddles unexplained, Begun in pain, in deeper torture ended, This breathing clay what business has it here?
নোবেল কবিতাটি উৎসর্গ করেন একটি সুন্দর মেয়েকে – অত্যন্ত অল্পবয়সে যার কবরের সঙ্গে বিয়ে হয়।
আলফ্রেড নোবেল বলেন, ‘আমি মনুষ্যবিরোধী তবুও অত্যন্ত সদয় উপকারী। আমার মাথার কয়েকটি স্ক্রু ঢিলে অথচ আমি চরম আদর্শবাদী। আমার কাছে খাবারের চেয়েও দর্শনশাস্ত্র হজম করা সহজ।
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট।