হবিগঞ্জের মাধবপুরে আগাম শিম চাষ করে উপজেলার চাষিরা ব্যাপক লাভবান হচ্ছেন। ভাল ফলন ও দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। ধান-পাট চাষের অব্যাহত ক্ষতি পুষিয়ে নিতে তাদের এ শিম চাষ। বিগত বছরের তুলনায় এবার তারা শিমের বেশী দাম পাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং আরো এক মাস ভাল দাম পেলে প্রতিটি শিম চাষির ঘরে আনন্দের বন্যা বইবে এমন প্রত্যাশা এ উপজেলার শিম চাষিদের।
উপজেলার ধর্মঘর, চৌমুহনী, বহরা, জগদীশপুর, শাহজাহানপুর, তেলিয়াপাড়া, নয়াপাড়া, বাঘাসুরা, ছাতিয়াইন সহ কয়েকটি গ্রামের মাঠে প্রচুর পরিমাণ শিম চাষ হয়েছে। এলাকাঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ শিম ফুলে ভরে উঠেছে চাষি শিমক্ষেতে সেচ ও বীজ দিচ্ছে। করছে শিম গাছের পরিচর্যা। কেউ তুলছেন শিম। শাহপুর গ্রামের মাঠে কয়েকজন চাষির সাথে কথা হয়। তারা জানান স্থানীয়ভাবে তৈরি উন্নত জাতের শিম চাষ করেছেন এলাকার চাষিরা।
জানা যায় ওই গ্রামের শাহজাহান মিয়া সাড়ে ৪ বিঘা রিপন ২ বিঘা আলামিন সিরাজ ও আব্দুল হক এক বিঘা করে জমিতে শিম চাষ করেছেন। তারা জানালেন, সাধারণত মাঝ আষাঢ়ে শিম চাষ করতে হয়। এবার এলাকার চাষীরা জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি শিম চাষ শুরু করেছেন। আগাম শিম উঠছে। মাধবপুর বাজারে পাইকারি ২ হাজার ৮শ’ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা মন দরে এ শিম বিক্রি হচ্ছে। জালুয়াবাদ গ্রামের চাষি আকবর দেড় বিঘা জমিতে শিম চাষ করেছেন তিনি জানালেন, এ পর্যন্ত তার ৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে শিমের আবাদ শেষ হওয়া পর্যন্ত তার দেড় বিঘা জমির পিছনে ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা খরচ হতে পারে।
গেল সপ্তাহে তিনি প্রথম দিনে ২৫ কেজি শিম তুলেছেন। শাহপুর বাজারে ওই শিম ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তিনি এখন প্রতি সপ্তাহে শিম তুলবেন। তিনি বললেন, মাঘ মাস পর্যন্ত ক্ষেত থেকে শিম তোলা যাবে। ভাল দাম পেলে বিঘা প্রতি ৬০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন। যদি আরো এক দেড় মাস প্রতি কেজি শিমের দাম ৪০ টাকা বা তার বেশী পান তবুও বিঘা প্রতি ৪০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বাড়াচান্দুরা গ্রামের চাষি ওয়াহাব মিয়া জানান তিনি ১০ কাঠা জমিতে শিম চাষ করেছেন।
তিনি জানালেন, গেল সপ্তাহে প্রথম দিনে ক্ষেত থেকে ২ মন শিম তুলে মাধবপুরে পাইকারি ৩ হাজার টাকা মন দরে বিক্রি করেছেন। তিনি বলেছেন, এ পর্যন্ত ওই জমিতে তার যে খরচ হয়েছে তা প্রথম দিনের বিক্রিত শিমের দামে ওঠে গেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে চাষ, বীজ-সেচ, সার-বিষ ও লেবার বাবদ প্রতি বিঘা শিমে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে। গত বছর তার মাত্র ৮ কাঠা জমিতে শিম চাষে খরচ বাদে ৪০ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল এবছরও তিনি মোটা টাকা লাভের আশাবাদী।
মাধবপুর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী ছোট্টু মিয়া জানান, বাজারে খুচরা শিম বিক্রির জন্য আসছে না বললেই চলে। গ্রামের শিম চাষিরা বিকেলে বিকেলে শিম নিয়ে আড়তে দিচ্ছে। মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, এবছর শিম চাষ ভাল হয়েছে। আবহাওয়া বৈরি না হলে শিম চাষে চাষি খুব ভাল লাভবান হবেন এবছর মাধবপুর উপজেলায় ৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়েছে।