কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে একটি কওমী মাদ্রাসায় নির্ধারিত পড়া না লিখে অন্য একটি লেখা লিখে জমা দেয়ার অপরাধে সাত বছরের এক শিশু শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে মারপিট করেছেন এক শিক্ষক। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার পাথরডুবি ইউনিয়নের ঢেবঢেবি বাজার কিসমত কুলছুম কওমি মাদরাসায়।
পিটানোর একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে জানতে পারেন ওই শিক্ষার্থীর বাবা। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে বিষয়টি নিয়ে সোমবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল ৫টার পর মিমাংসা করতে বৈঠকের আয়োজন করে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে; লাভলু মিয়া মিলন নামের প্রোফাইলে মারপিটের ১ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপটি আপলোড করা হয়। সেখানে লেখা হয়, ভাবতে অবাক লাগে এটা আর কোথাও নয় ভূরুঙ্গামারীর পাথরডুবি ঢেবঢেবি বাজার কিসমত কুলছুম কওমি মাদরাসার শিক্ষক আবু সাইদের হাতে নির্যাতনের শিকার কোমলমতি মাদরাসা ছাত্র। অভিভাবকদের অনুরোধ করছি আপনার শিশুকে ইসলামিক শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন ভালো কথা। কিন্তু দয়া করে বোর্ডিং মাদরাসায় দিবেন না। এমনটা নয় যে ইসলামিক শিক্ষা নিতে গেলে বোর্ডিং মাদরাসায় দিতেই হবে। শিশু নির্যাতন বন্ধে প্রশাসনের প্রতি কঠোর আইন প্রয়োগের অনুরোধ করছি।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, রাতের ক্লাসে অভিযুক্ত মাদরাসা শিক্ষক একহাতে একটি বই ও অন্য হাতে একটি লাঠি (বেত) নিয়ে বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর গোলাপি পাঞ্জাবি পরিহিত একজন শিক্ষার্থীকে একটি আঘাত করেন। পরে সাদা পাঞ্জাবি পরা একজন শিশু শিক্ষার্থীকে মাথা নিচু করে মাটিতে লাগিয়ে পিছনে সজোরে কয়েকটি আঘাত করেন। পরে ওই শিক্ষার্থীর হাত ধরে বেধড়ক পেটাতে থাকেন, আবার কখনও মাটিতে আছড়াতে থাকেন। এতে ওই শিক্ষার্থী চিৎকার করতে থাকে।
ভিডিওটির সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই শিক্ষার্থী পাথরডুবী বাজারের বাসিন্দা এবং ঢেবঢেবি বাজারের ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেনের ছেলে লাম মিয়া ওরফে লাল মিয়া (৭)। সে ওই মাদরাসার দ্বিতীয় জামায়াতের শিক্ষার্থী।
মোতালেব হোসেন জানান, ঘটনাটি গত মাসের (মার্চ) ২৭ তারিখের। ছেলেকে বাড়ির কাজের জন্য নির্দিষ্ট একটি লেখা লিখে আনতে দিয়েছিল। কিন্তু সে অন্য একটি লেখা লিখে নিয়ে যাওয়ায় এমন মারপিট করেছেন হুজুর। ছেলে বাড়িতে এসে এসব বিষয় ভয়ে জানায়নি। সোমবার আমি মোবাইলে ভিডিওটি দেখে আৎকে উঠি এবং ছেলেকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে ঘটনা শুনতে চাই। ছেলে হুজুরের ভয়ে আমাদের বিষয়টি জানায়নি। তবে বিষয়টি ফয়সালা হয়েছে তাই আমার কোন অভিযোগ নাই হুজুরের প্রতি।
এ বিষয়ে মাদরাসাটির প্রধান মৌলভী (শিক্ষক) মাওলানা আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, শিক্ষক আবু সাঈদ পাথরডুবি বাজারের হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি দেড় বছর থেকে মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। দ্বিতীয় জামায়াতের ওই শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়ে সোমবার বাদ আছর মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এবং নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী লাম মিয়ার অভিভাবককে নিয়ে একটা মিটিং হয়েছে। মিটিংয়ে শিক্ষক আবু সাইদকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আবু সাইদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পাথরডুবি ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এরফান আলী বলেন বিষয়টি আমি শুনেছি গতকাল মিটিং হওয়ার কথা ছিল কিন্তু কেউ আমাকে জানায়নি।
ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, আমি ও এসিল্যান্ড মহোদয়সহ আমরা ভিকটিমের বাড়িতে গিয়েছি। ঘটনা গত মাসের কিন্তু ভিকটিমের বাবার কোন অভিযোগ না থাকায় আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারছি না।তবে কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।
ভুরুঙ্গামারী সার্কেলের এএসপি মো. শওকত আলী জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভুরুঙ্গামারী থানার ওসি আলমগীর হোসেনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।