হবিগঞ্জের মাধবপুরে বোরো ধান লওয়ার শেষ হতে না হতেই চলছে নকশী কাঁথার বুননের উৎসব। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে গ্রামের মহিলারা ধান লওয়ার কাজ শেষ করে আপন মনে নকশী কাঁথা বুননের উদ্যোগ আয়োজন করে। রুবি পাল।
মাধবপুর মৌলানা আছাদ আলী সরকারি কলেজের ডিগ্রী প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। করোনা সংকট শুরুর পর কলেজ বন্ধ। ঘরবন্দী জীবনের একঘেয়মি কাটাতে কিছু একটা করার ইচ্ছে জাগে তার। একটি ফেসবুক গ্রুপে নকশি কাঁথার কাজ দেখে ভালো লাগে। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করেন নকশি কাঁথা তৈরির কাজ। অনলাইনে নকশি কাঁথা বিক্রি করে মাত্র এক বছরেই আশাতীত সাফল্য পেয়েছেন সখি। তার তৈরি নকশি কাঁথা ব্যক্তি থেকে ছড়িয়ে পড়েছে দেশের সব প্রান্তে। এখন সুই-সুতোয় সম্ভাবনার স্বপ্ন বুনছেন তিনি। রুবি পাল হরিশ্যামা গ্রামের মনোরঞ্জন পালের মেয়ে ও তার ভাই রনি। দুই ভাইবোনের মধ্যে রুবি বড়। তার ছোট ভাই রনি সেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্র। আলাপকালে রুবি পাল বলেন, করোনা শুরুর হওয়ার পর কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। বাড়িতে বসে থেকে সময় কাটছিল না। এই সময়টাকে কাজে লাগাতে কিছু করার ইচ্ছা করছিলাম। কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। এর মধ্যে আমাদের গ্রামের আরো সহপাঠীরা নকশী কাঁথা বুননের উদ্যোগ নিলে আমিও নকশী কাঁথা বুননের প্রয়াস করি। আমি নিজে সেলাইয়ের কাজ জানতাম অল্প। এখন পুরোপুরি সেলাইয়ের কাজ পারি। নকশি কাঁথার কাঁচামাল বাজার থেকে কাপড় কিনে নিয়ে এসে প্রথমে কাপড়ের ওপর যে ডিজাইন হবে, সেটি আঁকাই। তারপর সুই-সুতা দিয়ে সেলাই করে নকশি কাঁথা তৈরি করা হয়। এ কাজ পুরোটাই হাতে করা হয়। এখন আমার নিজেরই একটা পুঁজি তৈরি হয়েছে। বাড়িতে অনেক রকমের কাপড় কিনে রেখেছি। আামদের গ্রামের প্রতিটি বাড়ির মহিলারাই এ কাঁথা সেলাই নিয়ে ব্যস্থ থাকে। রুবি জানান, বাচ্চাদের জন্য নকশি কাঁথা প্রতি পিস সর্বনিম্ন ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, বড়দের জন্য প্রতি পিস সর্বনিম্ন ২০০০ থেকে ৪২০০ টাকা।
একই গ্রামের বাসন্তি দাশ বলেন, করোনায় লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছিলাম। এমনিতে পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না। তবে লেখাপড়ার ফাঁকে অবসর সময়ে নকশী কাঁথা সেলাই করে সময় কাটাচ্ছি ও মনের দুশ্চিন্তাও দূর হয়েছে। আমি লেখাপড়ার পাশাপাশি নকশি কাঁথার কাজ করে আয় করে পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারছি।
আমি অনেক সময় ভারতীয় সিরিয়াল দেখে নমুনা সংগ্রহ করে নকশী কাঁথা ডিজাইন তৈরি করি। আমি চাই তাদের মতো আরও নারী সাংসারিক কাজের পাশাপাশি উদ্যোক্তা হয়ে উঠুক। শুধু আমি নই, আমার এলাকার অন্যান্য নারীদের পাশে থেকে তাদের নিয়েই সামনে এগোতে চাই। তাদের ব্যবসায়ী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তিনি বিশ্বাস করেন, একটু সহায়তা পেলেই বাংলাদেশের পণ্য বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতা করে দেশের অবস্থান আরও উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবে। এ ব্যাপারে মাধবপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জান্নাত সুলতানা বলেন, নারী উদ্যোক্তারা যদি এভাবে সামনের দিয়ে এগিয়ে আসে তাহলে সমাজে পুরুষের উপর আর নির্ভরশীল হতে হবে না। যদি আরো গ্রামের কয়েকজন নারী এ নকশী কাঁথা প্রসারের জন্য ব্যবস্থা করে তাহলে তাদের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট কর্মসংস্থানের জোর দাবি জানাবো।