হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মনতলা, ধর্মঘর, চৌমুহনী, শাহজাহানপুর, সুরমা, তেলিয়াপাড়া, বৈকুণ্ঠপুর, নোয়াপাড়া এসব উঁচু জায়গায় রয়েছে এ লটকন বাগান। বছর ঘুরে আবারও গাছে গাছে ঝুলছে সুস্বাদু টক মিষ্টি ফল লটকন। সেই লটকনের স্বাদ আর সৌন্দর্য দেখতে দে-ছুট ভ্রমণ সংঘর প্রিয় শুভাকাঙ্খী মাধবপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাব্বির হাসান জানান, আগে ভাগেই কোন কোন বাগানে ঘুরব তা ঠিক করে রেখেছিলেন। কারণ সব বাগানের ফলন এক রকম না। আরে এটা তো বসত বাড়ি নয় যেন বাগানবাড়ি। বাড়ির আঙ্গিনায় হরেক পদের ফল ও ফুল গাছ। কাচা পাকা লটকন আর বিশাল বিশাল সাইজের কাঁঠাল ঝুলছে গাছে গাছে।
কমরে-বুকে হাত দিয়ে ছবি তুলতে পছন্দ করা বন্ধুরাও এবার পুরানা অভ্যাস ভুলে গিয়ে লটকন-কাঁঠালে হাত বুলিয়ে ফটোসেশনে মহা ব্যস্ত। যাই এবার জুমা আদায়ে। নামাজ শেষে বেলা প্রায় তিনটা। আর দেরি নয়, বের হয়ে গেলাম বাগান দেখতে। বাড়ি হতে বাগান প্রায় ২ কিলোমিটার। গাড়ি চলছে, অবারিত সবুজের মাঝে পিচ করা সরু পথে। চারপাশ সবুজ আর সবুজ। প্রকৃতি যেন তার সবটুকুন উজাড় করে দিয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁঁছাই নির্ধারিত বাগানে। বাগানে ঢুকতেই চোখে ধরা দেয় এক অন্যরকম প্রকৃতি। যতই এগিয়ে যাই ততোই যেন মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। ধীরে ধীরে ডুবে যাই আমরা, শত শত গাছে ঝুলে থাকা লটকনের স্তুপে। যতদূর চোখ যায়, শুধু লটকন আর লটকন। অনুমতি থাকায় আমরা যে যার ইচ্ছে মতো, গাছ থেকে পেরে খাই। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। গোলাকৃতির এই ফল মাত্র এক দশক আগেও অনেক কম ছিল। থোকায় থোকায় এই ফল একেবারে গাছের গোড়ার প্রায় মাটি স্পর্শ হতে মগডাল পর্যন্ত ধরে থাকে। পাকা ফল হলদে ও অনেকটা জাফরান আর কাচা অবস্থায় প্রায় সবুজ রঙা থাকে। লটকন ফল নানান জেলায় ভিন্ন ভিন্ন নামে ডেকে থাকে। যেমন লটকা, ডুবি, বুবিসহ আরও হরেক নামে। এখন সেই পাগলা গোটা ডুবি বিক্রি করে অনেকেই সংসার চালান। সময়ের আবর্তনে লটকন এখন দেশের অর্থকরী ফসল। ফলে আনন্দের মাত্রা বেড়ে হয় দ্বিগুণ। ভর সন্ধ্যায় যখন তার আড্ডাস্থল বাড়ির ছাদে উঠি, তখন মনে হলো অতিরিক্ত খাবারে যতটুকুন ক্লান্তি ছিল তা যেন নিমিষেই হলো উধাও। চার পাশে শুধু নানান গাছ গাছালি আর সবজির ক্ষেত। পুরো গ্রামটিই যেন নানান শষ্যের ভান্ডার। বিশাল সবুজ ভূখন্ডের মাঝে আমরা অতিকায় ক্ষুদ্র প্রাণী। মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন হাছান জানান, আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এ বছর এ জাতীয় ফলের ফলন বেশি হয়েছে। মাঝে মধ্যে ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বৃষ্টি হওয়ায় গাছের পানির চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভুমিকা রেখেছে। এটি টক ফল হওয়ায় সবাই এটাকে বেশি ভালোবাসে।