দেওয়ানি আদালতে বিচারাধীন মামলার বাদী ও বিবাদী পক্ষকে নিয়ে থানায় সালিশ করার অভিযোগে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) রওশন কবির আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যাসহ ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সকালে কুড়িগ্রাম জজ কোর্টের (দেওয়ানী আদালত, নাগেশ্বরী) সিনিয়র সহকারী জজ রবিউল ইসলামের আদালতে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ওসি।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বে সহকারী হামিদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে দেওয়ানি আদালতে বিচারাধীন মামলার বাদী ও বিবাদী পক্ষকে নিয়ে থানায় সালিশ করার অভিযোগে গত ১৫ই জুন কুড়িগ্রাম জজ কোর্টের (দেওয়ানী আদালত, নাগেশ্বরী) সিনিয়র সহকারী জজ রবিউল ইসলাম নাগেশ্বরী থানার ওসিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। একই সাথে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ লঙ্ঘনের অভিযোগে কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তারও লিখিত ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে নির্ধারিত সময়ে আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে ওসি রওশন কবির আদালতে তার লিখিত বক্তব্য দাখিল করেন। এসময় আদালত থানায় এ ধরনের সালিশ আয়োজন করা থেকে বিরত থাকতে ওসিকে নির্দেশ প্রদান করেন।
আদালত সূত্র আরও জানায়, লিখিত বক্তব্যে ওসি সালিশ আয়োজনে নিজে কোনও ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে উল্লেখ করেছেন এবং সংশ্লিষ্ট জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকার বিষয়টি তিনি আগে থেকে অবগত ছিলেন না বলেও দাবি করেছেন। বরং সালিশে বাদী পক্ষের আইনজীবী আবু বক্কর সিদ্দিক এবং বিবাদী পক্ষের আইনজীবী নাজিরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন বলে লিখিত ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন ওসি।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বে সহকারী হামিদুল ইসলাম জানান, ওসি রওশন কবিরের দাখিলী লিখিত বক্তব্য পর্যালোচনা করে আদেশের জন্য আদালত আগামী ২৯শে জুন পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন।
প্রসঙ্গত, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা শ্রী বীরেন্দ্রনাথ মোদক বাদী হয়ে নাগেশ্বরী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন। এনিয়ে বিবাদী প্রমোদ গংকে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় আদালত। বিবাদী আদালতে হাজির হয়ে লিখিত আপত্তি দাখিলের জন্য সময়ের প্রার্থনা করলে আদালত সময়ের আবেদন মঞ্জুর করার পাশাপাশি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাদীপক্ষের অনুকূলে অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন। কিন্তু পরবর্তীতে বাদী আদালতে লিখির অভিযোগ করে জানান, বিবাদী প্রমোদা চন্দ্র গং বিষয়টি থানা পুলিশের মাধ্যমে সুরাহার উদ্দেশ্যে নাগেশ্বরী থানা পুলিশের দ্বারস্থ হলে নাগেশ্বরী থানা পুলিশ এ নিয়ে বাদী ও বিবাদীকে তলব করে থানায় সালিশ বৈঠকের অয়োজন করে। এসময় বাদী থানা পুলিশকে বিচারাধীন মামলার কাগজপত্র দেখালেও পুলিশ বাদীকে জোরপূর্বক বিরোধ মিমাংসার চাপ প্রয়োগ করে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন বাদী বীরেন্দ্রনাথ মোদক। এরই প্রেক্ষিতে নাগেশ্বরী থানার ওসিকে সশরীরে হাজির হয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেয় আদালত।