ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এর মধ্যে অন্যতম একটি ঋতুর নাম ‘বর্ষা’। আজ মঙ্গলবার (২৯ জুন) আষাড় মাসের ১৫ তারিখ। কাগজে-কলমে বর্ষা ঋতু হলেও বাস্তবে কোন মিল নেই। পানি শুণ্যতায় হাওড়গুলো হাহাকার করছে। এসময় খাল-বিল, ঝিল, জলাশয়সহ নদীগুলোতে পানি টুইটুম্বুর করার কথা ছিল। দখিনা সমীরণে ঢেউগুলো আচড়ে পড়ার কথা। সেখানে আজ এসব শুধুই কাজির কিতাবের কথা। বাস্তবে হাওড়ে গরু-ভেড়া চড়ছে। মাঝে-মধ্যে বৃষ্টিপাত হলেও প্রয়োজনের তুলনায় খুব-ই অপ্রতুল।
সরজমিনে দেখা যায়, বানিয়াচংয়ে ছোট-বড় অনেক হাওড় রয়েছে। এগুলোতে বৈশাখে ধান চাষ হয়। ধান কাটার পর পরই টানা বৃষ্টিপাত হলে খাল-বিল,ঝিল, জলাশয়সহ নদীগুলোতে পানি উপচে পড়ে। শুরু হয় বর্ষা। এক সময় এক গ্রাম থেকে অপর গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম ছিল নৌকা। দূর কোথাও যেতে হলে নৌকা ছাড়া কোন বিকল্প ছিল না। আর মৎস্য সম্প্রদায়ের লোকজন হাওড় থেকে মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
যেখানে পানি নেই সেখানে মাছ আহরণের কোন অবকাশ নেই। এমনিভাবে পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলেরা। অন্যদিকে হাওড়ে পানি না থাকায় হাট-বাজারেও দেশীয় মাছের আকাল দেখা দিয়েছে। দাম নাগালের বাইরে। বড় গাঙ, নয়া গাঙ, সুটকী নদী, রত্মা নদী, মন্দরী নদী ও ঝিংরি নদীসহ বেশ কয়েকটি জায়গা দিয়ে বানিয়াচংয়ে হাওড়ে পানি প্রবেশ করতো। সেগুলোতেও এবছর পানি নেই। পানি শুন্যতার কারণ সমূহ হচ্ছে, অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ ও সড়ক নির্মাণসহ ব্রীজ-কালভার্ট স্থাপন ইত্যাদি। সেই সাথে ভারত থেকে যথাসময়ে পানি না আসাকেও বর্ষায় পানি শুন্যতা থাকার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
বানিয়াচংয়ের অভ্যন্তরীণ অন্যতম একটি খাল ছিল সুনারু। সে খাল এখন বিলীনের পথে। কোথাও কোথাও এর অস্তীত্ব নেই। একদা যে সুনারু খাল ছিল অনেক বড় এবং দীর্ঘ সেটা নতুন প্রজন্ম বিশ্বাসই করতে চাইবে না। অথচ এ সুনারু খাল দিয়েই বানিয়াচংয়ে অভ্যন্তরীণভাবে যাতায়াত করতেন সকল শ্রেণিপেশার মানুষ। এ ছাড়া আরও যে সব খাল ছিল সেগুলোরও কোনটির অস্তীত্ব নেই এবং কোনটি মৃতপ্রায় অবস্থায় রয়েছে।যে কারণে অল্প-স্বল্প বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি- কাদা জমে যায়। ফলে দ্রুত সময়ে ভেঙ্গে যায় সড়ক। সৃষ্টি হয় খানাখন্দ। তখন ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। যা বর্তমানে উপজেলা সদরের অনেক সড়কই বৃষ্টির পানি আটকে সড়ক ভেঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। আর বিশেষ করে ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে জনভোগান্তি বাড়ছে।
বানিয়াচংয়ের বাহিরে বেষ্টিত ঐতিহ্যবাহী গড়ের খালও ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে। কোথাও তার স্বাভাবিক অবস্থা হারিয়ে জীর্ণশীর্ণকা অবস্থা বিরাজ করছে। অথচ এ গড়ের খালটি সম্পূর্ণ সরকারি। বেশ কয়েকবার উপজেলা মাসিক আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় গড়ের খাল পুনরুদ্ধারে সিদ্ধান্ত হলেও অদৃশ্য কারণে তা আর সম্ভব হচ্ছে না।
জাতুকর্ণ পাড়ার কৃষক আবুল আহমদ জানান, এখন বর্ষা মৌসুম হলেও হাওড়ে নেই পানি। যে হাওড়ে অনেক পানি থাকার কথা, সে হাওড়গুলোতে এখন আমরা গরু-মহিষ, ভেড়া চড়াচ্ছি। যদি পানি না আসে তাহলে মাছের আকাল দেখা দিবে এবং কৃষি কাজেও বিঘ্ন ঘটবে। কারণ হচ্ছে বর্ষা হলে পলিমাটি পড়ে জমিতে উর্বরতা দেখা দিত সেটা হবে না।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কাশেম চৌধুরী জানান, উপজেলা সদরের বড় বাজারে আমরা ড্রেনেজ ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সাগর দিঘির পশ্চিম পাড় (এল আর হাইস্কুল) সড়কে ড্রেনেজ ব্যবস্থা হয়েছে। গ্যানিংগঞ্জ বাজারেও আমরা ড্রেনেজ ব্যবস্থা করার নিমিত্তে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে বলেছি জায়গা দখলমুক্ত করতে।এটা বিলম্ব হচ্ছে। নেতৃবৃন্দ জায়গা বুঝিয়ে দিলেই আমরা ড্রেনেজ ব্যবস্থা শুরু করে দিতে পারব। ফান্ডিংয়ের কোন সমস্যা নেই।
আর সরকারি গড়ের খাল পুনরুদ্ধারে আমরা চেয়ারম্যান সাহেবদের দিয়ে কমিটিও গঠন করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। এ ক্ষেত্রে ইউপি চেয়ারম্যান সাহেবগণ ও গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে আসলে ৩/৬ মাসের মধ্যে গড়ের খাল পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে ইনশা আল্লাহ। সেটা নিয়ে সম্প্রতি পর্যটন শিল্প কর্পোরেশন দায়িত্বশীলদের নিয়ে জুম মিটিংয়ে সুবিস্তারে আলোচনা হয়েছে।