স্কুলের গন্ডি না পেরিয়ে বাল্যবিয়ের ঘটনা রীতিমতো অভিশাপ হয়ে দাড়িয়েছে দারিদ্রের রোষানলে পড়া কুড়িগ্রাম জেলার বেশ কয়েকটি স্কুলে। এরকম ঘটনায় হতাশা,উদ্বেগ আর আশঙ্কায় দিন কাঁটছে শিক্ষার্থীদের। তবে করোনাকালীন এ সময়ে এক স্কুলের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বিয়ে হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকগণের চোখে মুখে পড়েছে হতাশার ছাপ। দীর্ঘ দেড় বছর পর স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম থাকায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষকগণ।
এমনি একটি চিত্র দেখা গেছে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার বড় ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে।বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মুহাঃ মতিউর রহমান খন্দকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান বাল্যবিয়ে হওয়ার অন্যতম কারন হচ্ছে দারিদ্রতা।
তবে করোনাকালীন সময়ে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মনিটরিং অভাবে এরকম হয়েছে। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।
নবম শ্রেণির ছাত্রী আশা মনি জানান,দীর্ঘ বিরতির পর স্কুল খোলার খবরে যে আনন্দ নিয়ে স্কুলে এসেছি, সেই আনন্দ এখন নিরানন্দ হয়ে দাড়িয়েছে।আমার ক্লাসের ২৮ জন বান্ধবীর বিয়ে হয়ে গেছে। বান্ধবীদের না পেয়ে খুবই খারাপ লাগছে।
অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুপুর জানান,আমার ক্লাসে ১৮ জনের বিয়ে হয়ে যাবার কথা শুনে মন খারাপ হয়েছিল। অনেকদিন পর বান্ধবীদের সাথে গল্প করার আনন্দটাই মাটি হয়ে গেছে। জানি না আমার ক্ষেত্রে কি হবে?
বাল্য বিয়ের শিকার হওয়া নবম শ্রেণির ছাত্রী বিথীর বাবা জানান,আমরা গরীব মানুষ।মেয়েকে বেশিদূর লেখাপড়া করার সামর্থ্য আমার নেই। তাই ভালো সমন্ধ পেয়ে না করতে পারি নাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাঃ মতিউর রহমান খন্দকার জানান,করোনা প্রাদূর্ভাবের আগে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল ৭০-৮০ ভাগ।কিন্তু করোনাকালীন দীর্ঘ বিরতির পর স্কুলের উপস্থিতি সংখ্যা মাত্র ৪০-৫০ শতাংশ। যা খুবই হতাশাজনক।
তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে মোট ৩৮৫ জন ছাত্রীর মধ্যে ৮৫ জনের বাল্যবিয়ের ঘটনার ঘটেছে।বাল্যবিয়ের ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ২, সপ্তম শ্রেণীতে ১১, অষ্টম শ্রেণী ১৭, নবম শ্রেণীতে ২৮, দশম শ্রেণী ১৪ ও এস এস সি-২০২১ সালের পরিক্ষার্থীর ১৩ জন।
ফুলবাড়ি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল হাই জানান,বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বাল্যবিয়ের তথ্য জানতে পেরেছি। উপজেলার ৭৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাল্যবিয়ের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
আমরা শীঘ্রই প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের নিয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে মতবিনিময় ও সচেতনতামুলক ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, বড়ভিটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮৫ জন শিক্ষার্থীর বাল্যবিয়ের বিষয়টি শুনেছেন। বাল্যবিয়ে কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন ধরণে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে আমরা কাছ শুরু করেছি। প্রতিটি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিসহ সুশীল সমাজর প্রতিনিধিকে নিয়ে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় মুখি করার কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।