জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে লক্ষ্য অনুযায়ী ঝুঁকি, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও শ্রমের কোনও বিকল্প নেই। বেকারত্বের লাগামহীন দৌরাত্ম্যে চাকরির পেছনে না ছুটে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা বুদ্ধিমানের কাজ। এক্ষেত্রে স্বাবলম্বী হওয়ার পেছনে থাকে ঝুঁকি নেওয়ার মতো নানান গল্প-ঘটনা প্রবাহ। ঝুঁকি নিতে পছন্দ করা এমনই একজন চাষির নাম মোস্তফা কামাল। তিনি নিজের সখের মোটরসাইকেল বিক্রি করে মাল্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, বারি-১ জাতের সবুজ মাল্টা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের তালতলা গ্রামের সাইদুল হক মাস্টারের ছেলে মোস্তফা কামাল। মাল্টা মূলত পাহাড়ি এলাকায় চাষ হলেও সমতল ভূমিতে মাল্টা চাষের এমন উদ্যোগ নেওয়ায় এলাকাবাসীর কাছে প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। মোস্তফা কামালের স্বাবলম্বী হওয়ার চিত্র দেখে এলাকার অনেক বেকার যুবকের মনে মাল্ট চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
মোস্তফা কামাল সিটি নিউজকে জানান, এসএসসি পরীক্ষায় পাশের পর সংসারে কৃষিকাজে মনোযোগ দেন। পাশাপাশি গ্রামে ‘গোপালপুর দানা ফসল কৃষক দল’ নামে একটি সংগঠনে নাম লেখান। সংগঠনটিতে জেলা ও উপজেলার কৃষি অধিদফতরের কর্মকর্তাগণ প্রতি মাসে সময় উপযোগী বিভিন্ন ফসল ও মৎস্য চাষে সবাইকে প্রশিক্ষণ ও চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় এক বছর আগে মাসিক মিটিংয়ে মাল্টা চাষ নিয়ে আলোচনা করলে মোস্তফা কামাল মাল্টা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে জেলা খামারবাড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে প্রশিক্ষণ ও ৪১টি চারাগাছ নিয়ে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ শুরু করেন।
তিনি জানান, মাল্টা চাষ দীর্ঘমেয়াদি আবাদ। মাল্টা একবার চাষ করলে ১০-১২ বছর এই গাছ থেকে ফল পাওয়া যায়। অন্যান্য ফল চাষের তুলনায় মালটা চাষ লাভজনক এবং খরচও কম। চারা রোপনের দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া কোনও প্রকার কীটনাশক, ফরমালিন বা পেস্টিসাইটের প্রয়োজন হয় না। এ জন্য এটা বিষমুক্ত ফল। বাজারে অন্যান্য মাল্টার চেয়ে সুস্বাধু, দামেও সস্তা।
মাল্টা চাষে ব্যয় সম্পর্কে বলেন, ১ বিঘা জমিতে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ করেছি। যদিও কৃষি অফিস মাল্টা গাছের চারা, সার দিয়েছে। ১ম বার ব্যয় তো আনুষাঙ্গিক খরচ মিলে আমার প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা হয়েছে। পর্যাপ্ত মূলধন না থাকায় নিজের সখের মোটরসাইকেল বিক্রির টাকা এই মাল্টা চাষে ব্যয় করি।
এবারে প্রথম মাল্টা বিক্রি শুরু করলাম। এ পর্যন্ত কেজিপ্রতি ১৬০ টাকা দরে প্রায় ২ মণ মাল্টা ৬ হাজার ৪০০ টাকা বিক্রি করেছি। আশা করছি এ মৌসুমে আরও ৫০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারব। কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশা করছি আগামী বছর হতে ভালো লাভবান হব ইনশাআল্লাহ।
এ বিষয়ে নাগেশ্বরী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন বলেন, উপজেলায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন এখানকার কৃষকেরা। কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এটা বারি-১ সবুজ জাতের মাল্টা। শিক্ষিত বেকার যুবকেরা অন্যান্য পেশার পাশাপাশি মাল্টা চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবে।
কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক বলেন, মাল্টা পাহাড়ি অঞ্চলের ফসল হলেও এখন সমতলে চাষাবাদ প্রক্রিয়া চলছে। মাল্টাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি আছে। এই ফলে নেই কোনও ফরমালিন, নেই কোনও ঝুঁকি। খরচ কম লাভ বেশি। মালটা চাষে কৃষকদের আগ্রহী করতে মাল্টা চারা, সার, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।