বন্ধুর রোজা রাখা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের আশায় ৪০ বছর ধরে রোজা রাখছেন তিনি। প্রথমে পাঁচ বছর রাখার নিয়ত করে রোজা শুরু করলেও পরবর্তীতে তা আর ছাড়তে পারেননি। রোজার প্রতি মহব্বত হার মানিয়েছে শারীরিক অসুস্থতাকে। মহান আল্লাহকে পাওয়ার আশায় এমনি করে দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে রোজা পালন করে আসছেন তিনি।
বলছিলাম কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের চর সারডোব এলাকার ইনছান আলীর (৭৫) কথা। ইনছান আলী পেশায় একজন কৃষক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইনছান আলী ১৯৮১ সাল থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি রোজা পালন করে আসছেন। ঈদুল ফিতরের এক দিন ও ঈদুল আজহার চার দিন মিলে মোট পাঁচ দিন ব্যতীত সারা বছর রোজা রাখেন তিনি। এতে তার শারীরিক কোনো সমস্যাও হয় না। অসুস্থ অবস্থায় তিনি রোজা রাখতে পারেন। রোজা রেখে স্বাভাবিকভাবে সকল কাজকর্ম করে চলেছেন তিনি।
ইনছান আলীর পরিবার জানায়, কর্মজীবনের শুরুতে ইনছান আলী সুপারি কিনে বাজারে বিক্রি করতেন। ১৯৭০ সাল পরবর্তী সময়ে সুপারির ব্যবসার সুবাদে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে নাগেশ্বরী উপজেলার মাদাইখাল নাউ খাওয়া ব্রিজ এলাকার সুপারিচাষি সাদর উদ্দিনের সঙ্গে।
সাদর উদ্দিন অত্যন্ত ধার্মিক মানুষ। তার সঙ্গে চলাফেরার এক পর্যায়ে ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের প্রতি অনুরাগী হয়ে ওঠেন ইনছান আলী। বন্ধু সাদর উদ্দিনের রোজা রাখা দেখে তিনিও রোজা রাখতে শুরু করেন। যা ৪০ বছর ধরে অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় এক যুবক জানান, আমি ইনছান আলীর নাতি। জন্মের পর থেকে নানার রোজার বিষয়টি জেনে আসছি। রোজা রেখে তিনি কঠোর পরিশ্রম করেন ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। অসুস্থ অবস্থায়ও তাকে কোনো দিন রোজা পরিত্যাগ করতে দেখিনি।
ইনছান আলীর স্ত্রী জেলেখা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে রোজা পালন করে আসছেন। প্রথমে তার বন্ধু সাদর উদ্দিন রোজা শুরু করেন। বন্ধুর রোজা রাখা দেখে মুগ্ধ হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমার স্বামী রোজা পালন শুরু করেন। শত ব্যস্ততার মাঝে তিনি নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। আমরা গরিব মানুষ, ঠিকমতো মাছ-মাংস বা ফলমুল কিনে খেতে পারি না। আমার স্বামী প্রতিদিন সেহরি ও ইফতারে ভাত কিংবা চিড়া-মুড়ি খান। রোজা রেখে তার কোনো শারীরিক সমস্যা হয় না।’
ইনছান আলী বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের এক দিন ও ঈদুল আজহার চার দিন মিলে মোট পাঁচ দিন ব্যতীত সারা বছর রোজা পালন করি। রোজা পালনে আমার কোনো সমস্যা কিংবা শারীরিক অসুস্থতা বোধ করি না। সারাদিন রোজা রাখার পর মানসিক তৃপ্তি পাই। আমার প্রেশার, ডায়াবেটিসসহ কঠিন কোনো রোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, ১৯৮১ সাল থেকে বন্ধুর নিয়মিত রোজা রাখা দেখে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে একাধারে পাঁচ বছর রোজা পালনের নিয়ত করি। পাঁচ বছর রোজা পালনের পর আর ছাড়তে পারিনি। যা আজ পর্যন্ত পালন করে যাচ্ছি। রোজা পালনের কথা মানুষকে বলা ঠিক নয়। রোজার প্রতিদান আল্লাহ তায়ালাই আমাকে দেবেন। আমি সারাজীবন রোজা রাখতে চাই। সামনে রমজান মাস। এ মাসে সকল মুসলমানকে রোজা পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।
সদরের হলোখানা ইউপি চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রেজা বলেন, ‘ইনছান আলী বৃদ্ধ বয়সেও কৃষি কাজ করে সংসার চালান। দীর্ঘদিন ধরে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছেন সঙ্গে রোজাও রাখেন। তার এ কাজটি প্রশংসার দাবি রাখে। আমি এ ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান। সরকারি যেকোনো সুযোগ-সুবিধা আসলে তাকে দেওয়ার সবোর্চ্চ চেষ্টা করব।’
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে জেনে আসছি ইনছান আলী রোজা পালন করে আসছেন। এই বৃদ্ধ বয়সেও তিনি রোজা করে যাচ্ছেন।’
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের ফজলুল করিম (রহ.) জামিয়া ইসলামিয়া মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মুফতি ইব্রাহিম খলিল বলেন, ‘একটানা দীর্ঘদিন রোজা রাখা ইসলামি মতে মাকরুহ। তবে বিরতি দিয়ে রোজা রাখা উত্তম।’
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. মনজুর এ মোর্শেদ বলেন, ‘ওই ব্যক্তির কোনো রোগ আছে কি না, তা তো জানি না। এ ছাড়া ওই ব্যক্তির শরীর না দেখে কিছু বলা যাবে না।’