October 18, 2024, 2:31 pm
শিরোনাম:
মনোহরদীতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন মনোহরদীতে দিনব্যাপী পাট চাষী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বেধরক মারধরের অভিযোগ মনোহরদীতে জনমত জরিপ ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ সরকার মনোহরদীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী “আলোকিত গোতাশিয়া” ফেসবুক গ্রুপের পক্ষহতে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে অসহায়দের মাঝে শিল্পমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে খননযন্ত্র ও বালুর স্তুপ জব্দ এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার করলেন মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খান ঢাকা আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচনে বিজয়ী মনোহরদীর সন্তান এ্যাড.কাজী হুমায়ুন কবীর

নুরবানুর বাচ্চা দুটোই যেন গলার কাঁটা

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, জুলাই ১৫, ২০২২
  • 207 দেখুন

নিজের ঘর সংসার বলতে তো কিছুই নেই।আট বছর থেকে স্বামী লাপাত্তা।সে আমাদের কোন খোঁজ খবর নেয় না।অসুস্থ বৃদ্ধ বয়সী মা-বাবার পাশে আশ্রয় কেন্দ্রের একটি ঘরে থাকি।বন্যার আগে গ্রামে বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে ঝি এর কাজ করেছিলাম।বন্যায় সে কাজটিও বন্ধ হয়ে গেছে। বাচ্চা দুটোকে নিয়ে খুবই মানসিক কষ্টে আছি। না পারছি বাচ্চা দুটোকে রেখে ঢাকা পাড়ি দিতে, না পারছি শান্তি মত দুবেলা দুমুঠো খাওয়াতে।এভাবে কথাগুলো বলেছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের দঃ ভগপতিপুরের আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা নুরবানু বেগম।

২০১৪ সালের অক্টোবর মাসের ১৩ তারিখের সকালটা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য আশির্বাদ হয়ে এলেও নুর বানুর জীবনে অন্ধকারের বেসাতি হয়ে উঠে।ঘুম ভাঙার পর দেখেন সারা জীবন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়ার মানুষটা নেই।গার্মেন্টসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে কাজে যায় নি। সহকর্মীর কাছ থেকে জানতে পারেন সে পালিয়েছে।

জানা যায়,নুরবানু বেগম দুই ভাই এক বোন।ভাইয়েরা বিয়ের পর বৃদ্ধ বাবা মাকে রেখে আলাদা ঘর সংসার শুরু করেন।অভাবের সংসারে ভাইয়েরা আলাদা থাকা শুরু করলে মা বাবার খোঁজ নেয়ার মত নুরবানু ছাড়া কেউ নেই।শেষে মেয়ে হয়ে সংসারের হাল ধরতে অল্প বয়সে পাড়ি জমান ঢাকায়।ঢাকার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ শুরু করেন।সেখানে পরিচয় হয় নাটোরের আলম নামের এক সহকর্মীর।প্রথম পরিচয়ে প্রেম তারপর বিয়ের পীড়িতে বসেন নুরবানু।ঢাকায় বেশ ভালোই চলছিল জীবন যাপন।প্রতি মাসে সাধ্যমত বাবা মায়ের খোঁজ খবর নিতেন তিনি।

২০০৮- ২০১৪ সাল এই ৬ বছরে সাকিব ও সিয়াম নামে দুটি ছেলে সন্তানের মা হন।প্রথম সন্তান সিয়াম জন্মের কয়েক মাস পর আলম মিয়া হঠাৎ করে নুর বানুকে যৌতুকের জন্য চাপ দেয়।বৃদ্ধ বাবা মায়ের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা দাবী করেন নুর আলম।সেই থেকে শুরু হয় নুরবানুর অন্য জীবন। প্রেম বিয়ে আর সম্পর্কের গভীরতায় যৌতুকের কালো হাত ধুমড়ে মুছড়ে দেয় নুর বানুর সংসার।এরই মধ্যে আরো একটি সন্তানের মা হন নুরবানু বেগম। নাম রাখেন সাকিব।সিয়াম আর সাকিবকে নিয়ে চলছে নুরবানুর জীবন।

সাকিব বলেন,বাবা দেখতে কেমন জানি না।ঈদে সব সবাই নতুন জামা কাপড় পড়ে ঈদ করছে।আমরা দুই ভাই পুরাতন জামা দিয়ে ঈদ করছি।বাবাকে দেখতে মন চায়।

সিয়াম বলেন,বাবা আমাদের খোঁজ নেয় না।মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে আমাদের খাওয়ায়।বাবা না থাকায় স্কুলে ভর্তি হতে পারছি না।

নুরবানু বলেন,শুনেছিলাম শ্বশুর বাড়ি নাটোরে।কখনো আমার স্বামী আমাকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যায় নি।ওর ঠিকানাও আমার জানা নেই।আমাদের ডিভোর্স হয় নাই ঠিক তবে স্বামী থেকেও নেই।যৌতুকের টাকা দিতে পারি নাই বলে সে আমার অবুঝ বাচ্চা ও আমাকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে। ৮ বছর ধরে এভাবে আছি।অবুঝ বাচ্চাদের নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। এদের ছেড়ে ঢাকায় কাজে যেতে পারছি না।গ্রামে তো কাজ নেই।কি করে বাচ্চাদের খাওয়াই,নিজে খাই।আছি আশ্রয়কেন্দ্রে, একটা গরু ছাগল নেই যে তা পালন করে বাচ্চাদের পড়াশোনা করাবো।

নুরবানুর মা বলেন,ঘরের কথা কি বলি,ঈদের দিন সকালে শাক পাতা দিয়ে ভাত খাইছি।আমারাই চলতে পারি না।নুরবানু যখন গার্মেন্টসে চাকরি করতো তখন ও আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করতো।যৌতুকের টাকার জন্য আমার নুরবানুর ঘর ভাঙল।মেয়ে জামাই যৌতুকের জন্য ৮০ হাজার টাকা চেয়েছিল।আমরা তিনবেলা ঠিকমত খেতেই পারি না।যৌতুক দেই ক্যামনে।টাকা দিতে পারি নাই এজন্য মেয়েটাকে ঢাকায় একা রেখে পালিয়ে গেছে।

ওই গ্রামের আয়নাল হক বলেন, নুরবানু বাচ্চা দুটোকে নিয়ে খুবই কষ্টে আছে।ওর স্বামী তো ৮ বছর ধরে নাই। কোন খোঁজ খবর নেয় না।শুনেছিলাম সে নাকি আরেকটা বিয়ে করেছে।নুরবানুর ভাইয়েরা নিজেরাই চলতে পারে না এদের কি সহযোগিতা করবে।আমাদের এ গ্রামে সবাই তো গরীব। তারপরও দু একজনের বাড়িতে কাজ করে বাচ্চাদের খাওয়ায়।যেদিন কাজ থাকে না সেদিন বাচ্চাগুলো নিয়ে নুরবানুর উপোষ থাকতে হয়।

এছাড়া তিনি বলেন,নুরবানুর বাবার বয়স্কভাতা আছে।সেই ভাতার সামান্য টাকা দিয়ে ওর বৃদ্ধ বাবা মা বাঁচবে না নুরবানুর বাচ্চাদের বাঁচাবে।নুরাবানুর একটা ব্যবস্থা হলে ওর বাচ্চা দুটো মানুষ করতে পারতো।

যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল গফুর বলেন,আমাদের যাত্রাপুর ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডের ৮ টিই নদীর উপর।প্রতি বছর বন্যা আর নদী ভাঙনের শিকার হন তারা।ফলে সারা বছরই অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে জীবন যাপন করতে হয় তাদের।নুরবানুর মত অনেক নারী এভাবে দুঃখ কষ্টে আছে।তারপরেও আমি নুরবানুর ব্যাপারে কিছু করা যায় কিনা চেষ্টা করব।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

https://bd24news.com © All rights reserved © 2022

Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102