ময়মনসিংহে অরক্ষিত ১০৫ টি লেভেল ক্রসিংয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে জনসাধারণ। অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা। একের পর এক দুর্ঘটনায় চলতি বছরে ৪৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নাগরিকেরা বলছেন,এর দায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনোভাবে এড়াতে পারে না। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, রেলে মৃত্যু কমাতে সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। রেলওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, চলতি বছরের গত ১১ মাসে ময়মনসিংহ রেলের সীমানায় ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে পাঁচজন, ফেব্রুয়ারিতে এক, মার্চে চার, এপ্রিলে দুই, মে মাসে সাত, জুনে ছয়, জুলাইয়ে ছয়, আগস্টে ছয়, সেপ্টেম্বরে এক, অক্টোবরে পাঁচজন এবং নভেম্বর মাসে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। রেল বিভাগের তথ্যমতে, ময়মনসিংহ রেলওয়ে অঞ্চলে ২ শ,টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে,এর মধ্যে অরক্ষিত ১ শ ৫টি। ৭০টির মতো লেভেল ক্রসিংয়ে তিনজন করে গেটম্যান থাকলেও বাকিগুলোয় রয়েছে লোকবলের সংকট। ট্রেন চলাচলের সময় লেভেল ক্রসিংগুলোর দুই পাশে গেট ব্যারিয়ার ফেলে যানবাহন আটকানোর কথা থাকলেও একপাশে ফেলা হচ্ছে ব্যারিয়ার। এতে ট্রেন সন্নিকটে এলেও ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে চলাচল করতে দেখা যায়। এসব কারণে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। নগরীর মিন্টু কলেজ লেভেল ক্রসিংয়ে দিয়ে চলাচলকারী রাসেল হোসেন বলেন, ‘ময়মনসিংহ নগরী এমনিতেই যানজটের নগরী। ট্রেন আসার কমপক্ষে ১৫ মিনিট আগে গেট ব্যারিয়ার ফেলা হয়। এতে আমরা সাধারণ মানুষ খুব অতিষ্ঠ হয়ে পড়ি। পরে ঝুঁকি নিয়ে রেড জোন দিয়ে চলাচল করতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের কয়েক মিনিট আগে গেট ব্যারিয়ার ফেললে কারও সমস্যা হয় না। পাটগুদাম ব্রিজমোড় লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান আতিকুল হক বলেন, ‘তিন বছর ধরে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটিতে একটি গেট ব্যারিয়ার অকেজো হয়ে পড়ে আছে। একটি দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। ট্রেন সন্নিকটে এলেও একটি ব্যারিয়ার তুলে ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল করেন। তাঁদের কিছু বললেও সমস্যা। ময়মনসিংহ রেলস্টেশন-সংলগ্ন লেভেল ক্রসিংয়ের গেটম্যান আতিকুর রহমান বলেন,এই লেভেল ক্রসিংটি স্টেশনের কাছে হওয়ায় একটু চাপ বেশি। তিনজন গেটম্যানের বদলে আমরা দুজন রয়েছি। প্রত্যেকে ১০ ঘণ্টা করে ডিউটি করি। বাকি চার ঘণ্টা অনেক সময় কেউ থাকে না। ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, চলতি বছরে ট্রেনে কাটা পড়ে মোট ৪৬ জন মারা গেছেন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগ মানসিক ভারসাম্যহীন। এ ছাড়া মানুষ অসচেতনভাবে রেললাইন পার হওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন,ময়মনসিংহে চলতি বছরে রেলে ৪৬ জনের প্রাণহানির ঘটনা দুঃখজনক। এতে কর্তৃপক্ষ কোনোভাবে তাদের দায় এড়াতে পারে না। বাংলাদেশ রেলওয়ে ময়মনসিংহের সহকারী প্রকৌশলী নারায়ণ প্রসাদ সরকার বলেন, রেলওয়ের ময়মনসিংহ জোন হচ্ছে ময়মনসিংহ থেকে শ্রীপুর, বিদ্যাগঞ্জ, মোহনগঞ্জ, আঠারোবাড়ি ও জারিয়া জাঞ্জাইল এলাকা। এই এলাকার মধ্যে ২ শ,টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ১শ,৫টি অরক্ষিত। বাকি ৯৫টির মধ্যে ৭০টিতে তিনজন করে গেটম্যান রয়েছে। ২০টি লেভেল ক্রসিংয়ে দুই পাশে গেট ব্যারিয়ার আছে। বাকিগুলো একপাশে রয়েছে। এতে ট্রেন এলে মানুষ একটু ধৈর্য না ধরে পারাপারের চেষ্টা করলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।