আজ কিশোরী ফেলানী হত্যার দশ বছর। ২০১১ সালের এ-ই দিনে ফুলবাড়ী অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) অমিয় ঘোষের এর গুলিতে নির্মম ভাবে হত্যাকান্ডের স্বীকার হন কিশোরী ফেলানী।
কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরুর মেয়ে কিশোরী ফেলানী স্বপরিবারে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাঁও গ্রামে। সেখান থেকে বাবার সাথে বাংলাদেশ নিজ বাড়িতে আসার পথে মই বেয়ে কাঁটা তার পার হওয়ার সময় বিএসএফ’র গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন।
ভোরে গুলিবিদ্ধ হয়ে আধা ঘন্টা মৃত্যুর যন্ত্রণা আর সাড়ে চার ঘন্টা ফেলানীর নিথর দেহ কাঁটা তারে ঝুলে থাকার ঘটনায় গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত।অবশেষে ২০১৩ সালের ১৩ আগষ্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়।
বিএসএফর এ কোর্টে স্বাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফর বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাখ্যান করে পুন:বিচারের দাবি জানায় ফেলানীর বাবা।
২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুন:বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে স্বাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ০২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়। ২০১৬ এবং ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারী শুনানীর দিন ধার্য হলেও শুনানী হয়নি । এরপর ২০১৯ এবং ২০২০ সালে কয়েকবার শুনানীর তারিখ ধার্য্য হলেও শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি আজও।এদিকে মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা-মা।
ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম জানান, ফেলানী হত্যার বিচার চেয়ে অনেক ঘুরেছি, মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে গেছি, বিচার পেলাম না। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ করোনার পূর্বে শুনানির তারিখ থাকলেও তা হয়নি। এখন আর কোন খোজখবর জানিনা।
ফেলানীর মা জাহানারা বেগম জানান, ফেলানী হত্যার দশ বছর হয়ে গেছে আজও বিচার পাইনি। আমি দুই দেশের সরকারের কাছে সঠিক বিচার দাবি করছি।
লিগ্যাল এইড বাংলাদেশ মানবাধিকার কর্মী এ্যাড. মহব্বত জানান,সীমান্ত হত্যা আমরা মোটেই আশা করি না।কেননা হত্যাকান্ড কোন স্বাধীন রাষ্ট্রের কাম্য নয়।দুই দেশের প্রচলিত আইন আছে।কেউ অবৈধ অনুপ্রবেশ করলে কিংবা অপরাধী হলে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত।
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিটর এস এম আব্রাহাম লিংকন জানান, ভারতের সুপ্রিমকোর্টে ফেলানী হত্যার রীটটি কার্যতালিকার তিন নম্বরে ছিলো। কয়েক দফা শুনানির তারিখ পিছিয়ে গেছে। বর্তমান কোভিট -১৯ এর জন্য ভার্চুয়াল কোর্ট চলছে। পরিস্থিতি ভালো হল রিটটি শুনানি হবে। আশা করছি ফেলানীর পরিবার ন্যায় বিচার পাবে।