কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার চর সুভারকুটি গ্রামের মোক্তারের হাট এলাকার মেয়ে সুলতানা (২৮)। জন্মগত প্রতিবন্ধী না হয়েও মানসিক প্রতিবন্ধীর বোঝা বইছেন তিনি। এমনকি গত ১২ বছর ধরে শিকলে বন্দী তিনি।
১০ বছর আগে সুলতানার বিয়ে হয় একই গ্রামের মেহের জামালের সঙ্গে। স্বামী-সংসার নিয়ে বেশ ভালোই চলেছিল তার দিন। তাদের ঘরে জন্ম নেয় ফুটফুটে এক মেয়েশিশু। কিন্তু কিছুদিন পরই তার জীবনে নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে থমকে যায় তার জীবন। এরপরই স্বামী জামাল করেন দ্বিতীয় বিয়ে। ধীরে ধীরে শিকলে বন্দী হয় সুলতানার জীবন। চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘ আট বছর ধরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে আছেন বাবার বাড়িতে।
এলাকাবাসী জানায়, প্রায় আট বছর আগে হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন সুলতানা। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসাও করাতে পারেনি তার পরিবার। কবিরাজি চিকিৎসা নিয়ে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অসুস্থতার কারণে স্বামী জামাল করেন দ্বিতীয় বিয়ে। উন্নত চিকিৎসা না দেয়া, অযত্ন আর অবহেলায় ধীরে আরও মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন সুলতানা। তাদের প্রত্যাশা, সুলতানা শিকলবন্দী জীবন থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থ জীবনে ফিরে আসুক।
অসুস্থ থেকেও প্রিয় মানুষের কথা এখনও মনে আছে সুলতানার। জানতে চাইলে তিনি সুন্দর করে তার নিজের নাম সুলতানা, স্বামীর নাম মেহের ও মেয়ে লাবণী আক্তারের নাম বলেন।
সুলতানাকে নিয়ে মোক্তারের হাট এলাকার বাসিন্দা বেলাল রহমান বলেন, ‘শুধু উন্নত চিকিৎসার অভাবে মেয়েটির এই পরিণতি। যদি তার উন্নত চিকিৎসা করা যায় আমি আশাবাদী সে সুস্থ হয়ে উঠবে। কারণ তার এ সমস্যা জন্মগত নয়। সুলতানার চিকিৎসার জন্য আমি জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি।’
সুলতানার ভাবি রেহেনা বেগম (৩৮) বলেন, ‘ও (সুলতানা) সুযোগ পেলেই বাইরে যাবার চেষ্টা করে। এ কারণে পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখি। মাঝে মধ্যে শিকল খুলে একটু হাঁটতে দেই। তবে বেশিক্ষণ না। ওর বাপ অনেক আগেই মারা গেছে।’
‘আমাগো অভাবী সংসার। তাই তার চিকিৎসা করতে পারছি না। তার চিকিৎসার জন্য এখন পর্যন্ত কেউ এগিয়েও আসেনি’, বলেন সুলতানার ভাবি রেহেনা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মানসিক ভারসাম্যহীন সুলতানার পরিবার যদি তাকে হাসপাতালে ভর্তি করায় সরকারিভাবে তার সব ধরনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।’