কুড়িগ্রামে ধরলা নদী থেকে বালু উত্তোলন ও পরিবহণের দায়ে পণ্যবাহী ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে পরিচালিত ভ্রাম্যমান আদালত কর্তৃক জরিমানা আদায়ের পরিমাণ ও আদলত কর্তৃক প্রদেয় রশিদে উল্লেখ অর্থের পরিমাণ নিয়ে বিভ্রাট সৃষ্টি হয়েছে। ভুক্তভোগী ট্রাক্টর মালিকদের দাবি, গাড়িপ্রতি ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা জরিমানার অর্থ নেওয়া হলেও সরকারি রশিদে মাত্র ৫০ হাজার টাকা উল্লেখ করে মামলা নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগী ট্রাক্টর মালিকরা জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগপত্র দিয়ে আদায়কৃত অতিরিক্ত অর্থ ফেরত ও সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে যথাথথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের গোপনীয় শাখায় দেওয়া ট্রাক্টর মালিকদের অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ এপ্রিল কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী মেজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একই উপজেলার মোঘলবাসা ইউনিয়নের দছিমুদ্দিনের মোড় এলাকায় ধরলা নদী থেকে বালু উত্তোলনকারী ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত বালুবাহী চারটি ট্রাক্টও আটক করে জরিমানার নির্দেশ দেন ভ্রাম্যমান আদালত। ট্রাক্টও মালিক রায়হান মিয়ার কাছে ৮০ হাজার, বাচ্চু মিয়ার কাছে ৭৫ হাজার, জুয়েলের কাছে ৭৭ হাজার নেওয়া হয়। কিন্তু ভ্রাম্যমান আদালতের সরকারি রশিদ (ডিসিআর) দেওয়া হলে ট্রাক্টর মালিকরা দেখতে পান বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন,২০১০ এর ৪ (খ) ধারা ভঙ্গের অপরাধে ১৫ ধারার বিধানমতে তাদের প্রত্যেকের কাছে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা নেওয়া হয়েছে। আবেদনপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, উল্লেখিত তিন ট্রাক্টর মালিক ছাড়াও হযরত আলী নামে আরও এক ট্রাক্টর মালিকের কাছে ৮০ হাজার টাকা নেন ভ্রাম্যমান আদালতে উপস্থিত অফিস সহকারী মিঠু। পরে তার ট্রাক্টর ছেড়ে দেওয়া হলেও তাকে কোন ও টাকা আদায়ের রশিদ দেওয়া হয়নি বলে আবেদনপত্রে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগীরা। ভুক্তভোগী ট্রাক্টর মালিকরা জেলা প্রশাসক বরাবর দেওয়া আবেদনপত্রে তাদের কাছে নেওয়া ডিসিআর-এ উল্লেখিত অর্থের অতিরিক্ত অর্থ ফেরত ও ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে যথাথথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করা ভুক্তভোগী ট্রাক্টর মালিক রায়হান হোসেন জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের সাথে থাকা উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারী আব্দুর রাজ্জাক তার সাথে কথা বলে ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন এবং বিনিময়ে ট্রাক্টর ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। রাজ্জাকের সাথে থাকা অপর কর্মচারী আবুল হাসান বাবুর হাতে তিনি ৮০ হাজার টাকা জমা দেন। কিন্তু তাকে ডিসিআর দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকার।
রায়হান বলেন, ‘ডিসিআরে টাকার পরিমাণ কম উল্লেখের বিষয়টি আমি তৎক্ষণাত উপস্থিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানকে জানাতে চাইলে তিনি আমাকে কথা বলার কোনও সুযোগ না দিয়ে গাড়িতে চড়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এটা আমাদের সাথে অবিচার, সরকারের সাথেও প্রতারণা। কারণআমাদের কষ্টের টাকা নিয়ে তারা সরকারি কোষাগাওে জমা না করে আত্মসাত করেছেন। আমরা এর বিচার চাই, অতিরিক্ত টাকা ফেরত চাই।’ রায়হানের দাবি, শুধু তিনি নন, একই ঘটনা ঘটেছে অপর দুই ট্রাক্টর মালিকের সাথেও।
উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারী আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমি ডিসিআর উল্লেখিত টাকা ব্যতীত অতিরিক্ত কোনো টাকা কারো কাছে নেইনি।
এ ব্যাপারে জানতে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে মুঠোফোনে এবং ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে একাধিকবার যোগাযোগ চেষ্টা করেও সাড়া না দেয়ায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
কুড়িগাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন জানান, আমি বিষয়টি শুনেছি। তবে একথাগুলোর ভিত্তি নাই। আমাকে কোন তদন্তভার দেয়া হয়নি। ডিসি স্যার যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই হবে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘এসিল্যান্ড সাহেব যে জরিমানা করেছে সে ঘটনাস্থলে ঘোষণা দিয়ে ডিসিআর’র রিসিভ কপি দিয়েছে। ট্রাক্টর মালিকরা রিসিভি কপি যখন পেয়েছে তাৎক্ষনিকভাবে অভিযোগ করতে পেতো। সেটা তারা করেনি। তবুও যদি আমার স্টাফরা এতে জড়িত থাকে আমি ব্যবস্থা নিব।