সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, জোড়া খুন আর মাদক ব্যবসার অভিযোগসহ মাথার ওপর আটটি মামলার খড়গ। তবুও এক রকম প্রকাশ্যে মাদক ব্যবসা চালাচ্ছিল সে। একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও জামিনে বেড়িয়ে আবারও সেই পুরোদস্তুর মাদক কারবারি! রাত হলেই বাড়িতে শুরু হয় মাদক সেবীদের আনাগোনা। এলাকার লোকজন প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর শুরু হতো অশালীন ভাষায় গালিগালাজ আর হুমকি। এমনই এক দুর্ধর্ষ অপরাধী কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বেলগাছা ইউনিয়নের সরা ভোগরাম গ্রামের মফিজুল ইসলাম। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিব্বি মাদক ব্যবসা চালিয়ে গেলেও অবশেষে পুলিশের ফাঁদে আটকা পড়েছে মফিজুল। বুধবার (২৬ মে) বিকালে কুড়িগ্রাম সদর থানা পুলিশের একটি দল ঘন্টাব্যাপী এক অভিযানে মফিজুলকে তার নিজ গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে। এসময় হিরোইন আর ইয়াবাসহ মাদক সেবনের বেশ কিছু উপকরণও জব্দ করে পুলিশ। সদর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) খান মো.শাহরিয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মফিজুল সরা ভোগরাম গ্রামের জব্বার আলীর ছেলে। মাদক দুনিয়ায় সে মোখলেস কিংবা চেয়ারম্যান নামেও পরিচিত।
এলাকাবাসী জানায়, মফিজুল তার নিজ বাসা থেকে কখনও নিজে, কখনও তার মায়ের মাধ্যমে আবার কখনও স্ত্রীর মাধ্যমে মাদকসেবীদের কাছে পাইকারি ও খুচরা পদ্ধতিতে মাদক বিক্রি করে। তার বাড়ি কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কের পাশে হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীরা তার কাছে সহজে মাদক ক্রয়-বিক্রয় করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে পারে। এছাড়া মাঝে মাঝেই তার বাসায় রাতভর মাদক সেবীদের আড্ডাও চলে বলে অভিযোগ তার প্রতিবেশীদের। মফিজুলের গ্রেফতারে এলাকাবাসীর মধ্যে আপাতত স্বস্তি নেমে এসেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশী জানায়, অনেকদিন পর আবার কুখ্যাত এই মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হলো। মফিজুলকে যতোবার পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে ততোবার সে জামিনে বেরিয়ে এসে আরও বেশি উদ্যোমে তার ব্যবসা চালিয়েছে, এলাকায় মাদকসেবী ও মাদক কারবারীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। এমনকি তার অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের লোকজন তার ব্যবসা ঠিকই চালিয়ে নেয়। এতে করে এলাকার স্কুল পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের নিয়ে খুবেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটাতে হয়। অভিভাবকরা সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে সবসময় উদ্বিগ্ন থাকেন। কিন্তু তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারে না। প্রতিবাদ করতে গেলে গেলে উল্টো হুমকির সম্মুখীন হতে হয় বলেও জানান তারা। তবে তার গ্রেফতারে কয়েকদিন এলাকায় মাদকের কারবার কমে যাবে বলে স্বস্তি প্রকাশ করেন এলাকাবাসী।
ওসি খান মো শাহরিয়ার জানান, পুলিশের খাতায় মফিজুল ইসলাম একজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও জোড়াখুনের অভিযোগসহ আটটি মামলা রয়েছে। তার বিরুদ্ধে আদালতের ওয়ারেন্ট রয়েছে। অনেকদিন ধরে পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করলেও সে অত্যন্ত চতুরতার সাথে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। অবশেষে পুলিশের জালে তাকে পড়তেই হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ মে) তাকে আদালতে নেওয়া হবে।
মফিজুলের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদক কারবারির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন,‘ আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।’