হবিগঞ্জের মাধবপুরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাঠদান করছেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। পড়াশোনা নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলছেন তারা। করোনাকালে ছাত্র পড়ানোর এই অভিনব উদ্যোগে অভিভাবকরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। শিক্ষার্থীরা হচ্ছে উপকৃত। হরষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জায়েদা খাতুনসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কাজ করছেন গ্রামের শিশুদের শিক্ষার মান উন্নয়নে। করোনার সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। এতে লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়ছে গ্রামের শিক্ষার্থীরা। অনলাইনে ক্লাস চলছে। তবে বাস্তবকা হচ্ছে গ্রামের শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগেরই নেই কোনো স্মার্টফোন বা কম্পিউটার। এসব কারণে পাঠ কার্যক্রম থেকে ছিটকে পড়ছে এসব শিশু। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পড়ার খোঁজখবর নিচ্ছেন শিক্ষকরা।
এতে খুশি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বাসায়, স্কুলে বা বাড়ির উঠানের পাশে গাছতলায় বোর্ড টানিয়ে পাঠদান করাচ্ছেন একাধিক শিক্ষক। অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন পিয়াইম নাছির উদ্দিন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা উম্মে কুলসুম। এই অনলাইন ক্লাসের আওতায় যেসব গ্রাম পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারে না তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন শিক্ষিকা উম্মে কুলসুম। পিয়াইম নাছির উদ্দিন সরকারী থমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী গোলাপী রাণী সরকার এবং জোনাকী রাণী সরকার জানায় তাদের শিক্ষিকা উম্মে কুলসুম প্রতি সপ্তাহে একবার তার বাড়িতে যান এবং পড়ার খোঁজখবর নেন। এতে করে তার পরার আগ্রহ বাড়ছে।
বুল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প ম শ্রেণির ছাত্রী সুম্মিতা দাশ জানায়, তার শিক্ষক তার বাড়িতে যায় পাশাপাশি ফোনে নিয়মিত খোঁজখবর নেয়। স্থানীয় অভিভাবক আশরাফ আলী বলেন, ‘শিক্ষকরা বতর্মান পরিস্থিতিতে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা নিয়ে শিক্ষকরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। এতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী হচ্ছে।’
শিক্ষিকা উম্মে কুলসুম জানান, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। এমন পরিস্থিতিতে বাড়ছে অনলাইন ক্লাসের গুরুত্ব। সংসদ বাংলাদেশ টিভি চ্যানেলে প্রচারিত হচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণির ক্লাস। পাশাপাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। প্রযুক্তিগত নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও গ্রামগঞ্জের শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। অনেকে নতুন করে শিখছেন প্রযুক্তির ব্যবহার। তবে প্রযুক্তির ব্যবহারের সঙ্গে সম্পৃক্ত না থাকায় এ ক্লাসগুলো থেকে বি ত হচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষার্থীরা। শাহপুর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নূরুন্নাহার খানম জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনলাইনে ক্লাস নেওয়া দিন দিন বাড়লেও বাস্তবতা হচ্ছে গ্রামের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর অনলাইন ক্লাসে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। স্মার্টফোন, ইন্টারনেট ও কম্পিউটার ব্যবহারের সুবিধা নেই গ্রামের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর। এমনকি অনেকের ঘরে টিভিও নেই যে তারা সংসদ টিভির মাধ্যমে ক্লাসে অংশগ্রহণ করবে। এমন পরিস্থিতিতে শিশুদের লেখাপড়া সচল রাখতে আমার এ উদ্যোগ। অনলাইন ক্লাসে শহরের শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা গেলেও গ্রামের চিত্র ভিন্ন। তাই অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার পাশাপাশি সপ্তাহে একবার করে হলেও শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিলে বসছে কম। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজখবর রাখছি। পড়া দিচ্ছি আবার তা আদায়ও করে নিচ্ছি।
দক্ষিণ হরিশ্যামা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নাজমুন্নাহার খানম জানান, গ্রামের শিশুরা পড়ালেখায় মনোযোগী কম। আর বেশির ভাগ শিক্ষার্থী গরিব পরিবারের তাই নানা সমস্যা রয়েছে তাদের। শিক্ষকরা তাদের জায়গা থেকে চেষ্টা করছে এতে করে যদি বিন্দুমাত্র শিক্ষার্থীদের উপকার হয় তাহলেই শিক্ষকদের পরিশ্রম সার্থক।
।
মাধবপুর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল নাজিম জানান, মাধবপুর উপজেলার প্রাথমিকের শিক্ষকদের এমন উদ্যোগ এরই মধ্যে প্রশংসিত হয়েছে। আমরা অন্যান্য শিক্ষকদের বলছি শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করার জন্য। এ ধরনের উদ্যোগ যারা নেবেন শিক্ষা বিভাগ তাদের সহযোগিতা করবে।
মাধবপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, মাধবপুর উপজেলা অনলাইন প্রাইমারি স্কুল নামে একটি ফেসবুক পেজে প্রতি স্কুল থেকে বাছাই করা শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। অনলাইনে ক্লাসের পাশাপাশি মাধবপুর উপজেলার শিক্ষকদেরকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনলাইন ক্লাসের আওতায় যারা আসেনি স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের নিয়মিত মনিটরিং করার জন্য সহকারী শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।