বর্ষায় মাছ ধরার উপকরণ চাঁই বিক্রি জমে উঠেছে হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন হাটগুলোতে। এখানকার তৈরি এসব উপকরণ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। গুণগত মান ভালো হওয়ায় আশানুরুপ দাম পাচ্ছেন চাঁইশিল্পের সঙ্গে জড়িতরা। উপজেলার নি¤œ আয়ের পরিবারগুলো বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছে এই চাঁইশিল্প।
বাঁশ ও তালের ডাগুরের আঁশকে পুঁজি করে তৈরি এই চাঁই বর্ষাকালে বিভিন্ন জলাশয়ে ছোট ছোট মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত হয়। হাতে তৈরি এসব মাছ ধরার ফাঁদ তৈরি করে প্রতিটি পরিবার দিনে এক হাজার দুই শ টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকে। পরিবারের সকলেই এই ফাঁদ তৈরির কাজে জড়িত থাকে।
এসব ফাঁদ তৈরির সঙ্গে জড়িতদের কথা বলে জানা গেছে, চাঁই বুনে লাভবান হওয়ায় এ অ লের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সারা বছরই মাছ ধরার এসব উপকরণ তৈরি করছেন। মাধবপুর উপজেলার বসবাসরত নিম্ন আয়ের কয়েক হাজার মানুষ হস্ত চালিত এই শিল্পের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করলেও এসব শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে নেই সরকারি উদ্যোগ। বিভিন্ন এনজিও ব্যক্তির কাছ থেকে চড়াসুদে ঋণ নিয়ে তারা কোন রকমে তাদের পেশাকে টিকিয়ে রেখেছেন। সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পেলে বিশাল এই জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে আরো লাভবান হবে।
মাছ ধরার উপকরণগুলো: চাঁই (খোলসুন), ধন্দি, বানা, খাদন, খালই, বিত্তি ও ভাইর নামে পরিচিত। মাধবপুরের মনতলা, চৌমুহনী, ধর্মঘর, বুল্লা, বানেশ্বর, মাঝিশাইর, মাল্লা সহ বিভিন্ন গ্রামের নিম্ন আয়ের বেশিরভাগ মানুষ বর্তমানে চাঁই শিল্পের উপর ভর করে (মাছ ধরার সামগ্রী তৈরি ও বিক্রি করে) জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তৈরির উপকরনঃ মাছ ধরার সমগ্রী তৈরি করতে বেশ কয়েক প্রকার উপকরন প্রয়োজন হয়। যেমন, তোল্লা বাঁশ, তালের ডাকুর, দা, কান্তি এবং আঁশ ছড়ানোর জন্যে বাঁশের চুঙ্গির দরকার হয়।
বাজার ঘুরে জানাযায়, বর্ষায় মাছ ধরার জন্য নতুন সব ফাঁদ সুবিশাল মাধবপুর হাট-বাজারে ওঠতে শুরু করেছে। উপজেলার পৌর শহর, শাহপুর বাজার, মনতলা, চৌমুহনী, চেঙ্গারবাজার, তেমুনিয়া, শাহজাহানপুর, শাহজিবাজার সহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি হচ্ছে। এক জোড়া চাঁই (খোলসুন) আকার ভেদে ৩’শ ৫০ থেকে ৪’শ টাকা, বৃত্তী ২’শ টাকা, ভারই আড়াইশত টাকা, ধন্দি ২’শ টাকা, বানা ৩’শ টাকা, খাদন সাড়ে ৩শ টাকা ও খালই বিক্রি হচ্ছে আড়াইশত টাকায়।
বরগ গ্রামের জাহেদ খান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন হাটে বিক্রি হয় মাছ ধরার বাহারি সব সামগ্রী। এসব হাটে কম দামে পাওয়ায় তিনি মাছ ধরার সামগ্রী খোলসুন কিনেছেন।
দুর্গাপুর গ্রামের অবনী সরকার জানান, বছর পাঁচেক আগে তিনি নিজেই মাছ ধরার চাঁই শিল্পের বিভিন্ন প্রকার সামগ্রী তৈরি করতেন। পরে এ পেশায় লাভ বেশি হওয়ায় তিনি পেশা বদলে চাঁই শিল্পের সাথে তার পরিবারকেও সংশ্লিষ্ট করেন। এখন প্রতি সপ্তাহে তার পরিবার থেকে ৭/৮পিছ করে খোলসুন তৈরি করছেন। ৮পিছ খোলসুনে আড়াইশত টাকা ব্যায়ে বিক্রি করেন ৯ শত থেকে ১৫শত পর্যন্ত বিক্রি করেন।
খুচরা বিক্রেতা সুরেন্দ্র সরকার বলেন, তিনি এসব সামগ্রী প্রস্তুতকারীদের কাছ থেকে আকার ভেদে আড়াইশত থেকে ৩শ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করেন। তাছাড়া মাধবপুরে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে চাহিদা অনেক বেশি হয়ায় দাম বেশি।
হরিশ্যামা গ্রামের তারা মিয়া জানান, ‘বর্তমানে এই হাটে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২০ হাজার টাকার মাছ ধরার সামগ্রী বিক্রি হয়। মাধবপুরের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ এ হাটে এসব সামগ্রী কনিতে আসে