হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার খ্যাত শাহজাহানপুর, ভান্ডারুয়া, তেলিয়াপাড়া সহ বেশ কয়েকটি স্থানে বাঁশের চাষ করা হতো। বাড়ির উঠানে রাখা সারি সারি বাঁশের কি । তার পাশেই দা নিয়ে বসা বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। গল্প করতে করতে দা দিয়ে বাঁশের কি কেটে মসৃণ করছেন তারা। এরপর মসৃণ কি গুলো রোদে শুকিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করছেন মাছ বড়শির ছিপ।
ছিপ তৈরির এই দৃশ্য ধরা পড়ে হবিগঞ্জের মাধবপুরের শাহজাহানপুর ইউনিয়নের ভান্ডারুয়া গ্রামে। রড়শির ছিপ তৈরি করে তারা এখন স্বাবলম্বী। উপজেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব অবস্থিত ভান্ডারুয়া গ্রামটি বড়শির ছিপ তৈরির জন্য বিখ্যাত। অর্থ ও সামাজিক ভাবে পিছিয়ে থাকা গ্রামের অর্ধশত পরিবার এই পেশায় এসে নিজেদের ভাগ্যবদল করেছে।
সংসারে ফিরেয়ে এনেছে আর্থিক স্বচ্ছলতা। সরজমিনে ভান্ডারুয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেকটি বাড়ির উঠানে চলছে ছিপ তৈরির কাজ। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সংসারের কাজের পাশাপাশি ছিপ তৈরি করেন। বর্ষার সময় ছিপের চাহিদা থাকে অনেক। তাই এখন থেকেই ছিপ তৈরি করে বিক্রির জন্য সংরক্ষণ করছেন কারিগররা। ছিপ তৈরির জন্য বাঁশের কি সংগ্রহ করেন কারিগররা। এরপর সেই কি ছিপের মাপ মতো কেটে দা দিয়ে মসৃণ করে রোদে শুকানো হয়। এরপর কয়লার আগুনে পুড়িয়ে ও ছ্যাকা দিয়ে কি গুলো সোজা করে বড়শির ছিপ তৈরি করা হয়। উপজেলার বুল্লা, ছাতিয়াইন, শাহজিবাজার, তেমুনিয়া, মনতলা, ধর্মঘর, চৌমুহনী সহ ভাটি অ লের নদী, নালা, খাল-বিল ও পুকুরে মাছ ধরার জন্য ছিপের চাহিদা অনেক। সেই চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ভাটি অ লের প্রত্যেকটি গ্রামে প্রতি বছর এক লাখের বেশি ছিপ তৈরি করা হয় বিক্রির জন্য। শৌখিন মৎস্য শিকারি ও পাইকাররা এখান থেকে ছিপ কিনে নিয়ে যান। পাশাপাশি স্থানীয় হাট-বাজারেও বিক্রি হয়। ছিপ তৈরির কারিগর আমির হোসেন বলেন, ‘প্রতিটি বাঁশের কি র ১৫ টাকা দরে কিনে আনা হয়। এরপর কি মাপ মতো কেটে বিভিন্ন আকারের ছিপ তৈরি হয়। ছোট ছিপ ৬০ থেকে ৭০ টাকা, মাঝারি ছিপ ৭০ থেকে ১৩০ টাকা ও বড়ছিপ ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। তবে পাইকারি দাম আরো কম কয়েক যুগ ধরে এই গ্রামের পুরুষদের রোজগারের পাশাপাশি নারীরাও ছিপ তৈরি করে আর্থিক উন্নয়ন করছে। খড়ের ঘরগুলো এখন টিনশেড ও আধাপাকা হয়ে গেছে। গ্রামে এখন অভাবী মানুষ নেই বললেই চলে। প্রায় প্রতিটি পরিবারের ছেলে-মেয়েরাই স্কুলে যায়।
মাল্লা গ্রামের কারিগর সেলিম মিয়া বলেন, ‘ছিপ তৈরি করে আমাদের ভাগ্য বদল হয়েছে। ছিপ বিক্রির টাকায় সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি দুই ছেলে ও এক মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি। একই গ্রামের রুবিনা আক্তার বলেন আগে খড়ের ঘরে থাকতাম। কিন্তু এখন ছিপ বিক্রির টাকায় আধাপাকা বাড়ি করেছি। কৃষি কাজের পাশাপাশি ছিপ তৈরি করে এখন আমি পরিবার নিয়ে সুখী গত দুই যুগে মাল্লা গ্রামের ছিপের খবর ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার নানা প্রান্তে। মৎস্য শিকারিদের বিশ্বাস এই গ্রামের তৈরি ছিপে মাছ বেশি ধরা পড়ে। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে মুখরোচক গল্পও। মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন হাছান জানান, ছিপ বাঁশ আরো সম্প্রসারিত করার জন্য বাঁশচাষীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি এবং রোগ বালাই রোধে প্রয়োজনীয় কীটনাশক ব্যবহারে প্রয়োগ দিয়ে আসছি।