হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় সবজি চাষ করে প্রায় ৩ শতাধিক কৃষক সাবলম্বী হয়েছে। ফলে কৃষকরা ধান চাষের বদলে সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছে। নিজেদের চাহিদা মেটাতে বছরের বারো মাসই জমিতে রকমারি সবজি চাষকে লাভজনক মনে করছেন কৃষকরা। তারা মনে করে সবজি চাষে নিজের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন তা বাজারে বিক্রি করে নগদ টাকা পাওয়া যায়। তাছাড়া বেশি ফলনের পাশাপাশি খরচও অপেক্ষাকৃত কম। যা দিয়ে বেশ ভালোভাবেই সংসার চলে যায়। ধান চাষে যা সম্ভব হয় না। এ কারণে মাধবপুর উপজেলার ধর্মঘর, চৌমুহনী, বহরাসহ আশে পাশের ইউনিয়নের কৃষকরা সবজি চাষকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। চৌমুহনী ও বহরা ইউনিয়নের কয়েকজন সবজি চাষিরা জানান, তুলনামূলকভাবে সবজি চাষে লাভ বেশি হওয়ায় মাধবপুরের অধিকাংশ কৃষক এখন সবজি চাষের দিকে নজর দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে বহরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আরিফুর রহমান ধারনা করছেন অনেক আগে থেকেই মাধবপুর উপজেলা বিশেষ করে দক্ষিণ অ লের কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষকরা সবজি চাষ করছেন। জমির মাটি পলিযুক্ত হওয়ায় বংশ পরম্পরায় সবজি চাষ বাড়তে থাকে এই অ লে। কৃষকরা অধিক লাভ পাওয়ায় ধান চাষের চেয়ে সবজি চাষে উৎসাহ দেখাচ্ছেন বেশি। স্থানীয় কৃষকরা জানান, বাপ দাদার আমল থেকেই এখানে সবজি চাষ করে আসছেন। তবে ঠিক কখন থেকে এই অ লে সবজি চাষ শুরু হয় তা সুনিদিষ্ট করে বলতে পারেননি তারা।
ধর্মঘর, চৌমুহনী ও বহরা ইউনিয়নের ৩০-৩৫টি গ্রামের কৃষকের প্রধান আবাদযোগ্য ফসল নানা জাতের সবজি। বিশেষ করে ধর্মঘর ইউনিয়নের আলীনগর, দেবপুর, সুলতানপুর, কালিকাপুর, চৌমুহনী ইউনিয়নের রাজনগর, গাজিপুর, জয়পুর, শাহজালালপুর, হরিণখোলা, কমলপুর, মনোহরপুর, অলিপুর, কালি কৃষ্ণনগর, মঙ্গলপুর, বহরা ইউনিয়নের ভবানীপুর, রামনগর, দূর্গানগর, উত্তরশিক, রাজাপুর, আউলিয়াবাদসহ কয়েকটি গ্রামেই ধানের চেয়ে সবজিই চাষ বেশি হয়।
শাহজালালপুর গ্রামের কৃষক সুজন মিয়া বলেন, ধান চাষ যে একেবারে কমে গেছে তা ঠিক নয়। অনেকেই অবশ্য পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী সামান্য জমিতে ধান চাষ করেন। স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরে এক বিঘা জমি থেকে সবের ১৫-২০ মণ হারে ধানের ফলন পাওয়া যায়। এর জন্য ব্যয়ও করতে হয় প্রচুর। যা এক জন প্রান্তিক চাষির জন্য অত্যন্ত কষ্ট কর হয়ে দাঁড়ায়। তাই সহজ ও কম খরচে সবজি চাষ করেন।।।।
মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আল মামুন হাছান জানান, ধান চাষ কমে যাচ্ছে এ কথা ঠিক নয়। তবে এ অ লে সবজি চাষে ফলন ভাল হওয়ার ফলে কৃষকরা সবজি চাষকে লাভ জনক মনে করে। কৃষকদের ক্ষেতে টমেটো, শিম, বেগুন, পটল, বাধাঁকপি, লাউ, ফুলকপি, করলা, মূলা, কাচামরিচ, মিষ্টিকুমড়া, লালশাক, পেয়াজসহ নানা ধরনের সবজি ফলছে। এসব সবজি বিক্রি করেই তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন। আর স্বাচ্ছন্দে সংসার চালাচ্ছেন। মাধবপুরের দুটি রাবার ড্যাম এখন সচল ও সহনশীলতা। এখন সোনাই নদীর পানি দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে সেচের মাধ্যমে চৌমুহনী, বহরা ও ধর্মঘর ইউনিয়নে বোরো ধান ও শাক সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি করা। রাবার ড্যাম দুটি থাকায় প্রায় আড়াই হাজার একর (এক হাজার হেক্টর) জমিতে বোরো ও সবজি চাষ হচ্ছে। প্রায় ৮/৯ বছর ওই ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক সহজ সেচের মাধ্যমে ধান ও সবজি উৎপাদন করে আসছিলেন। এখানকার উৎপাদিত ফসল যেমন স্থানীয় চাহিদা মেটাচ্ছে তেমনি উৎপাদিত টমেটো, তরমুজ, লাউ, করলা, ঝিঙ্গা, বাধাঁ কপি, ফুল কপি, শিম সহ নানা জাতীয় সবজি চাষ করে। অন্যদিকে শীত মৌসুমে সবজি উৎপাদনেও চাষিরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। মাধবপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই রাবার ড্যামের আওতায় সুবিধাভোগী ছিলেন।
রাবার ড্যামের সেচ সুবিধা পাওয়া পানিহাতা গ্রামের কৃষক তাহের মিয়া ও হোসেনপুর গ্রামের শাহজাহান মিয়া জানান, তখন সময়ে রাবার ড্যামের অবস্থা খারাপ হওয়ার ফলে আমরা সাধারণ কৃষকরা সেচ সুবিধা পেতে কিছুটা কষ্ট হয়েছিল। তাই বর্তমানে অনেকটা পানি সেচে তেমন অসুবিধা হয় না।
চৌমুহনী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আপন মিয়া জানান, রাবার ড্যামটি সচল থাকার কারনে এখানকার কৃষকরা পানি সেচে তেমন অসুবিধা হচ্ছে না। এ সোনাই নদীর পানি দিয়ে এলাকার কৃষকরা ধান চাষ তথা সবজি চাষেও ব্যাপক ভুমিকা রেখেছে।