টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এবারও এই নদের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ভাঙনের কবলে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আটটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি উচ্চ বিদ্যালয়। বিশেষ করে উপজেলার পাইকের ছড়া ইউনিয়নের ২ নম্বর পাইকের ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীর তীর থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে রয়েছে।
এছাড়া ভাঙনের হুমকিতে আছে পাইকডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আব্দুল করিম (১৫০০) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গনাইর কুঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১ নম্বর চর ধাউরার কুঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ চরভূরুঙ্গামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হেলোডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর ধলডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চর তিলাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন থেকে দুধকুমর নদ ভাঙলেও বিদ্যালয়গুলো রক্ষায় কোনা কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২ নম্বর পাইকের ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি দুধকুমর নদের ভাঙন তীরের খুব কাছাকাছি এসে পড়েছে। এই বর্ষায় বিদ্যালয়টি বিলীনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগে পাইকের ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় ভয়াবহ নদীভাঙন দেখা দেয়। নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয়ের ভবনটি নিলামে বেচে দেন। সেবারের ভাঙনে বিলীন হয় নিলামে বিক্রি হওয়া ভবনের জায়গা। গত বছরে পুনরায় নদী ভাঙন দেখা দিলে বিদ্যালয়ের অর্ধেক মাঠ বিলীন হয়ে যায়। সে সময় ভাঙনের তীব্রতা কমে যাওয়ায় সে যাত্রায় বেচে গেলেও অবশিষ্ট মাঠ ও বিদ্যালয়ের ভবনটি এবারের বর্ষায় অক্ষত থাকবে কি-না সেই দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিদ্যালয়গুলো ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় কর্তৃপক্ষ অদ্যাবধি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। পাইকের ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত চারবার নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে।
বিদ্যালয়টির পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাছিমা খাতুন, মাসুমা খাতুন ও প্রথম শ্রেণির ছাত্রী সিমা জানায়, নদী যদি স্কুলটি ভেঙে নিয়ে যায়, তাহলে আমাদেরকে অনেক দূরের স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। তখন আমাদের যাতায়াতের খুব কষ্ট হবে।
বিদ্যালয়ের এসএমসির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মজিবর রহমান ও অভিভাবক আজিজুল ইসলাম জানান, স্কুলটি যদি নদীতে চলে যায় তাহলে এলাকার শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়া স্কুলটিকে বর্তমান স্থান থেকে অন্যত্র সরিয়ে নিলেও এই এলাকার শিশুদের যাতায়াতে সমস্যা হবে এবং অনেক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার আশঙ্কা আছে।
স্কুলটিকে নদী ভাঙনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বাঁধ নির্মাণ ও মাটি ভরাটের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুস সামাদ বলেন, ‘গত বছর দুধকুমর নদের ভাঙনে বিদ্যালয়ের অর্ধেক মাঠ নদীতে চলে গেছে। দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে এবারের বর্ষায় বিদ্যালয়টি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যালয়টিকে বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপজেলা শিক্ষা অফিসকে অবগত করেছি।’
দক্ষিণ চরভূরুঙ্গামারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি কয়েকবার দুধকুমরের ভাঙনের শিকারে পরিণত হয়েছিল। এখন যে জায়গায় বিদ্যালয়টি আছে সে স্থানেও নিরাপদ নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
১ নম্বর চর ধাউরারকুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম ও পাইকডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে দুধকুমর নদ ভাঙছে। নদী ভাঙনের সীমানা থেকে বিদ্যালয় দুটি ২০০ থেকে ৩০০ গজ দূরত্বের মধ্যে চলে এসেছে। এ বছর কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে হয়ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করব।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা বলেন, ‘২ নম্বর পাইকের ছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কুড়িগ্রামকে জানানো হয়েছে। বাকি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়েও ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে শিগগিরই জানানো হবে।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙনের শিকার স্কুলগুলোর বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ থেকে আমাকে কেউ জানায়নি। তবে বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।’