November 24, 2024, 3:41 am
শিরোনাম:
শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন কক্সবাজারের নুরুল আফসার শিকদার মনোহরদীতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন মনোহরদীতে দিনব্যাপী পাট চাষী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বেধরক মারধরের অভিযোগ মনোহরদীতে জনমত জরিপ ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ সরকার মনোহরদীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী “আলোকিত গোতাশিয়া” ফেসবুক গ্রুপের পক্ষহতে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে অসহায়দের মাঝে শিল্পমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে খননযন্ত্র ও বালুর স্তুপ জব্দ এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার করলেন মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খান

মাধবপুরে বিলুপ্তির পথে ঘানিশিল্প

লিটন পাঠান, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
  • আপডেটের সময় : সোমবার, জুলাই ১২, ২০২১
  • 187 দেখুন

হবিগঞ্জের মাধবপুরে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঘানি সময়ের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে ঘানি শিল্প। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে নিত্য নতুন যন্ত্রপাতির আবিষ্কারের ফলে মানুষের প্রতিটি কাজ হচ্ছে সহজ থেকে সহজতর। বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে স্বল্পখরচ ও স্বল্পসময়ে অধিক উৎপাদনের কারণে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ‘ঘানিশিল্প’ আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। ফলে ঘানিশিল্প সংশ্লিষ্ট অনেকেই বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছেন।

যারা আছেন তারা বাপ-দাদার এ পেশাকে কোনো রকম আকঁড়ে ধরে রেখেছেন। এক সময় ঘানিশিল্পে গরুর সাহায্যে সরিষা তেল বের করা হত। গৃহস্থরা খাঁটি সরিষার তেল তরি-তরকারিসহ সব ধরনের রান্নার কাজে ব্যবহার করত। এক কথায় ঘানির সরিষার তেল ছাড়া সে সময় রান্না-বান্নাতে যেন গৃহিনীরা আর অন্যকিছু চিন্তাই করতো না।

অন্যদিকে ঘানির সরিষার খৈল গরুর খাবার, মাছের ঘের, পানের বরজ ও বিভিন্ন ক্ষেতে ব্যবহার করা হতো। সে সময় ঘানির সরিষার তেলের বিকল্প যেন আর কিছুই ছিল না। মাধবপুর উপজেলার পূর্ব মাধবপুরের ইয়াকুব আলী তিনি জানান, ঘানির সাথে টি করে গরুর চোখ বেঁধে কাঁধে জোয়াল লাগিয়ে দেয়া হয়। পরে গরুটি দিনভর চরকীর মতো আপন মনে ঘুরতে থাকে। তখন ঘানির নল দিয়ে টিপটিপ করে তেল বের হতে থাকে। একসময় গৃহস্থরা সেই তেল মাটির পাতিলে করে বাঁশের চোঙ্গ দিয়ে মেপে বাজারে বিক্রি করতো। এ যেন সত্যিই গ্রাম বাংলার ঐহিত্যের অহংকার। কিন্তু বর্তমান ডিজিটাল যুগে সেই তেল ডিজিটাল মাপক যন্ত্র দিয়ে মেপে বিক্রি করা হচ্ছে। কালের বিবর্তনে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঘানিশিল্প আজ প্রায় বিলুপ্ত। বৈদ্যুতিক যন্ত্রের শব্দে হারিয়ে যেতে বসেছে আদি কালের ঘানি শিল্পের সেই ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ। আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশে তেলের ঘানিশিল্পের পরিবর্তে যন্ত্রচালিত তেলের কল চালু হওয়ায় এবং গৃহস্থরা খাঁটি সরিষার তেলের বিকল্প যেমন সয়াবিন, পামওয়েল, কলের সরিষা তেল ব্যবহারে কারণে সরিষা তেলের চাহিদা দিনে দিনে কমতে থাকায় এ শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। আবার সরিষার আবাদ কমে যাওয়ায় এবং সরিষার দাম বেশি হওয়ায় ঘানির তেলের দামও বেশি। মাধবপুর উপজেলার পশ্চিম বাজারের মোহন মিয়া জানান, খুব কষ্ট করে বাপ-দাদার এ পেশাটি ধরে রেখেছি। তার বাড়িতে দু’টি ঘানি রয়েছে। দৈনিক দু’টি ঘানি থেকে ১২ কেজি সরিষার তৈল উৎপাদন হয়। তবে বর্তমান বাজারমূল্যে কোনরকম খেয়েপরে পেশাটি ধরে রেখেছেন তিনি। তার পরিবারের আর কেউ এ পেশার সাথে জড়িত নয়। সকলেই অন্য পেশা বেছে নিয়েছে। হরিশ্যামা গ্রামের সুকুমার দাস জানান, সে ঘোড়া দিয়ে সরিষার তেল ভাঙ্গিয়ে মাধবপুর হাঁটে নিজেই ফুট পথে বসে বিক্রয় করে সংসার চালাতেন।

এ ছাড়া মাধবপুরের মোবারক মিয়া জানান, অসংখ্য ঘানি সে ছিল। কিন্তু কালের বির্বতনে সব হারিয়ে গেছে। বর্তমানে মাধবপুরে প্রায় ৫/৭টি আধুনিক মেশিন দ্বারা এসব কাজ করানো হচ্ছে। তবে অনেকের মতে এখনও খাঁটি সরিষার তেল বলতে ঘানির তেলকেই বুঝিয়ে থাকেন। ঘানির তেলের এই ব্যাপক চাহিদার পরও আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারের কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী ঘানিশিল্প। বাপ-দাদার পেশার ঐতিহ্য হিসেবে এখনো অনেক কষ্টে তারা টিকিয়ে রেখেছেন ঘানিগুলো। প্রতিটি ঘানির একটি বিশেষ আকৃতির ছিদ্রের ভেতর দিয়ে তেল পড়ে এবং তা একটি ড্রামে সংরক্ষণ করা হয়। প্রতিটি ঘানিতে একবারে সর্বোচ্চ ৫ কেজি সরিষা ভাঙ্গা সম্ভব হয়। প্রতি কেজি তেল বিক্রি হয় ২২০ টাকা দরে। ঘানির মালিক জাফর আলী আরো বলেন, অন্যান্য তেলের থেকে ঘানিভাঙ্গা তেলের দাম বেশি। এই তেলের চাহিদাও বেশি। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এখানে ছুটে আসেন ঘানির তেল কিনতে। অনেকে অগ্রীম অর্ডার দিয়ে রাখে। বিদেশেও তার এখান থেকে তেল নিয়ে যায় অনেক প্রবাসী। আচারের জন্য ঘানির তেল বেশী ব্যবহার হয়।

তবে ঘানিশিল্পে লোকসানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যবসায় এখন আর লাভ নেই। ঘানির তেল বিক্রিতেই যা লাভ। আর ২/১ বছরের মধ্যে এ পেশা একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন। এ ব্যাপারে মাধবপুর প্রেসক্লাবের সাংবাদিক আলা উদ্দিন আল রনি জানান, আগের ঘানি শিল্পের দ্বারা তেলের স্বাধই ছিল আলাদা। কোন প্রকার কৃত্রিম ছাড়াই মাড়াই করা হতো। এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্যামিকেল যুক্ত করে এসব তেলে ভেজাল মেশানো হচ্ছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

https://bd24news.com © All rights reserved © 2022

Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102