সম্প্রতি করোনা মহামারীর এ ভয়াল থাবায় সারাদেশের ন্যায় হবিগঞ্জের মাধবপুরেও করোনাভাইরাস মহামারী আকারে ধারণ করেছে। করোনা প্রতিরোধে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও সাধারণ মানুষের অসচেতনতার দরুণ আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে বেড়েই চলছে। ঠিক এভাবে মাধবপুর উপজেলায় মানুষের সচেতনতায় বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তাছাড়া করোনার লক্ষণ থাকা সত্তে¡ও সচেতনতার অভাবে কেউ করোনা টেস্ট করতে আগ্রহ দেখান না। সা¤প্রতিক সময়ে মাধবপুরের ব্যাপক হারে মানুষ জ্বর, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্টসহ নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
লক্ষণ বেশিরভাগই করোনার। কিন্তু মফস্বলে নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই মানুষ ছুটে চলছেই। সাধারণ মানুষ মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি, লক্ষণ দেখা দিলেও করাচ্ছেন না টেস্ট। ঝুঁকি নিয়েই হাঁটেমাঠে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। স¤প্রতি দেখা গেছে, নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে ও অজানা আতংকে মানুষ ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ভিড় করছে উপজেলা সদরের বিভিন্ন ফার্মেসিতে। বিভিন্ন ধরণের এন্টিবায়োটিক ঔষধ খেয়ে কেউ কেউ সুস্থ হচ্ছেন, আবার কেউ কেউ আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
অন্যদিকে, করোনাভাইরাসের মহামারীর কারণে মাধবপুর উপজেলায় রয়েছে ভালো চিকিৎসকের সংকট। এসব রোগ-ব্যাধি থেকে বাদ পড়ছে না কোমলমতি শিশুরাও। বিশেষ করে ১-৮ বছরের শিশুরা বেশি ভুগছে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে, শিশুদের সুস্থ করে তোলার জন্য সচেতন অভিভাবকরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন। সরেজমিনে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায় প্রচুর রোগী সেখানে ভিড় করছে। অনেকেই হাসপাতালে এবং অনেকেই বিভিন্ন ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অনেক চিকিৎসক ফার্মাসিষ্ট সম্পর্কিত ধারণা নিয়েই ফার্মেসীতে ডাক্তারি করছেন তাদের কাছেও নিয়মিত সর্দি, কাশি, জ্বর রোগীদের ভিড় করছে। এদিকে জ্বর, সর্দি, কাশিসহ করোনাভাইরাসের উপসর্গ হলেও মাধবপুর উপজেলার সাধারণ মানুষের মাঝে করোনা পরীক্ষা করার কোন আগ্রহ বা ইচ্ছা দেখা যাচ্ছে না।
করিম মিয়া নামে এক রোগী বলেন, ‘৪/৫ দিন ধরে জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছি, ডাক্তার দেখিয়েছি, এখন বেড রেস্টে আছি।’ সাইফুল ইসলাম নামের একজন জ্বর ও গলা ব্যথাজনিত সমস্যা নিয়ে ভুগছেন। তিনি জানান, ‘ফার্মাসিস্ট এর কাছ থেকে ঔষধ নিয়েছি, এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠিনি।’ এরকম শত শত রোগীর ভিড় দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন ফার্মেসি ও ফার্মাসিস্ট এর চেম্বারগুলোতে। ফার্মেসি ব্যবসায়ী বুদ্ধদেব দাশ জানান, গত একমাস ধরে প্রচুর মানুষ জ্বর সর্দি-কাশি, গলাব্যথার ঔষধ নিতে আসেন। দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার পর থেকেই এসব রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে অনেকগুণ। তিনি আরো জানান, ‘আমার মনে হয় উপজেলার অনেকেই করোনায় আক্রান্ত আছেন। কিন্তু টেস্ট না করায় এদের করোনা পজিটিভ হয়নি। আমরা ঝুঁকি নিয়েই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঔষধ বিক্রি করে আসছি।’ হরিশ্যামা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক সমীরন দাশ জানান, ‘লকডাউন না থাকলে এসব রোগীর সংখ্যা আরো অনেক বেশি বেড়ে যেত। অনেকেই আসেন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সেবা নিতে। কারো কারো জ্বরের ঔষধ খাওয়ার পর জ্বর কমে যায়, কিন্তু দুইতিন দিন পরে আবার শুরু হয় গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা। আমরা নিয়ম মেনে যতটুকু পারি রোগীদের সেবা দিয়ে আসছি।’ মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য মতে সর্বশেষ প্রায় ৩৬০টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন ১৭ জন, আইসোলেশনে ৮৭ জন এরই মাঝে সম্প্রতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩ জন মারা গেছেন। উপজেলা আবাসিক ডাক্তার ইমরুল হাসান জাহাঙ্গীর জানান, করোনা রোগীরা বেশির ভাগই প্রথমে সর্দি, কাশি নিয়ে হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেন। পরে আইসোলেশনে থাকার কথা বললে তারা প্রথমে রাজি হয় পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সিলেট হাসপাতালে যাবে বলে হাসপাতাল ত্যাগ করে।
এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএইচএম ইশতিয়াক মামুন বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায়ই রোগীরা সেবা নিতে আসা বেশির ভাগই সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরছেন। তবুও সকাল থেকে রোগীদের ভিড় থাকে। এর মাঝে ১৫-২০ জনই সর্দি, জ্বর, কাশিতে ভুগছিলেন।
তিনি আরো জানান, ‘মফস্বলে এখনো মানুষ করোনাকে ভয় পায়, যার কারণে টেস্ট করতে চায় না কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে বলে। আমরা বার বার এনাউন্স করিয়েছি, করোনার লক্ষণ দেখা দিলে টেস্ট করেন, সঠিক সেবা নেন। কিন্তু এখনো মানুষের মাঝে অসচেতনতাবোধ কাজ করছে যা খুবই দুঃখজনক। মাধবপুর পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান মানিক তিনি প্রায়ই পৌর বাজারে বিনা মূল্যে মাস্ক সহ হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাধারণ লোকদের দিয়ে আসছেন। তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষ সচেতনতা বৃদ্ধি করলে এ মহামারী করোনার হাত থেকে আমরা দেশকে রক্ষা করতে পারব।