ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রমজান দ্বিতীয়। আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে ইসলাম ধর্মালম্বী মানুষের মাঝে রমজানের তাকওয়া পূরণে রয়েছে মুসলমানদের নানান রকম ত্যাগের ইতিহাস। বিশেষ করে রমজান মাস এলেই মুসলিম উম্মাদের মাঝে রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে চোখে পড়ে নানান ঘটনা।তেমনি ক্লান্তিহীনভাবে টানা ২৭ বছর ধরে রাত জাগা প্রহরীর মত সেহরির সময় মানুষকে জাগানোর কাজ করে যাচ্ছেন আবু হোসেন (৬৫।রমজান এলেই সেহরি সময় আবু হোসেনের গলার উদ্বাত্ব ডাকের অপেক্ষায় থাকেন তিন গ্রাম (কদমতলা,সিতাইঝাড় নয়ারহাট) মোসলমানরা।রাত ১.৩০ মিনিটে এক হাতে টর্চ লাইট অন্য হাতে টিনের তৈরি হরেণে মুখ দিয়ে আওয়াজ করতে করতে বেড়িয়ে পড়েন তিনি।
ঘুমন্ত মানুষের উদ্দেশ্য বলতে থাকেন “জাগো… জাগো… জাগো আল্লাহর বান্দারা জাগো।সেহরি খাওয়ার সময় হয়েছে ঘুমিয়ে থাকেন না আর।জাগো জাগো।সেহরির সময় থেকে শেষ সময় পর্যন্ত ক্ষনে ক্ষনে টিনের হর্ণের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে হরেণ আবুর গলার ডাক।যার ডাক শুনে প্রত্যান্ত গ্রাম চরাঞ্চলের মানুষজন জেগে উঠেন,নেন সেহরি খাওয়ার প্রস্তুতি।।সেহরির সময় থেকে শেষ সময় পর্যন্ত ক্ষনে ক্ষনে টিনের হর্ণের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে হরেণ আবুর গলার ডাক।যার ডাক শুনে প্রত্যান্ত গ্রাম চরাঞ্চলের মানুষজন জেগে উঠেন,নেন সেহরি খাওয়ার প্রস্তুতি।
জানা যায়, আবু হোসেন রোজাদার মানুষের ক্লান্তির ঘুম ভেঙে সঠিক সময়ে সেহরি খাওয়ার ডাক দিয়ে আসছেন প্রায় ২৭ বছর ধরে।রোজা রাখার ইচ্ছে থাকা সত্বেও অনেকেই ঘুমে বিভোর থাকায় সঠিক সময় জেগে উঠতে পারেন না।আবার ঘুম না ভাঙার কারনে শেষ পর্যন্ত রোজাটাই রাখতে পারেন না অনেকেই।
বিশেষ করে প্রত্যান্ত গ্রাম ও চরাঞ্চলে পরিবারেরা এই রকম অনাকাঙ্ক্ষিত বিড়ম্বনায় পড়ে থাকেন।মাইকের ব্যবহার কিংবা মাইকে সেহরির সময় ঘোষণাকারীর অভাবে সময় মত জাগতে পারে না অনেকেই। এসব বিষয় চিন্তা করে পায়ে হেঁটে গভীর অন্ধকারে নদীর তীরে তীরে এলান দিয়ে মানুষকে জাগ্রত করে আসছেন আবু হোসেন। টানা ২৭ বছর ধরে মুখে হর্ণ বাজিয়ে রোজাদারদের জাগিয়ে তোলা আবু হোসেনকে অনেকেই হরেন আবু নামে চিনেন।
আবু হোসেন জানান,১৯৯৫ সালে চিল্লায় যান তিনি।সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আল্লাহ আর আল্লাহর রাস্তায় নিজেকে নির্বিছিন্ন ভাবে সমর্পণ করেছেন এই বৃদ্ধ।বয়সে ভারে শরীর অবস্থা নুয়ে পড়লেও রাতের অন্ধকারে পথচলাতে কোন অসুবিধা হয় না বলে জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন,আমাদের এই গ্রাম গুলো নদী ভেঙে ছন্নছড়া হয়ে গেছে।ঘন বসতি না থাকায় রাতে একে অপরের যোগাযোগ করার উপায় নেই। এই কথা চিন্তা করে আমি রমজানের পুরো মাসটা রাত ১.৩০ থেকে ফজর নামাজের পূর্ব সময় পর্যন্ত রাস্তা, মাঠ,নদীর কিনারে কিনারে টিনের মাইক দিয়ে ঘুমন্ত মানুষকে জাগ্রত করার চেষ্টা করি।আগে দুর দুরান্তর পর্যন্ত হর্ণ বাজিয়ে যেতাম।এখন আর বেশি দুর যেতে পারি না।তারপরেও ৩-৪ কিঃমি পর্যন্ত রোজ এলান দিয়ে বেড়ান।আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি মরন অব্দি যেন তার গোলাম হয়ে কাজ করে যেতে পারি।
সিতাই ঝাড় গ্রামের নজরুল ইসলাম বলেন,ছোট কাল থেকে দেখে আসছি রমজান মাস এলেই আবু চাচা লাইট আর টিনের হর্ণ নিয়ে গ্রামে গ্রামে সেহেরি খাওয়ার ডাক দিয়ে যান।গ্রামে মানুষ আমরা তার ডাকের অপেক্ষা থাকি।তিনি সঠিক সময়ে ডাক দিয়ে যান।এতে আমাদের সেহরির সঠিক সময় জানতে পারি।
তিনি বলেন,এই বৃদ্ধ বয়সে মুখ দিয়ে টিনের তৈরি হর্ণ বাজাতে তার কষ্ট হয়।একটি হ্যান্ড মাইকের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হতো বলে জানান তিনি।
সিতাইঝাড় গ্রামের সাদ্দাম হোসেন বলেন,আবু হোসেন চাচার ডাকের অপেক্ষায় থাকি।আমি শুনেছি আবু হোসেন চাচার টিনের হর্ণটির বয়স ২৫ বছর।হর্ণটি মরিচা পড়েছে।তাই একটি নতুন হর্ণ কেনার জন্য ৫শত টাকা দিলাম।উনি এ বয়সেও এই মহৎ কাজটি করে আসছেন বলে আমি আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ফজলুল করিম রহঃ জামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক মুফতি আল্লামা ইকবাল হোসেন বলেন,রোজা রাখা ফরজ।ইসলামে সেহরি খাওয়ার নির্দিষ্ট সময় নির্ধারন করা আছে।এ ক্ষেত্রে একটু বিচ্যুতির হলে কিংবা সেহরি না খাওয়ার দরুন অনেক সময় রোজাটা মাকরূহ বা নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা থাকে।সেক্ষেত্রে আবু হোসেন খুবই ভালো কাজটি করে আসছেন।নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক এ কাজের প্রতিদান দিবেন।
পাঁচগাছি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল বাতেন সরকার বলেন,রমজান মাসে ঘুমন্ত মানুষকে জেগে তুলে সঠিক সময়ে সেহরির খাওয়ার আহ্বান সত্যি প্রশংসার দাবিদার।আমি উনার বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে একটি হ্যান্ড মাইকের ব্যবস্থা করা যায় কিনা বিষয়টি দেখবো।