ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাসে বাস্তুভিটা হারিয়ে নিঃস্ব রুপজান শেখ।শুধু রুপজান শেখ নয় তার মত অর্ধশত পরিবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ঠাঁই নিয়েছে যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের সরকারি খাঁস জমিতে।বাপ দাদার ভিটে হারিয়ে গত ছয় মাসে তিনবার নদী ভাঙনের স্বীকার হন তারা।অর্থ সম্পদ হারিয়ে বিধস্ত পরিবারগুলোর চোখে এখনো লেগে আছে হতাশার ছাপ।
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে কেউ মাছ ধরে, কেউ দিনমজুর কেউবা মাঠে গরু ছাগল পালন করে জীবন বাঁচায়।সারাদিন মাছ ধরে বিকেলে বিক্রি করা মাছের টাকায় চলে তাদের সংসার।কিন্তু সেই রোজগারে বাঁধ সাধে হটাৎ বন্যা।
চারদিকে থৈ থৈ পানি।বানের জলে ডুবে আছে চারন ভূমি। একদিকে গরু ছাগলের খাবার সংকট নিয়ে বিপাকে অপর দিকে নদীতে মাছ নেই,ঘরে খাবার নেই।এক বুক পানির নিচে তলিয়ে আছে ঘরবাড়িগুলো।গত তিন ধরে খাট কিংবা বাঁশের মাঁচায় চুলা জ্বললেও শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল হলেও অনেকের উনুনে বসে নি হাঁড়ি।বৃদ্ধ বাবা মা ও ছোট বাচ্চাদের নিয়ে অনেকেই না খেয়ে আছেন।কেউবা ডুবে যাওয়া আসবাবপত্র ছোট নৌকায় তুলে আশ্রয় নিবেন জেগে থাকা কোন চরে কিংবা কোন আশ্রয় কেন্দ্রে।অনেকের গন্তব্য জানা নেই। কোন দিকে যাবেন, কোথায় ঠাঁই নিবেন জানেন না তারা।দূর্ভোগ আর শোকে চোখের জল মিশে গেছে বানের জলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চর গ্রামটি বানের পানিতে ডুবে আছে।আকাশ ভারী আতর্নাদে আশ্রয়ের খোঁজে পানি বন্দি অর্ধশত পরিবার।একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরাজি পিপুল বাড়ি বিদ্যালয়টি পানির নিচে।কোথাও উঁচু জায়গা নেই।কোমলমতি শিশু ও কিশোর কিশোরীরা বাঁশের মাচাঁয় বসে নির্বাক তাকিয়ে আছে। মানুষগুলোর মুখে দুঃশ্চিন্তার ছাপ।ঘরের আসবাব পত্র নৌকায় তুলতে ব্যস্ত তারা।সান্ত্বনার বানী দিতেও আসে নি কোন প্রশাসন কিংবা কোন জনপ্রতিনিধি।
করিমন বেগম বলেন,রান্নাঘর পানিতে ডুবে আছে। দুদিন ধরে খাটের উপর চুলায় রান্না করলাম।এখন সে খাটটিও ডুবে গেল।রান্না করি কিভাবে। সারাদিন বাচ্চারা না খেয়ে আছে।আমরা ক্ষুধা সহ্য করতে পারি কিন্তু নিষ্পাপ বাচ্চাগুলোর খুব কষ্ট হচ্ছে। যে হারে পানি বাড়তেছে রাত হলে বাচ্চাদের নিয়ে আরো দূর্ভোগে পড়বো।
পোড়ার চরের বাসিন্দা রুপজান শেখ বলেন,আশে পাশে কোথাও উঁচু জায়গা নেই।ঘরের ভিতর এক বুক পানি।বৃদ্ধ বাবা মা ও ছোট বাচ্চাকে নিয়ে তিন দিন ধরে খুবই কষ্টে আছি।এখানে আর থাকতে পারছি না।হুহু করে পানি বেড়েই চলেছে। উপায় না পেয়ে ছোট নৌকায় পরিবার ও আসবাবপত্র নিয়ে রওনা হবো।কোথাও আশ্রয় পাবো কি না জানি।
ওই গ্রামের কিশোরী সোমা বলেন,তিন দিন ধরে খাটের উপর ছিলাম।এখন সেই খাটটিও ডুবে গেল।স্কুলের ব্যাগ বই খাতা সব ভিজে গেছে। সকাল থেকে না খেয়ে আছি।এখানে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
আমিনুর রহমান বলেন, মাছ ধরে কোন রকম জীবন চলতো।হঠাৎ বন্যা হওয়ায় নদীতে মাছ নেই।রোজগার না থাকলে সংসার কেমনে চালাই।পরিবারে ছোট বাচ্চাকে নিয়ে না খেয়ে আছি। কাকে বলবো খাবার দেন।এখন পর্যন্ত কোন মেম্বার চেয়ারম্যান আমাদের এই পোড়ার চরে আসে নাই।
নুরুল ইসলাম বলেন,গরু ছাগলের খাবার নিয়ে মহাবিপদে আছি।ঘরে খাবার নেই, গরু ছাগলের খাবার কোথায় পাবো।চারদিকে পানি আর পানি।যা খড় ছিল পানিতে ডুবে আছে।গতকাল মাটি উঁচু করে কিছু খড় রেখেছি বন্যার পানিতে সেগুলোও ভেঁসে গেছে।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচরে অর্ধশত পরিবার পানি বন্দি। এছাড়াও রলাকাটা, খেয়ার আলগা, বড়–য়া ও মাঝিয়ালির চরের প্রায় ৫ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবোর) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানান, আগামী ২৪ ঘন্টায় উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে নদ-নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
এছাড়া ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার, দুধকুমারের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ৯ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তাসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপদসীমার সামান্য নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।