ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে ছোট ভাইয়ের দায়ের আঘাতে প্রাণ গেল বড় ভাইয়ের। মাদক সেবনের টাকা না পেয়ে অসহায় মা-বাবার ওপর চলে বড় ভাই জার্মানের অত্যাচার,নির্যাতন। ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রিও করে দিতেন জার্মান। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ছোট ভাই সিয়াম দা দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন মাদকাসক্ত বড় ভাইকে।
গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটলেও ছোট ছেলেকে বাঁচাতে মা রাতভর বড় ছেলের মরদেহ লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু বুধবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে পুলিশ গিয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মগটুলা ইউনিয়নের নওপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে সিয়াম পলাতক রহেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই গ্রামের মো.নোমান মিয়ার ছেলে মো.জার্মান মিয়া (২০) স্থানীয় একটি মাদরাসায় পড়ালেখা করতেন। প্রায় ছয় বছর ধরে পড়ালেখা ছেড়ে রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করছিলেন।
এর মধ্যে তিনি মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। কোনোভাবেই তাকে থামানো যায়নি। নিজের কাছে প্রয়োজনীয় টাকা না থাকলেই ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করে হলেও মাদকের টাকা জোগাড় করতেন। তার এসব কর্মকাণ্ড দরিদ্র পরিবারে যেন অভিশাপ হয়ে দেখা যায়।
নিহত জার্মানের মা চম্পা বেগম জানান,মঙ্গলবার সকাল থেকেই কিছু টাকা দাবি করছিলেন জার্মান। অন্যথায় বড় ধরনের অঘটন ঘটাবেন বলে হুমকি দেন পড়ে মা গোপনে প্রতিবেশী একজনের কাছ থেকে ১৩০ টাকা ধার করে এনে ছেলেকে দেন। কিন্তু এত কম টাকা নিতে অস্বীকার করেন জার্মান। দুপুরে ঘরের একটি ছাগল ধরে নিয়ে বাজারে বিক্রি করতে উদ্যত হন। ওই সময় ছোট ছেলে সিয়াম এসে বাধা দিলে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি চলে যান। পরে রাতে এসে ফের টাকা চাইলে সিয়াম প্রতিবাদ করেন। এ সময় ছোট ভাইকে একটি শাবল দিয়ে মারতে উদ্যত হন বড় ভাই। একপর্যায়ে সিয়াম নিজেকে রক্ষা করতে দা হাতে নেন। এতে দুজনের মধ্যে ব্যাপক ধস্তাধস্তি শুরু হয়। একপর্যায়ে দায়ের আঘাতে জার্মান মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঈশ্বরগঞ্জ সদর হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এ অবস্থায় দ্রুত লাশ বাড়িতে এনে ঘরের ভেতরে রেখে দেন। এলাকার কয়েকজন জানান, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঘটনা ঘটলে ময়মনসিংহ থেকে গভীর রাতে লাশ বাড়িতে আনার পর বিষয়টি প্রকাশ হয়। তবে লাশ ঘরেই রাখা হয়েছিল সকালে দাফন করার উদ্দেশ্যে।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি পীরজাদা শেখ মো. মোস্তাছিনুর রহমান জানান, খবর পেয়ে নিহতের বাবাকে থানায় আনা হয়েছে। পরে বাবা নোমান মিয়া জানান,বড় ছেলে জার্মানের অত্যাচারে পরিবারের সকলেই অতিষ্ঠ ছিল। কোনোভাবেই তাকে মাদকের হাত থেকে ফেরানো যায়নি। যেখানে সংসারের কোনো আয়,রোজগার ছিল না,সেখানে তিনি প্রতিদিনই টাকা চাইতেন। না পেলে এটা,সেটা বিক্রি করতেন।