ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে জেগে উঠা একটি চরের নাম দক্ষিণ কালীর আলগা। চরটি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রপুর ইউনিয়নের কালীর আলগা মৌজায় অবস্থিত হওয়ায় এটি দক্ষিণ কালীর আলগা নামে পরিচিত। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে ভিটেমাটি হারা দুই শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে এই চরে।এরা সবাই বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা বাস্তুহার পরিবার। এসব পরিবারে রয়েছে ১৫০-১৮০ জন শিশু কিশোর বয়সী।পরিবারের সাথে এরাও এসেছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। এখানে নেই কোন স্কুল-মাদ্রাসা,নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।ফলে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া শিশুরাও পড়েছে চরম বিপাকে।কেননা পড়তে চাইলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাবে তাদের পড়াশোনা এখন অনিশ্চিত। এ অবস্থায় সন্তানদের পড়াশোনা ও আগামী ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন দক্ষিণ কালীর আলগার অভিভাবকগন।
চরটি ঘুরে দেখা যায়, অনেকটা দ্বীপের মতো দেখতে। চারদিকে থৈথৈ পানির মাঝে সাড়িবদ্ধভাবে দাড়িয়ে রয়েছে ঘর বাড়িগুলো। নৌকা ছাড়া যাওয়ার কোনো উপায় নেই। এখানেই ২০০টি পরিবার ঠাঁই নিয়েছে। এখানকার বাসিন্দারা কেউ দিনমজুরের, কেউ গরু ছাগল পালন করে কেউবা নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ কোনো নাগরিক সুবিধা পায় না তারা।হাতেগোনা কয়েকটি বাড়িতে সৌরবিদ্যুৎ থাকলেও কারও বাড়িতে নেই টেলিভিশন কিংবা ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি।আধুনিকতার ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত তারা।চরের লোকসংখ্যা তিন শতাধিক হলেও নদ পাড়ি দিয়ে মূল ভূখণ্ডের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না কেউ। ফলে এখানকার শতাধিক শিশু-কিশোরের প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পার হতে পারছে না।আবার লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশোনাও এখন বন্ধ।
কালীর আলগা চরের শিক্ষার্থী মোঃ আল আমিন বলেন,আমি আগে কালীর আলগা স্কুলে ৪র্থ শ্রেনিতে পড়তাম।নদী ভাঙনের কারনে এ চরে এসেছি।এখানে কোন স্কুল নেই।এক বছর থেকে আমার পড়াশোনা বন্ধ। আমার মত শত শত বাচ্চারা আছে এ চরে।এরা কেউ লেখাপড়া করতে পারছে না।আমরা স্কুল চাই,আমরা পড়তে চাই।
মোঃ সুমেশ আলী বলেন, এই চরে স্কুল নাই।এখান থেকে অন্য স্কুল যেতে ৫-৬ কিঃমিঃ নৌকায় যেতে হয়।সব সময় নৌকা থাকে না।তাছাড়া এতবড় নদী পার হতে ভয় লাগে।আমরা যেতে পারি না।আমারা পড়শোনা করতে চাই,কিন্তু এখানে কোন সুযোগ নাই।
মোছাঃ মল্লিকা বেগম বলেন, আমাদের একটা স্কুল দরকার।এত বড় গ্রামে কোন স্কুল না থাকায় আমাদের বাচ্চাগুলো দিনদিন অভদ্র হয়ে যাচ্ছে।বাচ্চাগুলো নিয়ে খুবই দুঃশ্চিন্তায় আছি। আমাদের সেই সামর্থ্য নেই যে এলাকার বাইরে পড়াশোনা করাবো।
সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আসাদ আলী বলেন, নদনদী ভাঙনের কারনে আমরা বিভিন্ন চর থেকে দক্ষিন কালীর আলগা গ্রামে এসেছি। এখানে নেই কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।আমাদের বাচ্চাগুলোর লেখাপড়া বন্ধ।আমাদের এখানে একটা স্কুলের খুব দরকার।
যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল গফুর মিয়া বলেন,যাত্রাপুর ইউনিয়নের কালীর আলগা গ্রাম,পার্বতীপুর,গোয়ালবাড়িসহ সাহেবের আলগা বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের অনেক মানুষ দক্ষিণ কালীর আলগা জেগে উঠা চরে আশ্রয় নিয়েছে।ওখানে একটি মসজিদ ছাড়া কোন স্কুল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই।ওই চরে ২শোর মত শিশু বাচ্চারা স্কুল না থাকায় পড়াশোনা করতে পারছে না।আমি সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও সংগঠনকে আহবান করছি দক্ষিণ কালীর আলগা চরে একটি স্কুলের ব্যবস্থা করলে শিশুগুলোর পড়াশোনা ব্যবস্থা নিশ্চিত হত।