টানা দুই বছর খড়া ও বন্যার কারণে সঠিকভাবে কৃষকের গোলায় উঠেনি বোরো ধান। এ কারণে ২০২০সালে অনেকেই বিরত থেকেচেন ধানের আবাদ থেকে। কিন্তু সে বছর যারা চাষ করেছিলেন ধানের মূল্য পেয়েছিলেন ভালো। গত বছর হবিগঞ্জে আবাদ হয় ১ লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে।
বাম্পার ফলন ও ভাল দাম পাওয়ায় এবার হবিগঞ্জে আবাদ হচ্ছে ১ লাখ ২২ হাজার ৪১০ হেক্টর জমি। হবিগঞ্জের হাওর এলাকায় পৌষ মাসে বিরাজ করেছে তীব্র শীত। কৃষকরা মাত্রই রোপা আমন ধরে তুলেছেন। কিন্তু তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে স্বপ্ন বোনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। বৈশাখ মাসের ধানের গোলা পরিপূর্ণ করে সারা বছরের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভোর থেকে সন্ধ্যা কৃষকরা জমিতে বোরো ধান লাগাতে কাজ করছেন।
সরজমিনে হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার হাওর এলাকায় গিয়ে দেখা যায় যে ভোর থেকেই কৃষকরা কেউ জমিতে হাল চাষ করছেন। আবার কেউ ধানের চারা উঠিয়ে প্রস্তুতকৃত জমিতে রোপনের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ ট্রাক্টর দিয়ে জমি প্রস্তুত করছেন। দল বেধে কৃষকরা ধানের চারা রোপন করছেন। মাঝেও তাদের মনে অনেক আনন্দ আর অনেক স্বপ্ন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপকরণের দাম বেশি হলেও এখন ধানের অনেক দাম। সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবিকার তাগিদেই তারা ধান আবাদ করছেন। খরচ কমাতে বাহিরের শ্রমিক না এনে পুরুষের পাশাপাশি পরিবারের নারী-শিশুরাও কাজ করছেন। বানিয়াচং উপজেলার কাটখাল গ্রামের কৃষক রজব আলী জানান, এবার বন্যার পরবর্তী মৌসুম। পানি কমতে অনেক সময় লেগেছে। তারপরও বন্যার আগেই যাতে ফসল তোলা যায় তার জন্য আগাম জাতের ধান আবাদ করেছেন জমিতে। নিচু জমিতে চারা রোপনের কাজ শেষ হলেও উচু এলাকায় জমি প্রস্তুতের কাজ এগিয়ে চলছে। একই গ্রামের কৃষক আব্দুল মতিন জানান, বন্যা, খড়ার পাশাপাশি বীজ ও সারের দাম বেশী। ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ট্রাক্টর ও সেচ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। ঠিকমত ফসল ঘরে তুলতে পারলে সারা বছর খেয়ে বেঁচে চলতে পারব। এই ফসলই আমাদের প্রাণ। তাই শীতকে উপেক্ষা করে আমরা কাজ করছি। কেউ ঘরে বসে নেই। বাহিরের লোক এনে কাজ করালে খরচ বাড়বে বলে সবাই মিলে জমিতে কাজ করছি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের নুর ই আলম বলেন, সরকার ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। বোরো আবাদ বাড়াতে দেওয়া হচেছ প্রণোদনা। ধানের উৎপাদন ব্যয় কমানোর জন্য ভর্তুকি দিয়ে যন্ত্রপাতি দেয়া হয়েছে। হবিগঞ্জের হাওর এখন কৃষকদের মধ্যে অনেক আগ্রহ। কৃষি বিভাগের লোকজন নিয়মিত মনিটরিং ও কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছেন।