হবিগঞ্জের লাখাইয়ে সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের ৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলায় আটক হয়েছেন লাখাই উপজেলার সাবেক সাবেক উপ-সহকারি প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমসহ ৩ জন। অপর দুইজন হচ্ছেন সাবেক অফিস সহকারি হাবিবুর রহমান ও অফিস সহায়ক মো. গোলাম কিবরিয়া। গত রোববার (২৯-জানুয়ারি ) জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আহসানুল ইসলাম এর আদালতে তারা হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক আবেদন খারিজ করে তাদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের আইনজীবী হাবিবুর রহমান তিনি জানান, রোববার তারা আদালতে হাজির হয়ে জামিন চেয়েছিলেন। বিচারক তাদেরক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। দুদক হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোজাম্মিল হোসেন জানান, এ মামলায় সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহানকে আগেই কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
রোববার আরও ৩ জন আদালতে হাজির হলে বিচারক তাদের কারাগারে প্রেরণ করেন। অপরজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক মামুন এখনও পলাতক রয়েছেন। অভিযোগে জানা যায়, লাখাই উপজেলার বামৈ ইউনিয়ন পরিষদের ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের কাচা আবুর বাড়ি থেকে বামৈ পূর্বগ্রাম কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকার প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে মহিলা ইউপি সদস্য লুৎফা চৌধুরীকে রেকর্ডপত্রে দেখানো হয়। একই ইউনিয়নের ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের ভাদিকারা হাড়ি বাড়ি পশ্চিমের কালভার্ট থেকে হাজী আব্দুল বাছির মিয়ার বাড়ি হয়ে ভাদিকারা উত্তর শুয়া মিয়ার বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণের ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ভাদিকারা জুম্মাহাটি থেকে আবুল কালাম মেম্বারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পের ৩৮ হাজার ৭শ টাকা প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে মহিলা সদস্য মোছা. বিউটি আক্তারকে রেকর্ডপত্রে দেখানো হয় এ তিনটি প্রকল্পের কোন রেকর্ডপত্রে।
ইউপি সদস্য লুৎফা চৌধুরী ও বিউটি আক্তার স্বাক্ষর করেননি এবং কোন বিল নেননি মর্মে দেখা যায়। প্রকল্প গুলোর মাটির কাজসহ উন্নয়নমূলক কাজও করা হয়নি অফিস সহায়ক মো. গোলাম কিবরিয়া, সাবেক অফিস সহকারী হাবিবুর রহমান, সাবেক উপ-সহকারি প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, তৎকালীন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহানের নির্দেশে বিভিন্ন প্রকল্পের মাস্টার রোল নিজেরা পূরন করে প্রকল্প কমিটির স্বাক্ষর নিজেরা দিয়ে কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের টাকা উত্তোলনে সহায়তা করেন। বামৈ ইউপির তৎকালীন চেয়ারম্যান এনামুল হক মামুন প্রকল্প কমিটির সভাপতিসহ অন্যান্যদের ভূয়া স্বাক্ষর সম্বলিত তালিকা পিআইও অফিসে দাখিল করেন মর্মেও দেখা যায়। মূলত ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক মামুন এবং সাবেক উপ-সহকারি প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহান, তার অফিসের কর্মচারী মো. গোলাম কিবরিয়া এবং হাবিবুর রহমান পরস্পর যোগসাজসে বিভিন্ন প্রকল্পের মাস্টার রোল পূরন করে নিজেদের মনোনীত প্রকল্প কমিটির নাম নিজেরা লিখে স্বাক্ষর নিজেরা দিয়ে প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেন।
রাস্তা বা অন্যান্য প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কাজ না করে বর্ণিত প্রকল্প সমূহের সর্বমোট ৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেন। এসব অভিযোগে বামৈ ইউপির সাবেক সদস্য ইকবাল মিয়া দুদকে লিখিত অভিযোগ করেন। এর প্রেক্ষিতে দুদক সমন্বিত হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের তৎকালিন উপসহকারি পরিচালক মোহাম্মদ শোয়ায়েব হোসেন বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন
তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা একই কার্যালয়ের তৎকালীন উপপরিচালক মো.এরশাদ মিয়া তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। উক্ত মামলায় পিআইও মোহাম্মদ জাহান আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।