গত বছরের মতো এবারও অফিস সহায়ক হতে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পদোন্নতিতে বড় ধরনের দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী (সংস্থাপন) নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটির সভাপতি নন্দীতা রানী সাহা। এর বিনিময়ে তিনি জনপ্রতি দেড় লক্ষ টাকা করে হাতি নিয়েছেন। তার এমন দুর্নীতি নিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরে কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। যোগ্য কর্মচারীদের অবমূল্যায়ন করে নন্দীতা রানী সাহা তাঁর নিজ দপ্তরে অফিস সহায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন (রোল নং ১৩২) কে টাকার বিনিময়ে পদোন্নতির তালিকায় রেখেছেন। জানা গেছে, জাহাঙ্গীর হোসেন কম্পিউটারে সাধারণ কোন ধরনের জ্ঞান নাই। মূলত এই কর্মচারী কম্পিউটারের তেমন কিছুই জানেন না।
অভিযোগ রয়েছে, সারা বাংলাদেশে গণপূর্ত অধিদফতরের জোন (সার্কেল ও ডিভিশন) পদোন্নতি না দিয়ে শুধুমাত্র রক্ষণাবেক্ষণ একটি সার্কেলকে পদোন্নতি দিয়েছেন। এ নিয়োগে ২০০৮ সালের নিয়োগ বিধি অনুসরণ করা হয়েছে। তবে বর্তমানে অফিস সহায়কদের পদোন্নতি ২০১৯ সালের নিয়োগ বিধি অনুসরণ করে দিচ্ছেন। এসব পদোন্নতির ক্ষেত্রে তার পছন্দের ও বাণিজ্যিক লোকজনকে পদোন্নতি দিতে ২০০৮ ও ২০১৯ সালের নিয়োগ বিধি অনুসরণ করেন। ২০০৮ সালের নিয়োগ বিধি অনুসরণ না করলে তাঁর লোক পদোন্নতি পাবে না, তাই ২০০৮ সালের নিয়োগ বিধি অনুসরণ করেন। ঠিক একই ভাবে বর্তমান অফিস সহায়ক থেকে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক পদে পদোন্নতিতে ২০০৮ সালের নিয়োগ বিধি অনুসরণ করলে তাঁর লোকজন পদোন্নতি পাবে না বিদায় ২০১৯ সালের নিয়োগ বিধি অনুসরণ করেন বলে যানা যায়।
নন্দীতা রানী সাহাকে এসব পদে দুর্নীতিতে সহযোগিতা করেছেন ২০১৭ সালে অবসরে যাওয়া সাবেক কল্যাণ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান ও গণপূর্ত অধিদফতরের ট্রেনিং একাডেমিতে কর্মরত স্টেনোগ্রাফার (পিএ) শাহীন। ২১ তম বিসিএস’র মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া এই কর্মকর্তা দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবেই সবার কাছে পরিচিত। অনৈতিকভাবে পদোন্নতি পেতে যাওয়া কর্মচারীদের একটি তালিকা এই কর্মকতার সহায়তায় করা হয়েছে। ওই তালিকায় যাদের স্থান দেওয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগ কর্মচারীদের পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্র পেইনড্রাভ করে ফাঁস করে দেওয়া হয়। পদোন্নতি পরীক্ষার দিনে উত্তরপত্র পেইনড্রাভে করে এনে তা প্রিন্ট করে জমা দিয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।নন্দীতা রানী সাহার বিরুদ্ধে উঠা এসব অভিযোগ দ্রতই লিখিতভাবে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়া হবে বলে ভুক্তভোগী এবং ক্ষুব্ধ কয়েকজন কর্মচারী জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, যাদের নন্দীতা রানী সাহা আগাম প্রশ্নপত্র দিয়েছেন এবং সেই অনুযায়ি বাহির থেকে যারা পেনড্রাইভের মাধ্যমে পরীক্ষার হলে প্রিন্ট করে উত্তরপত্র জমা দিয়েছেন তারা হলেন, মো. আক্তারুজ্জামান রোল নং ৫, মুন্নী আক্তার রোল নং ৬ , মো দিনার রোল নং ১৪, সরোয়ার জমাদ্দার রোল নং ১৯, মোছা. খাদিজা খানম রোল নং ২১, সেলিনা আলম রোল নং ২২, মোহা. কেতাবুল হোসেন রোল নং ২৩, মো. আব্দুল বাছেদ রোল নং ২৪, সুমন কুমার কর্মকর রোল নং ২৫, পরমেশ্বর রোল নং ২৬, মো. আসাদুজ্জামান আসাদ রোল নং ২৭, মোছা. রুপালী বেগম রোল নং ২৯, ফাহমিদা জুবায়ের রোল নং ৩৯, মো. মহিবুর রহমান রোল নং ৫০, নাহিদা আক্তার রোল নং ৭৪, মনিরুল ইসলাম রোল নং ৯১, অশোক কুমার রায় রোল নং ১২৫, মো. জাহাঙ্গীর হোসেন রোল নং ১৩২ ও বোরহান উদ্দিন রোল নং ১৩৩।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীগন জানান, যদি সঠিক উপায়ে এসব কর্মচারীদের পরীক্ষা নেওয়া হতো তাহলে তাদের পক্ষে পদোন্নতি পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব হতো না। তাই, নিরপেক্ষভাবে উল্লিখিত কর্মচারীদের পরীক্ষা নেওয়ার দাবি উঠেছে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ভেতর থেকে।
একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী জানান, এর বাইরেও বড় একটি তালিকা রয়েছে। জানা যায়, কর্মচারী ইউনিয়নের মহাসচিব এনামুল হক ৫০ জনের একটি তালিকা তৈরী করে। প্রত্যেকের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এই টাকাও নন্দীতা রানী সাহা নিয়েছেন বলে কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের সূত্রে জানা গেছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে পদোন্নতি পরীক্ষায় প্রায় দেড় শতাধিক পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও সেখানে মাত্র চারজন উত্তীর্ণ হয়েছিল। এখান থেকেই প্রমান হয় নন্দীতা রানী সাহা কত বড় দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন।
অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, একই কর্মস্থলে একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ৩ বছর থাকার কথা। কিন্তু নন্দীতা রানী সাহার রহস্যময় খুঁটির জোরে ৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে বহাল তবিয়তে দুর্নীতির জাহাজ চালু রেখেছেন। এমনকি চাকরি জীবনে কখনো ঢাকার বাহিরে বদলী হননি। এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে আসলে তাঁর খুঁটির জোর কোথায়?। ঢাকায় আরো কয়েক বছর থাকতে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলে জোর তদ্বির চালাচ্ছেন নন্দীতা রানী সাহা।
জানা গেছে, নন্দীতা রানী সাহা নিজের স্বার্থে যেকোন কাজই তিনি করতে পারেন। তাঁর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কিভাবে ম্যানেজ করতে হয় সে ব্যাপারে তিনি বেশ পারদর্শী। সাবেক প্রধান প্রকৌশলীদের মধ্যে রফিকুল ইসলাম, খোরশেদ আলম, শাহাদাত হোসেন ও আশরাফুল ইসলাম সহ বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী শামীম আকতারকে ম্যানেজ করেই একই চেয়ারে বসে দুর্নীতি ও অনৈতিক কর্মকান্ডের অবৈধ অর্থ উপার্জনের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। চাকুরী জীবনে ঢাকার বাহিরে একদিনের জন্যও তাঁকে যেতে হয়নি।