
বিডি ২৪ নিউজ অনলাইন: মেট্রোরেলসহ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে টেন্ডার ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে বহুল আলোচিত ঠিকাদার সেলিম মোল্লা আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মহলের আশীর্বাদে দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে অবাধ প্রভাব বিস্তার করে আসছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেলিমের মালিকানাধীন ‘মাহি এন্টারপ্রাইজ’ ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) বড় প্রকল্পে জাল ব্যাংক গ্যারান্টি, পুরনো গাড়ি সরবরাহ ও জ্বালানী খাতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত।
গত মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা হারুন-অর-রশিদ দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) এসব অনিয়মের বিস্তারিত একটি অভিযোগ দাখিল করেন।
জাল ব্যাংক গ্যারান্টি ও টেন্ডারে প্রভাব খাটানো : অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়—ডিএমটিসিএলের লাইন-৫ নর্দান রুট প্রকল্পে গাড়ি সরবরাহের টেন্ডারে সেলিম মোল্লা ৯৪ লাখ টাকার জাল ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দেন। প্রতিযোগী ঠিকাদারদের নথিপত্র যাচাই ছাড়াই তার প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে তিনি প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নষ্ট করেন এবং তার প্রভাবেই অন্য ঠিকাদাররা টেন্ডারে অংশ নিতে ভয় পেতেন। মাহি এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে অভিযোগ—প্রকল্পে পুরাতন ও নিম্নমানের গাড়ি সরবরাহ করে লাখ লাখ টাকা ভাড়া এবং জ্বালানির অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। সরকারি লোনের টাকায় নতুন গাড়ি কেনার কথা থাকলেও প্রকল্পের মাঠপর্যায়ে পুরনো মডেল ব্যবহার করা হয় বলে দাবি করা হয়েছে।
জুলাইয়ের সহিংসতায় সরাসরি সম্পৃক্ততা : ২০২৩ সালের ২২ জুলাই পুরাতন কাগজ বিক্রি নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। অভিযোগ অনুযায়ী, সে সময় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতির নির্দেশে সেলিম মোল্লা অস্ত্রের মহড়া দেন এবং এলাকায় সন্ত্রাসী তৎপরতা চালান। মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, আদাবর, আসাদগেইট ও কলেজগেইট এলাকায় জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের সময় নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপর হামলার নেতৃত্বে ছিলেন বলে একাধিক স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। এসব হামলার একাধিক ভিডিও দুদকে জমা পড়েছে বলেও জানা গেছে।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের ‘অশুভ প্রভাব’ : সেলিম মোল্লার ক্ষমতার নেপথ্যে ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি ও শেরে-বাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের নেতা তারিক হাসান কাজল। অভিযোগ রয়েছে—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলের টাকা ভর্তি বস্তা নিয়মিতই সেলিম মোল্লার বাসায় আনাুনেওয়া হতো। রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক ছিল প্রধান ভিত্তি।
দুদক সূত্র জানায়, সেলিম মোল্লার নামে বা বেনামে রয়েছে- ঢাকার অদূরে ৫ কাঠা প্লট, মোহাম্মদপুরে ফ্ল্যাট, নিজ গ্রাম ভোলা জেলায় শত বিঘা জমি, ২০-২৫ কোটি টাকার গাড়ি বহর। এ সম্পদের অধিকাংশই ক্ষমতার প্রভাব ব্যবহার করে সরকারি প্রকল্প থেকে অনিয়মের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে বলে অভিযোক্তারা দাবি করছে।
সড়ক ও জনপথ (সওজ), পানি উন্নয়ন বোর্ডেও অনিয়ম : শুধু মেট্রোরেল নয়, সওজ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পেও অনুরূপ জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার কাজ হাতিয়ে নিয়েছেন সেলিম মোল্লা। একাধিক প্রকল্পে জাল দরপত্র, জাল নিরাপত্তা বন্ড ও ‘কম দামে কাজ নেয়ার’ নামে সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে।
রাজনৈতিক মিছিল-মহড়ার নেতৃত্বেও সেলিম : অভিযোগে বলা হয়, সেলিম মোল্লা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল বের করতেন এবং দলের ভেতর কোন্দল বা শক্তির প্রদর্শনীতে নিয়মিতভাবে অংশ নিতেন। তার নেতৃত্বে শ্যামলী-মোহাম্মদপুর এলাকাজুড়ে একসময় চাঁদাবাজি, গাড়ির তেল-ভাড়া জালিয়াতি ও দখলবাজি চক্রের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়।
দুদকে জমা অভিযোগের প্রতিক্রিয়া : অভিযোগকারী হারুন-অর-রশিদ বলেন- “হাসিনা সরকারের সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা তদন্তের মাধ্যমে যাচাই করার জন্য দুদকের কাছে আবেদন করেছি।”
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম বলেন- “অভিযোগটি নিয়ম অনুযায়ী প্রাথমিক যাচাইুবাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় যাবে।” ডিএমটিসিএল বা সেলিম মোল্লার পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।