
বিডি ২৪ নিউজ অনলাইন: বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কারিগরি পুলের বিভিন্ন ক্যাটাগরির লিখিত পরীক্ষায় সংঘবদ্ধ চক্র নিয়োগ বাণিজ্য করে মোটা দাগের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। একজনের জায়গায় অন্যজনকে ভুয়া পরীক্ষার্থী সেজে প্রক্সি পরীক্ষা দিয়ে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে বলে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, প্রকৃত প্রার্থীর বদলে অন্য প্রার্থীর মাধ্যমে পরীক্ষা দিয়ে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার এই কৌশল দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে বিআইডব্লিউটিএ’তে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ মাঝে মধ্যে এই চক্রের সদস্যদের কাউকে কাউকে আটকও করেছে বলে খবর পাওয়া যায়। কিন্তু শেষঅবধি এসব বিষয়গুলো অজ্ঞাতই থেকে যায়। এর ফলে এই চক্র নতুন নতুন উৎসাহ নিয়ে নিজ নিজ কর্মে বহাল তবিয়তে আছে।
বিআইডব্লিউটি’এর সাম্প্রতিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ব্যাপক প্রক্সি পরীক্ষা দেওয়ার ঘটনা ঘটছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। তারা জানান, নিয়োগে অনিয়ম এবং জালিয়াতি হয় (বেতন গ্রেড-১৭) সাধারণত লিখিত পরিক্ষায়। উক্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বঞ্চিত কয়েকজন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে অভিযোগ করে বলেন, (রোল নম্বর ৪৮০০১৬৫১, ৪৮০০২০৬১, ৪৮০০৩০২৪) পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। অভিযোগ আছে, পরীক্ষার্থীরা সরাসরি নিজেরা অংশগ্রহণ না করে অন্যদের দ্বারা (প্রক্সি পরীক্ষার মাধ্যমে) পরীক্ষার উত্তরপত্র পূরণ করেছেন।
তারা আরও বলেন, এই পরীক্ষায় পূর্বের ছবির সঙ্গে প্রার্থীর চেহারা মিলিয়ে দেখা হয়নি। তাছাড়া পরীক্ষার্থীদের স্বাক্ষরের সঙ্গেও বর্তমান স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখা হয়নি যা ভুয়া পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণের সুযোগ হিসেবে দেখছেন বঞ্চিতরা। পাশাপাশি এই সুযোগে ব্যাপকহারে মোবাইল ও ডিভাইসের ব্যবহার হয়েছে। তাছাড়া একজনের বিপরীতে আরেকজন অংশ নিয়েছে।
এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বঞ্চিত অন্য একজন পরীক্ষার্থী বলেন, (৪৮০০১৬৫১, ৪৮০০২০৬১, ৪৮০০৩০২৪ রোল নম্বর) পরীক্ষার্থীকে যদি একই প্রশ্ন দিয়ে আবারও পরীক্ষা নেয়া হয় তাহলে সে শতকরা ত্রিশের বেশি নম্বরও পাবেন না। অথচ এই পরিক্ষায় যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে প্রার্থীগুকে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। শুধু এরা গুটিকয়েক ব্যক্তিই নয় এরকম আরো অনেক প্রার্থী আছে যারা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। কিছু পরীক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট কেন্দ্রের বাইরেও পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে যার সঠিক অনুসন্ধান করলে জালিয়াতির মুখোশ উম্মচিত হবে ভুক্তভোগীদের দাবি।
বিআইডব্লিউটিএ’র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, ইতিপূর্বেও এই দফতরে বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অনেক ঘটনা ঘটেছে। আর এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে আওয়ামী দোসররা জড়িত। এর আগে অবসরপ্রাপ্ত একজন মেম্বার কয়েক কোটি টাকা নিয়োগ বাণিজ্যে করেছেন।
তিনি আরও বলেন, কারিগরি পুলের বিভিন্ন ক্যাটাগরির নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একটি বড় সিন্ডিকেট সংঘবদ্ধ ভাবে কাজ করে। যেখানে কয়েকটি ধাপে এই অনিয়মের আশ্রয় নেয়া হয়। প্রথমে নির্ধারিত প্রার্থীর সঙ্গে নিয়োগের নিশ্চয়তা ঘিরে চুক্তি হয় মোটা অংকের অনৈতিক অর্থ লেনদেনের। অতঃপর পরীক্ষার্থীর পরিবর্তে পাঠানো ডামি পরীক্ষার্থী বা বডি চেঞ্জ পরীক্ষার্থী। লিখিত পরীক্ষায় ডামি প্রার্থীরা উত্তীর্ণ হওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপে চলে প্রাকটিক্যাল পরিক্ষা। সেখানেও মূল প্রার্থীর পরিবর্তে অংশ নেয় ডামি প্রার্থী। এরপর শেষ ধাপে চলে ভাইভা জালিয়াতি। ডামি পরীক্ষার্থী বা বডি চেঞ্জ প্রার্থী এসে ভাইবা দিয়ে চলে যায় অনায়াশেই। এক্ষেত্রে লেনদেন চলে তিন ধাপে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর চুক্তির ৩০% প্র্যাকটিক্যাল হবার পর ৩০% এবং সর্বশেষ ভাইবা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার পর বাকী ৪০% টাকা লেনদেন হয়। যার পুরোটাই ভাগবাটোয়ারা করে নেয় সংঘবদ্ধ চক্র। এর সাথে নিয়োগ কমিটির সদস্যরা জড়িত থাকেন মুল ভুমিকায়।
অপরাধ বিশ্লেষকের মতে, একটি প্রতিষ্ঠান কতটা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবে, তা অনেকটা নির্ভর করে অভ্যন্তরীণ সুশাসন ও শৃঙ্খলার ওপর। বিআইডব্লিউটি’এর মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য এটি আরও বেশি প্রযোজ্য। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে হবে। কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এই ঘটনার সাথে যারা সমৃদ্ধ তাদের মুখোশ উন্মোচন হওয়া জরুরি।
একই হাতের লেখায় কয়টা উত্তরপত্র রয়েছে, উত্তরপত্রে পরীক্ষার্থী ও মূল্যায়নকারীর স্বাক্ষর আছে কি না তা খতিয়ে দেখার দাবি জানান ভুক্তভোগী মহল। প্রশ্ন উত্তর পত্রের টপশিটে ব্যক্তিগত তথ্যাদি ও প্রার্থীর স্বাক্ষরে লেখায় মিল আছে কিনা, নামের বানানের ক্ষেত্রে স্বাক্ষরের বানান ভিন্ন কিনা, হাজিরা শিট এবং টপশিটের স্বাক্ষর ভিন্ন কিনা, মৌখিক পরীক্ষা নেওয়ার সময় লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তরে সাথে হাতের লেখা মিলিয়ে দেখাসহ হল পরিদর্শকের স্বাক্ষরের মধ্যেও পার্থক্য থাকলে তা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের।
পরীক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছে। লাখ লাখ টাকা নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে। পরীক্ষা স্থগিত করে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন তারা।
তাদের দাবী, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কোনো যোগ্য প্রার্থী এমন অবিচারের শিকার না হোন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর কারিগরি পুলের বিভিন্ন ক্যাটাগরির বিভিন্ন পদে জনবল নিয়োগে পরিক্ষায় ব্যাপক জালিয়াতি এবং অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ও (প্রকৌশল) এ কে এম ফজলুল হক কোন মতামত দিতে রাজি হননি।